শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫, ২৬ আশ্বিন ১৪৩২
তারাগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০৪:১৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

রংপুরে দুস্থদের চাল বিতরণে অনিয়ম

বস্তাবন্দি ও খোলা অবস্থায় ছড়ানো চালগুলো ইঁদুর-চিকার খাদ্য ভাণ্ডারে পরিণত হয়েছে। ছবি : কালবেলা
বস্তাবন্দি ও খোলা অবস্থায় ছড়ানো চালগুলো ইঁদুর-চিকার খাদ্য ভাণ্ডারে পরিণত হয়েছে। ছবি : কালবেলা

রংপুরে তারাগঞ্জের হারিয়ারকুটি ইউপি চেয়ারম্যান কুমারেশ রায়ের বিরুদ্ধে দুস্থ-অসহায় মানুষের বরাদ্দের চাল বিতরণ না করে অযত্নে তালা বদ্ধ করে সংরক্ষনের নামে বিনষ্ট ও মানুষের খাদ্যের অনুপযোগী করার অভিযোগ উঠেছে।

হারিয়ারকুটি ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ৬৫/৭০ চাল ভরা বস্তা অযত্নে বিট পুলিশিং অফিস কার্যালয় কক্ষে তালাবদ্ধ অবস্থায় সংরক্ষন করা। বস্তাবন্দি ও খোলা অবস্থায় ছড়ানো চালগুলো ইঁদুর-চিকার খাদ্য ভাণ্ডারে পরিণত হয়েছে। এসব প্রাণির বিষ্ঠায় ভরা চালগুলো পরিনত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে, চালগুলো বেশিদিন ধরে অযত্নে থাকায় খুই পরে প্রায় নষ্ট।

গ্রাম পুলিশ আব্দুল কুদ্দুস কালবেলাকে বলেন, রুমে বস্তাবন্দি ৫০ কেজি করে চালের সবগুলো বস্তাই ঈদের বিশেষ বরাদ্দের চাল। যা বিতরণ করা হয়নি বলে এই ঘরে রাখা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, চেয়ারম্যান এই ঘরের চাবি নিজের কাছেই রাখেন। এসব চাল গত জুন-২৩ এর ঈদের বরাদ্দের চাল, আমরা এ চালের খবর ভালোভাবে জানি।

আরেক গ্রাম পুলিশ খয়রাত হোসেনও বলেন, বিট পুলিশিং কার্যালয় কক্ষের ৫০ কেজি চালের বস্তা গুলো ঈদের সময়ের বরাদ্দের চাল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইউপি সদস্য বলেন, হারিয়ারকুটি ইউপি চেয়ারম্যান কুমারেশ রায় তার ব্যক্তিগত পুকুরের মাছ চাষের খাদ্য হিসেবে সরকারি চাল ব্যবহার করেছে। দীর্ঘদিন ধরে বিতরণ না করা ৬-৭ বস্তা পঁচা ও পোকা ধরা চাল চৌকিদার সরদার মহুবারের মাধ্যমে রাতের আধারে পুকুরে ঢেলে দিয়েছে।

এছাড়াও একাধিক ইউপি সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন, চেয়ারম্যানের গাফিলতির কারণে চালগুলো গোডাউনে অযত্নে পরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ও অনেক দরিদ্র মানুষ চাল পাচ্ছেনা।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী আলতাফ হোসেনের সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি অল্পকিছুক্ষনের মধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ছড়ানো ছিটানো ও অযত্নে সংরক্ষিত চালের বস্তাগুলো দেখে দুঃখ প্রকাশ করেন। এভাবে বিতরণ না করে চাল নষ্ট করা কতটুকু যৌক্তিক, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যে প্রকল্পেরই চাল হোক বিতরণ না করে এভাবে রাখা মোটেও ঠিক হয়নি। চালের যে অবস্থা (খুঁই পরেছে) তবে এই চাল বিতরণ হয়েছে মর্মে আমি জানতাম। চাল বিতরণে তদারকির গাফেলতি’র প্রশ্নের জবাবে পিআইও আলতাফ জানান, বিতরণ উদ্বোধন করে চলে গিয়েছি। পরবর্তীতে আর খোঁজ নেওয়া হয়নি। এই দায় আমার একার নয়।

পিআইও কালবেলাকে বলেন, এগুলো জিআরের চাল। ঈদের সময় ভিজিএফ এর চাল বিতরণের পর জেলা প্রশাসন থেকে মানবিক সহায়তার (জিআর) চাল আংশিক বিতরণের পর দূর্যোগকালীন বিতরণের জন্য রেখে দিতে বলা হয়েছিল। তিনি বলেন, কুমারেশ রায় সে রকম মানুষ নয়, হয়তো কোন ভালো উদ্দেশ্যেই চালগুলো সংরক্ষণ করেছেন।

তথ্য সূত্রমতে, বিগত সময়গুলোতে শুধুমাত্র ভিজিএফ’র চালগুলো প্রতি বস্তা ৫০ কেজি করেই ভর্তি করা হয়। এছাড়াও ভারপ্রাপ্ত খাদ্য পরিদর্শক কর্মকর্তা মো. নুরুন নবী বাবু জানান, হারিয়ারকুটি ইউনিয়নে ভিজিডি’র ৩০ কেজির ৭৫৮ বস্তা চাল পাঠানো হয়। গত বছরের ২৬ জুন জিআর প্রকল্পের ৩০ কেজি বস্তার ২০০টি মোট ৬ টন এবং ভিজিএফ প্রকল্পের ৫০ কেজির ৬৪৫ বস্তা মোট ৩২ টন ২৫০ কেজি চাল পাঠানো হয়েছে।

হারিয়ারকুটি ইউনিয়ন পরিষদে বিতরণ না করে তালাবদ্ধ করে রাখা ৫০ কেজি চালের বস্তাগুলো কোন প্রকল্পের জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু গত জুনে শুধুমাত্র ভিজিএফ’র ৫০ কেজি চালের বস্তা দিয়েছি তাহলে হাড়িয়ারকুটি ইউপিতে সংরক্ষিত চালের বস্তা গুলো দুস্থ-অসহায় মানুষের জন্য ঈদের বরাদ্দের চালই হবে। তিনি আরও বলেন, শ্রমিক আইন সংশোধনের কারনে গত বছরের জুন মাসের পরে থেকে আর ৫০ কেজির বস্তা আমরা ব্যবহার করছিনা।

চেয়ারম্যান কুমারেশ রায় বলেন, পরিষদে অন্য কোনো প্রকল্পের চাল নেই। শুধু মাত্র ভিজিডি’র চাল রয়েছে। পিআইও’র দেওয়া তথ্য সঠিক নয়। জিআর কিংবা ঈদের সময়ের দেওয়া ভিজিএফে’র কোনো চাল নেই। অযত্নে সংরক্ষণের কারণে নষ্ট চাল পুকুরে ঢেলে দেওয়া বা ইঁদুরে খাওয়া ও চালের ঘরে ইঁদুর-চিকার বিষ্ঠার ভাগার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করে বলেন, আমার পরিষদে যেসব চাল তালাবদ্ধ ঘরে রয়েছে সেসব অরক্ষিতভাবে নেই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল রানা উক্ত বিষয়ে বলেন, এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। সত্যতা পেলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জিআর বা ভিজিএফ‘র চাল ৬ মাসেও বিতরণ করা না হলে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কি তার দায়ভার এড়াতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন জানান, না দায়ভার এড়াতে পারেন না। যদি এমনটি হয়ে থাকে তাহলে সেটা হবে নিয়ম বহির্ভূত কাজ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দলে দলে ঘরে ফিরছে হাজারো গাজাবাসী

সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

রাজধানী থেকে বগুড়া শহর আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক গ্রেপ্তার

হেফাজতে ইসলাম সবার জন্য পরামর্শকের দায়িত্ব পালন করছে :  এ্যানি

দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

রাবি প্রশাসনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের অভিযোগ

ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কার উৎসর্গ করলেন মারিয়া

দেশের ৪০ শতাংশ নারী থাইরয়েডে আক্রান্ত!

‘এই পচা চালের ভাত কীভাবে খাব’

‘পুলিশ এখন বানরের মতো’ বললেন ওসি হাবিবুল্লাহ

১০

ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে যে একাদশ নিয়ে নামতে পারে আর্জেন্টিনা

১১

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরতে একমাত্র পথ সুষ্ঠু নির্বাচন : নীরব

১২

যশোরের ৪ মহাসড়কে মহাদুর্ভোগ

১৩

সুদের টাকা না পেয়ে ঘরের টিন কাঠ খুঁটি খুলে নিলেন ইমাম

১৪

সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলামের মৃত্যুতে ঢাবি সাদা দলের শোক

১৫

কিউইদের কাছে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শোচনীয় পরাজয়

১৬

বিএনপি আইনের শাসনে বিশ্বাসী : ব্যারিস্টার অসীম

১৭

প্রত্যেক উপদেষ্টা বিদেশি নাগরিক : রুমিন ফারহানা

১৮

বিশ্বকাপ দলে ডাক পেলেন ঢাবি ছাত্রদল নেতা

১৯

ইতিহাসের সেরা নির্বাচন হতে যাচ্ছে : প্রেস সচিব

২০
X