পার্বত্য অঞ্চল রাঙামাটিতে সারা দেশের মতো কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে। গাছপালায় ঘেরা পাহাড়ে বাসিন্দাদের বাস মূলত খুপড়ি-মাচাং ঘরে। বেড়ার ফাঁক দিয়ে হিমেল হাওয়া যেন হাড় কাঁপিয়ে দেয়। তাই এখানকার শীতও অন্যান্য অঞ্চলের থেকে আলাদা।
পাহাড়ে হাড় কাঁপানো শীতের কারণে এখানকার কৃষিজীবী, দিনমজুর, খেটে খাওয়া মানুষ বিপাকে পড়েছেন। তীব্র শীতে কাঁপছে পাহাড়ের মানুষ। ঠান্ডায় বিপর্যস্ত জীবনযাত্রা। সে সঙ্গে ঘনকুয়াশায় সড়কে চলাচল আরও বিপজ্জনক হয়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) রাঙামাটি আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রাঙামাটিতে গত দুই দিন ধরে কুয়াশায় সূর্যের দেখা মিলছে না। পাশাপাশি মাঝে মধ্যে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে।
ঘনকুয়াশায় শীতে কাবু জেলা সদরসহ দুর্গম উপজেলাগুলোর মানুষ। অপর দিকে কুয়াশার কারণে দিনের বেলায়ও হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চালাচল করতে হচ্ছে। তবু থাকছে দুর্ঘটনা শঙ্কা।
এদিকে রাত ও দিনে তাপমাত্রা প্রায় কাছাকাছি হওয়ায় দিনের চেয়ে রাতে অনেক বেশি ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। মানুষ আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। ঘনকুয়াশা ও ঠান্ডায় নষ্ট হচ্ছে ধানের বীজতলা। এতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।
এখানে গবাদি পশু-পাখিও ঠান্ডায় কাবু হয়ে গেছে। শীত থেকে বাঁচাতে নিজেদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন গৃহস্থরা।
বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাতভর পড়া কুয়াশায় ভিজে গেছে পিচঢালা সড়ক। কুয়াশার মধ্যেই গায়ে শীতের কাপড় জড়িয়ে কাজের সন্ধানে ছুটছে কর্মজীবী মানুষ। কয়েকটি বিদ্যালয়ের মাঠে আগুন জ্বালিয়ে শিক্ষার্থীদের তাপ পোহানোর ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। গ্রামের বাজারগুলোতে অন্যান্য সময়ের চেয়ে লোক সমাগম কম।
বাঙালহালিয়া এলাকার যতীন্দ্র মারমা বলেন, ঘনকুয়াশা ও ঠান্ডা বাতাসে মানুষ ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছে না। আগে দিনে ৬০০ টাকা মজুরি পেতাম। গত কয়েক দিন ধরে ঠান্ডার কারণে কাজে বের হতে পারিনি। টাকাও আয় হয়নি। খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে। এক দিকে আয় কম, অন্যদিকে বাজারের সব জিনিসের দাম বেশি।
রাজস্থলী বাজারের টমটম চালক জমির উদ্দিন বলেন, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কুয়াশায় রাস্তা দেখা যাচ্ছে না। বাতি জ্বালিয়ে গাড়ি চালাচ্ছি। মাঝ দুপুরে কিছুটা কমলেও বিকেল ৪টার পর ঘনকুয়াশা ফের শুরু হয়। সন্ধ্যা হলে হেড লাইট জ্বালালেও কিছু দেখা যায় না।
এদিকে ঠান্ডা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীতজনিত রোগে আক্রান্তের হার বেড়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রায় সময় দেখা যায় হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপও বেড়েছে।
রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসক শওকত আকবর জানান, শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। এ সময় চলাফেরায় সবাইকে সাবধান হতে হবে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের ঠান্ডা লাগানো যাবে না।
মন্তব্য করুন