সদরপুর (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ০১:২৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

পদ্মার চরে অবাধে চলছে ফসলি জমির মাটি লুট

ফরিদপুর সদরপুরে ঢেউখালি ইউনিয়নের হাওলাদার কান্দি পদ্মা নদীর তীরে প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে দিনে-রাতে ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করছে একটি মহল। ছবি : কালবেলা
ফরিদপুর সদরপুরে ঢেউখালি ইউনিয়নের হাওলাদার কান্দি পদ্মা নদীর তীরে প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে দিনে-রাতে ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করছে একটি মহল। ছবি : কালবেলা

ফরিদপুর সদরপুরে ঢেউখালি ইউনিয়নের হাওলাদার কান্দি পদ্মা নদীর তীরে প্রায় ৫০০ মিটারজুড়ে চলছে মাটি কাটার ধুম। প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে দিনে-রাতে ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করছে একটি মহল। এতে দিন দিন কমে যাচ্ছে কৃষিজমি। সেই সঙ্গে ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ। হুমকিতে পড়ছে জনস্বাস্থ্য। এতে আগামী বর্ষা মৌসুমে নদী রক্ষা বাঁধ ও ওই এলাকার বসতবাড়ি বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। ভেকুর মাধ্যমে এমনভাবে মাটি কাটছে যে, একটু বৃষ্টি হলেই পাশের কৃষিজমি ভেঙে পড়বে। এতে একদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক। অন্যদিকে লাভবান হচ্ছে মাটির ব্যবসায়ীরা।

হাওলাদার কান্দি গ্রামের পদ্মার চরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সদরপুর উপজেলার ঢেউখালি ইউনিয়নের হাওলাদার কান্দির পাকা সড়ক থেকে একটি মাটির রাস্তা নেমে গেছে সোজা পদ্মা নদের উৎসমুখ পর্যন্ত প্রায় আড়াই শ মিটার এবং পূর্ব দিকে পদ্মা নদীর পানি পর্যন্ত অন্তত ২০০ মিটার অংশজুড়ে চলছে এ মাটি কাটা। দুটি এক্সকাভেটর (ভেকু) দিয়ে ৩০ থেকে ৪০ ফুট পর্যন্ত গভীর গর্ত করা হচ্ছে। নদীভাঙনের কারণে পদ্মা চরের বাসিন্দারা এখন উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করছেন। চরের সাথেই পদ্মা নদী। শুকনো মৌসুমে পণ্যবাহী কার্গো এসে আটকে যায় নদীর বুকে। অন্যদিকে, চরের জেগে ওঠা জমির নতুন মাটিতে বাদাম, ভুট্টা, ধান, কলইসহ নানা শষ্য আবাদ করা হয়।

হাওলাদার কান্দি চরের মাটির রাস্তা দিয়ে এগিয়ে যেতেই ফসলি জমির মাঝ বরাবর দেখা মিলল একে একে দুইটি ভেকুর। এদিকে মাটি কাটার খবর সংগ্রহের জন্য সেখানে পৌঁছানোর পর ভেকু রেখেই সেখান থেকে পালিয়ে যায় ভেকুর ড্রাইভার। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরেও সে ফিরে আসেনি। সেখানে উপস্থিত একজন কৃষক জানালেন, মাটির ব্যবসায়ীরা জোরপূর্বক তাদের জমির ওপর দিয়ে রাস্তা নিয়ে ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করছে। এখান থেকে প্রতিদিন রাত ৭টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কয়েকশ গাড়ি বালুমাটি কেটে বিক্রি করা হয়।

স্থানীয় একজন কৃষক জানান, পাশের জমি থেকে মাটি কেটে নেয়ায় তার জমির ফসল ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। মাটি বহনকারী যান চলাচলের জন্য তার জমির পাড় ভেঙে পড়ছে, ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। তাদের বলেও থামানো যাচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একখণ্ড জমির মালিক বললেন, তিনি তার জমিতে বাদাম, ভুট্টা, কলইয়ের চাষ করেন। তবে পাশের জমির মালিক মাটি কেটে বিক্রি করছে। গত কয়েক মাস যাবত এভাবে মাটি বিক্রি করছেন তিনি। ফলে মাটি টানার জন্য ব্যবহৃত গাড়ি চলাচলের কারণে তার জমির ফসল নষ্ট হয়। দুর্ঘটনাও ঘটে। ধুলো ও রাতভর গাড়ির শব্দের কারণে আমাদের বসবাস করা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয় আরেকজন কৃষক বলেন, তিনি এখানে নিজের জমিতে শস্য লাগিয়েছেন। নদীর চরের নতুন মাটিতে শস্য খুব ভালো ফলে। কিন্তু পাশের জমি থেকে মাটি কেটে নিচ্ছে স্নেহ হাওলাদার। এখন তার জমি ঘেঁষে পাশের জমির মাটি কাটা হচ্ছে। যেকোনো সময় তার ফসলি জমি ভেঙে পড়বে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, প্রতি রাতে পাঁচটি এক্সেভেটর দিয়ে ওই এলাকার পদ্মার তীর থেকে অন্তত ৬০ হাজার ঘনফুট মাটি কাটা হয়। প্রতিদিন রাত ৭টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত দুটি এক্সেভেটর দিয়ে মাটি কেটে তা বিক্রি করা হয়। এ কাজে মুখ্য ভূমিকা পালন করছেন উপজেলার ঢেউখালি ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার স্নেহ হাওলাদার।

তবে স্নেহ হাওলাদার এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এই জমির মালিক সে নিজেই তার জমি থেকেই সে মাটি কেটে বিক্রি করছেন।

ঢেউখালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান বলেন, আমি মাটি কাটার বিষয়ে তেমন কিছুই জানি না। স্নেহ এক দলের রাজনৈতি করে আমি অন্য দলের করি। তবে আমার জানা মতে, নদীর চরের যে জায়গার মাটি কাটা হচ্ছে, তা ব্যক্তিমালিকানাধীন। সেই মাটিই ইউপি সদস্য স্নেহ কেটে বিক্রি করছেন।

এ ব্যাপারে সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মোরাদ আলী জানান, আমি এখানে নতুন জয়েন্ট করেছি হাওলাদার কান্দি গ্রাম থেকে মাটি কেটে নেয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। এখন জানলাম, মাটি কাটা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আপনার শখের গাছের জন্য প্রাকৃতিক টনিক

শিগগির শুরু হবে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সরাসরি ফ্লাইট : পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী 

ইউক্রেনের আরও ৩ গ্রাম দখলের দাবি রাশিয়ার

মিষ্টিমুখে অস্বাস্থ্যকর চিত্র, জরিমানা এক লাখ

‘মব’ করে তিন কিশোরকে বেঁধে বেধড়ক পিটুনি, নিহত ১

শিমুল বিশ্বাসের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল, দেখতে গেলেন ডা. রফিক

আইফোন ব্যবহারকারীদের জন্য অ্যাপলের জরুরি সতর্কতা

এশিয়া কাপের জন্য বাংলাদেশের দল ঘোষণা

দেশকে বাঁচাতে পরিবেশ রক্ষা করতে হবে : মঈন খান

এশিয়া কাপের আগে জার্সি স্পনসর হারানোর শঙ্কায় ভারত দল

১০

গবেষণা / পুরুষদের তুলনায় নারীদের বেশি ঘুমের প্রয়োজন, জেনে নিন কেন

১১

৪০ কোটি টাকায় দেড়শ বছরের সিআরবি ভবন সংস্কারের উদ্যোগ

১২

সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ২৭০ ফ্ল্যাট বরাদ্দ বাতিলের সিদ্ধান্ত

১৩

‘যদি পিআরের জন্য আন্দোলন করেন, তাহলে নমিনেশন দিলেন কেন’

১৪

প্রপাগান্ডা ছড়ানোর আগে পরামর্শ নিতে বললেন শিবির প‍্যানেলের সর্ব মিত্র!

১৫

মালয়েশিয়ায় নামাজ আদায় করে কার্যক্রম শুরু করলেন নাহিদ

১৬

খাওয়ার পর করা এই ৮ কাজ ডেকে আনবে বিপদ, বলছেন বিশেষজ্ঞ

১৭

এবার নাহিদা-সোবহানারাও হারল যুবাদের কাছে

১৮

গুম-খুনের জন্য হাসিনার বিচার হতেই হবে : মির্জা ফখরুল

১৯

৩৮ বছরের দাম্পত্য জীবনে ইতি টানছেন গোবিন্দ ও সুনীতা

২০
X