রাজবাড়ী প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:৪৬ পিএম
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:৫২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

অজ্ঞান করে আ.লীগ নেতাকে হত্যার অভিযোগ

আ.লীগ নেতা রতন দাস। ছবি : সংগৃহীত
আ.লীগ নেতা রতন দাস। ছবি : সংগৃহীত

রাজবাড়ী সদর উপজেলায় রতন দাস নামে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে অজ্ঞান করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। সঙ্গে তার স্ত্রী অজ্ঞান অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) আনুমানিক দিবাগত রাত ৩টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

রতন দাস (৬৫) শহীদ ওহাবপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড আ.লীগের সভাপতি এবং উপজেলার শহীদ ওহাবপুর ইউনিয়নের আহলাদীপুর গ্রামের মৃত বিপিন বিহারী দাসের ছেলে। তার স্ত্রী কণিকা দাস স্থানীয় মধুপুর ছকিরন নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র কালবেলাকে জানায়, শুক্রবার রাতে রতন দাস ও তার স্ত্রী কনিকা দাস ঘুমাতে যান। পরের দিন শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত তাদের ঘুম থেকে উঠতে না দেখে সন্দেহ হয় স্থানীয়দের। পরে তাদের দুজনকেই অচেতন অবস্থায় দেখে পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয়রা। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে রতন দাস ও তার স্ত্রী কনিকা দাসকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়।

সেখানে তাদের অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রতন দাস মারা যান। রতন দাসের স্ত্রীর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানান পুলিশ।

এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এলাকা জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে তোলপাড়। এমন ঘটনা এ প্রথম তাই এলাকায় সবার মনে ভয় এসেছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত কামনা করেছেন এলাকাবাসী। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কঠিন শাস্তি প্রত্যাশা করেন স্থানীয়রা। অতি দ্রুতই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।

অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন আ.লীগ নেতাকর্মীদের মাঝেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনায়, আ.লীগের নেতাকর্মীরা ক্ষোভ, প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং শোক প্রকাশ করেছেন।

প্রতিবেশি সমরেশ দত্ত জীবণ কালবেলাকে বলেন, এ রকম ঘটনা খুবই দুঃখজনক। এমন দুঃসংবাদ পাবো কখনো ভাবতে পারি নাই। খুবই খারাপ লাগছে। সন্ধ্যার পরই মৃতদেহ এসেছে। রতন দা আ.লীগ নেতা ছিল ও তার স্ত্রী শিক্ষক। তারা খুব ভালো মানুষ। রতন দা সনাতন ধর্মের হলেও সে সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকে। এ বয়সে এভাবে চলে যাওয়া মেনে নেওয়ার মতো না। তবে তার আপন ভাইদের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে সমস্যা ছিল। রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী এমপি সাহেব বসে সেই ঝামেলা মিটিয়ে দিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, এ ছাড়াও তার সঙ্গে তার দুই প্রতিবেশির ঝামেলা চলছে জমিজমা নিয়ে। এ বিষয়টি নিয়ে রতন দার নামেও মামলা করেছেন তার দুই প্রতিবেশি। তবে কে এ কাজের সঙ্গে জড়িত তা সঠিকভাবে বলতে পারছি না। তবে এ ঘটনার তদন্ত হোক। যে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত আমরা তাকে দেখতে চাই। জড়িতদের শাস্তি হোক এটাই চাই।

রতন দাস এর ছোট ভাই নান্টু কুমার দাস কালবেলাকে বলেন, এ ঘটনার সাথে যারা জড়িত তারা দাদা বৌদিকে অজ্ঞান করে সোনা দানা টাকা পয়সার নেওয়ার জন্য এসেছিল। বৌদির সোনার কানের দুল, হাতের শাকা চুরি করে নিয়েছে। আমার দাদা মারা গেছে বৌদি বেঁচে আছে। বৌদি সুস্থ হলেই বিষয়টি আরো ক্লিয়ার বোঝা যাবে। কাল সকাল ১১টার দিকে খানখানাপুর শ্বশান ঘাটে আমার দাদার দাহ করা হবে। এখনো আমরা কাউকে সন্দেহ করতে পারছি না, কারণ আমরা কাউকে দেখি নাই।

স্থানীয় ইউপি সদস্য, মো. বাবু শেখ কালবেলাকে জানান, এটা খুবই নিন্দনীয় কাজ এবং খারাপ কাজ হয়েছে। যারা অন্যায়কারী, তাদের শাস্তি হোক। সে ভালো লোক ছিল। খুব কষ্টজনক ব্যাপার এটা। এলাকার সবাই কষ্ট পাচ্ছে। তার স্ত্রীও খুব ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত। তিনি একজন শিক্ষিকা এবং ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডের সাবেক সংরক্ষিত আসনের ইউপি সদস্য ছিলেন। কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে এখনো বোঝা যাচ্ছে না। আমরা জানতে চাই কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আমাদের নিরাপত্তা নাই। আমরা নিরাপত্তা চাই। এটা একটা নজিরবিহীন ঘটনা।

শহীদওহাবপুর ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি, শেখ ফরিদ কালবেলাকে জানান, রতন দাস আ.লীগের ভালো কর্মী ও নেতা। কেন এ ঘটনা সেটি দ্রুতই তদন্ত হোক সেটাই আমরা চাই। আমরা তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছি এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুতই শাস্তির আওতায় আনা হোক সেটাই চাই।

শহীদওহাব পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ ভুইয়া কালবেলাকে জানান, এ ঘটনা শোনার পর আমি রতন দাসের বাড়িতে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখালাম রান্না ঘরের টিন কেটে তার ঘরে ঠুকেছে। আমাদের ইউনিয়নে এমন ঘটনা এই প্রথম। এমন ঘটনা আগে কখনো দেখি নাই। আমার জীবনেও প্রথম। তবে যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তারা পরিকল্পনা করে এবং ষড়যন্ত্র করে করেছে। আরো ধারণা করা যাচ্ছে, অজ্ঞান পাটি এ কাজের সাথে জড়িত থাকতে পারে। তবে কে বা কারা এ কাজের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে পুলিশ তদন্ত করছে। তদন্ত শেষ হলে তা বোঝা যাবে।

এ বিষয়ে খানখানাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের (ইনচার্জ) উপপরিদর্শক মো. সেলিম হোসেন কালবেলাকে জানান, তাদের বাড়িতে স্বামী-স্ত্রী ছাড়া অন্য কেউ থাকেন না। আমরা ধারণা করছি তাদের অজ্ঞান করে হত্যা করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। পুলিশ রহস্য উৎঘাটনে কাজ করছে। পুলিশের তদন্ত চলছে।

রাজবাড়ী সদর থানার ওসি ইফতেখারুল আলম প্রধান কালবেলাকে জানান, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের গ্রেপ্তার করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে পুলিশ কাজ করছে। পুলিশ মাঠে রয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নুরের নিরাপত্তা বিবেচনায় বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে : রাশেদ 

প্রায় ২০০০ কোটি টাকা খরচ করে স্ট্রাইকার কিনছে লিভারপুল

অনার্স চতুর্থ বর্ষের ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষার সূচি পরিবর্তন

বিশ্বের মুসলিমদের উদ্দেশে ইরানের প্রেসিডেন্টের বার্তা

সুসজ্জিত গাড়িতে পুলিশ সদস্যের রাজকীয় বিদায়

বিদ্রোহী সরকারের প্রধানমন্ত্রী নিহত, ইয়েমেনের পক্ষে ইরানের হুংকার

চোখের পাতা লাফানো কি অশুভ, নাকি কোনো রোগের লক্ষণ

সিডনিতে রুশ কনস্যুলেটের গেটে গাড়ির ধাক্কা, অতঃপর...

চবি ক্যাম্পাসে সুনসান নীরবতা

মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক ওসমানীর ১০৭তম জন্মবার্ষিকী আজ

১০

ফাইনালে হারের পর সুয়ারেজের বিতর্কিত কাণ্ড!

১১

হাত-পায়ের ৫ লক্ষণে বুঝে নিন লিভারে সমস্যা ভুগছেন কি না

১২

হাসি, বিনা মূল্যের থেরাপি : তিশা

১৩

হল ছাড়ছেন বাকৃবির শিক্ষার্থীরা, আন্দোলনের ঘোষণা একাংশের

১৪

ভিসা নিয়ে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের কঠোর বার্তা

১৫

গোলের বদলে ডিম! পাখির কারণে মাঠছাড়া ফুটবলাররা

১৬

আফগানিস্তানে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, নিহত বেড়ে ২৫০

১৭

নিজেদের অজান্তেই গাজায় বড় সফলতা পেল ইসরায়েল

১৮

সিইসির সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বৈঠক দুপুরে

১৯

ইন্দোনেশিয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মারমুখী অবস্থান, আন্দোলনে নতুন মোড়

২০
X