প্রচণ্ড শীতে গেল কয়কে দিন থেকে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন চা বাগান, হাওর ও নদীবেষ্টিত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের বাসিন্দারা। বুধবার (১৭ জানুয়ারি) শ্রীমঙ্গস্থ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
হিমেল বাতাস আর কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে। সে সঙ্গে কুয়াশায় ঢেকে আছে চারপাশ। রাতে ও সকালে বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়ছে। টানা ছয় দিনেও দেখা মিলছে না সূর্যের। এতে তীব্র ঠান্ডায় কাবু হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের দিনমজুর ও সাধারণ মানুষ। ব্যাহত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। এ অবস্থায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া লোকজন খুব একটা ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না। এ ছাড়া শীতের তীব্রতায় উপজেলার মানুষের দৈনন্দিন কাজ ব্যহত হচ্ছে। গবাদি পশু নিয়ে নিয়ে বিপাকে রয়েছে স্থানীয়রা। একই সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগও।
শীত বিরাজমান থাকায় জনজীবনে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। সন্ধ্যায় মৃদৃ শীতল বাতাশে শীতের তীব্রতা বড়তে পরে বলে ধারণা করছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা। এবং আগামী দুই একদিনের মধ্যে তাপমাত্রা আরো নিচে নামতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এখন প্রতিদিনই বাড়ছে শীত। হাওর আর পাহাড়বেষ্টিত শ্রীমঙ্গলে কনকনে শীতে কাবু চা বাগান, রাবার, আগর বাগান ও হাওর পাড়ের বাসিন্দারা। জেলার চা বাগান আর কাউয়াদিঘি আর হাইল হাওর তীরের বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগে ফেলেছে। প্রচণ্ড ঠান্ডা আর ঘনকুয়াশার মাঝেও কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে হাওর পাড়ের বোরো চাষি ও চাবাগান, রাবার ও আগর বাগানের শ্রমিকদের। শীতের তীব্রতায় এসব শ্রমিকদের দুর্ভোগের অন্ত নেই।
এ ছাড়াও শহরের বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট দোকান ও ভ্যানে করে শীতের কাপড় বিক্রি করছেন মৌসুমি ব্যবসায়ী। জেলা শহর ছাড়া বিভিন্ন উপজেলাও একই অবস্থা।
এলাকার কৃষক, জেলেরা তীব্র শীতে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে ব্যর্থ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। গবাদি পশু নিয়েও রয়েছেন বিপাকে। স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে শ্রেণি), সুইটি রানী (৬ষ্ঠ শ্রেণি) ও আব্দুল্লাহ আল বশির (৬ষ্ঠ শ্রেণি) শিক্ষার্থীরা জানান, তীব্র শীত ও ঠান্ডার কারণে স্কুলে যেতে অনেক সমস্যা হয়। সারাদিন সূর্যের দেখা মেলে না। আমাদের পড়াশোনা করতে ব্যাহত হচ্ছে।
এলাকার খেটে খাওয়া দিন মজুর আব্দুল হামিদ জানান, কয়েকদিন থেকে সূর্যের মুখ দেখতে পাই না। এত শীত ও ঠান্ডায় কাজ করতে পারিনা। হাত পা বরফ হয়ে আসে। কয়েকদিন থেকে অনেক কষ্ট করে জীবন যাপন করছি।
অটোরিকশাচালক জামাল মিয়া জানান, তীব্র শীত ও ঠান্ডা থাকার কারণে সকালে অটোরিকশা নিয়ে বেড় হতে পারি না। ঠান্ডায় হাত বরফ হয়ে যায় রিকশা চালাতে পারি না। বেড় হলেও তেমন যাত্রীর দেখা মেলে না। কয়েক দিন থেকে ঠিকভাবে আয় রোজগারও করতে পারি না।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, শ্রীমঙ্গলে শীত মৌসুমে চা শ্রমিক ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা বেশি কষ্ট পান। অন্যান্য বছরের মতো এ বছর এখানে শীত মৌসুমে বিভিন্ন সংগঠন ও সরকারের পক্ষ থেকে তেমন গরম কাপড় বিতরণ করা হয়নি।
শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের আবহাওয়া কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে শ্রীমঙ্গলে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটিই আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
তিনি আরও বলেন, ধীরে ধীরে এখানকার তাপমাত্রা এখন কমছে। ১৭, ১৮ ও ১৯ জানুয়ারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তারপর থেকে তাপমাত্রা আরও কমবে। চলতি মৌসুমে অতীতের রেকর্ড অনুযায়ী তাপমাত্রা আরও নিচে নামতে পারে। শ্রীমঙ্গলের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে।
মন্তব্য করুন