চুয়াডাঙ্গা-১ (আলমডাঙ্গা) আসনে নির্বাচনী প্রচারে সাড়া ফেলে দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঈগল প্রতীক) এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপকমিটির সদস্য দিলীপ কুমার আগরওয়ালা। নির্বাচনের তারিখ যত এগিয়ে আসছে তত ঈগল প্রতীকের পক্ষে জনসমাগম বাড়ছে বলে জানা যায়। নির্বাচনী আসনটির সর্বত্র বিরামহীন প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন দিলীপ কুমার আগরওয়ালা ও তার কর্মী-সমর্থকরা।
এর ধারাবাহিকতায় সোমবার (১ জানুয়ারি) আলমডাঙ্গার এটিম মাঠে অনুষ্ঠিত হয় ঈগল প্রতীকের জনসভা, যা স্বাধীনতা পরবর্তী ৫২ বছরের শ্রেষ্ঠ জনসভা বলে মনে করছেন জনসভায় আসা নেতাকর্মীরা।
উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা অর্ধলক্ষাধিক মানুষ এ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে দুর্নীতিমুক্ত চুয়াডাঙ্গা গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দিলীপ কুমার। তিনি উন্নয়নের জন্য পরিবর্তন চান। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি তিনি জেলার সার্বিক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেন। সমাবেশে উপস্থিত হাজার হাজার মানুষ এ সময় ঈগল প্রতীকের স্লোগানে সমাবেশস্থল মুখর করে তোলেন।
সোমবার দুপুর ২টার পর থেকে সমাবেশ-মঞ্চ নেতাকর্মীতে পরিপূর্ণ হতে থাকে। এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগ, পৌর মেয়র, উপজেলা যুবলীগ, কৃষক লীগ, যুব মহিলা লীগ, উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বড় অংশই এ জনসভায় অংশ নেন। চুয়াডাঙ্গা সদর ও আলমডাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ দলে দলে মিছিল নিয়ে আসেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিশাল মাঠ কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। তারা ঈগল প্রতীকের ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে মিছিল করে সমাবেশে যোগ দেন।
আলমডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র হাসান কাদির গনু মিয়ার সভাপতিত্বে জনসভায় নির্বাচনী আসনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বক্তব্য দেন। তারা তাদের বক্তব্যে বিগত আমলে উন্নয়ন ও সুশাসন নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেন। তারা আশা করেন ঈগল প্রতীকের প্রার্থী দিলীপ আগরওয়ালা বিজয়ী হলে স্মার্ট চুয়াডাঙ্গা গড়ে উঠবে। সৃষ্টি হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থান।
জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, চুয়াডাঙ্গাবাসী আজ পরিবর্তন চায়। তারা আর কোনো নির্দিষ্ট পরিবারের গন্ডিতে আটকে থাকতে চায় না। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সারাদেশে উন্নয়ন হলেও চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে তার সুফল আসেনি। তাই আমি বিজয়ী হলে এই জেলাকে স্মার্ট চুয়াডাঙ্গায় রূপ দেব।
দিলীপ আগরওয়ালা আরো বলেন, এই আলমডাঙ্গা-চুয়াডাঙ্গার ধুলোমাটি আমার গায়ে লেগে আছে। আমি এই জনপথের মাটি ও মানুষের টানে বারবার ছুটে আসি। এই টানই আমাকে নামিয়েছে ভোটের মাঠে। এই টানই আমাকে নামিয়েছে ঈগল প্রতীক নিয়ে। এই জনপদের পরিবর্তনের জন্য। ইনশাআল্লাহ সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় আপনাদের চেষ্টায় পরিবর্তন আসবেই। পরিবর্তন না হলে এই জনপদের উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমাদের স্লোগান হবে, ‘উন্নয়নের জন্য পরিবর্তন চাই’। আমি নির্বাচিত হলে এখানে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলব, আলমডাঙ্গায় হাসপাতাল হবে, সদরে ৫০০ শয্যার হাসপাতালে রূপান্তরিত করব। এখানে যুব সমাজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব। অবকাঠামোগত উন্নয়ন করব।
সাম্প্রদায়িক রাজনীতি বন্ধের আহ্বান জানিয়ে প্রতিপক্ষ প্রার্থীর উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষ অসাম্প্রদায়িক। তাই নির্বাচনের মাঠে হিন্দু-মুসলমান বিভেদ সৃষ্টি করবেন না। এ সময় তিনি প্রত্যেক নির্বাচনী আসনের প্রত্যেক ইউনিয়নে একটি করে মডেল মসজিদ, মাদরাসা, গোরস্তান, শ্মশান, মন্দির গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেন।
পরিবারের আত্মত্যাগের কথা তুলে ধরে দিলীপ আগরওয়ালা বলেন, মুক্তিযুদ্ধে আমার পরিবারের অবদান রয়েছে। আমার মাতামহ ও আপন দুই মামা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। আমার মায়ের নামে করা স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান, ‘তারা দেবী ফাউন্ডেশনের’ কথা আপনারা সবাই জানেন। ব্যক্তি উদ্যোগে আপনাদের পাশে আছি। সব সময় ছিলাম।
দিলীপ আগরওয়ালা আরও বলেন, বৃহৎ পরিসরে উন্নয়নের জন্য ডিও লেটার ছাড়া অনেক কিছুই সম্ভব নয়। উন্নয়নের জন্য একটা স্বাক্ষর অনেক গুরুত্বপূর্ণ । তাই চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য আমি এমপি হতে চাই। চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গার মানুষকে জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার করার জন্য আমি এমপি হতে চাই। আমি আপনাদের কথা চিন্তা করে এখানে এসেছি। আমাকে সৃষ্টিকর্তা যতটুকু দিয়েছে, তা দিয়ে আমার পরবর্তী তিন প্রজন্ম সুখে-শান্তিতে জীবন কাটাতে পারবে। কিন্তু সবকিছু ছেড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমি আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছি।
নির্বাচনী প্রচারে বাধা পাওয়ার কথা উল্লেখ করে দিলীপ আগরওয়ালা বলেন, আমার কর্মীরা পোস্টার লাগাতে গেলে তা লাগাতে পারছে না। আমার কর্মীদের লাগানো পোস্টার ব্যানার তারা ছিড়ে দিচ্ছেন। আমার কর্মীকে তারা মারধর করছেন। হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন। এখন পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা এবং আলমডাঙ্গা থানায় ১০টি জিডি ও মামলা করেছি। ৬টি অভিযোগ দায়ের করেছি। তারা আমাকে টার্গেট করেছে। আপনারা পেপার পত্রিকায় দেখেছেন, শংকরচন্দ্র ইউনিয়নে আমি নির্বাচনী প্রচারে গেলে, আমার ওপর হামলা করা হয়। পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মানিক অস্ত্র উঁচিয়ে আমাকে হত্যা ও অপহরণ চেষ্টা করে। ওই ঘটনায় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। আমি তাদের নিকট কৃতজ্ঞ। মানিক অ্যারেস্ট হয়। কিন্তু জামিনে মুক্তি পেয়েই প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছে। আমার কর্মীদেরকে ডেকে নিয়ে হুমকি দিয়েছে। কিন্তু আমার কর্মীরা, আমার মতোই সাহসী।
তিনি বলেন- বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা এই সরকারই দিয়েছে। কিন্তু চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গায় বণ্টন সমানভাবে হচ্ছে না। আমি নির্বাচিত হলে এসব অনিয়ম, বৈষম্য থাকবে না। আমি এমপি হলে প্রত্যেক ইউনিয়নে একটি মডেল মসজিস, একটি মডেল মাদ্রাসা ও একটি মডেল পাবলিক কবরস্থান করব। এ ছাড়াও প্রতিটা ইউনিয়নে একটা মডেল শ্মশান ও মডেল মন্দির করব। কর্মমুখী শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। কর্মসংস্থান নিয়ে আমি স্বপ্ন দেখি। বেকার মুক্ত হবে চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গা। কর্মসংস্থান পেলে হাত পেতে অনুদান নেওয়ার সংস্কৃতি বন্ধ হবে। সৃষ্টিকর্তা যদি সুযোগ দেয়, চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ফ্রি ওয়াইফাই জোন করে দেব।
তথ্যপ্রযুক্তি উন্নয়নের বিষয় তুলে ধরে দিলীপ আগরওয়ালা বলেন, অনলাইনে আউটসোর্সিং ট্রেনিং সেন্টার করে দেব। চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গার শিক্ষার্থীরা যাতে পড়াশোনা করা অবস্থাতেই অনলাইনে ইনকাম করতে পারে সেই ব্যবস্থা করে দেব। সৃষ্টিকর্তা যদি সুযোগ দেয়, ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গা আমি উপহার দেব।
তিনি আরো বলেন, এ ছাড়াও কৃষি, সামাজিক নিরাপত্তা, নারী জাগরণ, দারিদ্র্যবিমোচন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি, সন্ত্রাসমুক্ত জনপদ, অসাম্প্রদায়িক চুয়াডাঙ্গা, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, দলিত ও অবহেলিত জনগোষ্ঠী, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ সুরক্ষা নিয়ে আমি কাজ করব।
পরিবেশেষ আলমডাঙ্গাবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ৫২ বছরের ইজারা শেষ করতে হলে ভোটকেন্দ্রে যেতে হবে। আর এবার যদি ভোটকেন্দ্রে না যান, তবে ওই পরিবার ১০০ বছরের চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গার ইজারা নিবেন। কী করবেন? সিদ্ধান্ত আপনাদের।
মন্তব্য করুন