নিউ রাজা, পঙ্খীরাজ, পাগলা রাজা, রংবাজ, পারলে ঠেকাও, কাজলি, তাজিয়া, বিজলী রানী ও বাহাদুর এমন বাহারি সব নামের ঘোড়া এখন দিনাজপুরের চেরাডাঙ্গী মেলায়। বিক্রির জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মেলায় এসেছেন ঘোড়া ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলবার (২৩ মাঘ) উদ্বোধন হয় এই মেলা, যা চলবে মাসব্যাপী।
জনশ্রুতি আছে, ৭৭ বছর আগে শুরু হওয়া এই মেলায় আগে গরু, ছাগল, ঘোড়া, মহিষসহ উট ও দুম্বার ব্যাপক আমদানি হতো। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সেগুলো আমদানি করা হতো। কালের বিবর্তনে ওইসব প্রাণীর পরিবর্তে জায়গা করে নেয় গরু, মহিষ ও ঘোড়া। তবে ঘোড়ার উপস্থিতি এখনো চোখে পড়ার মতো। এ ছাড়া বিনোদনের জন্য যাত্রা, সার্কাস, পুতুল নাচের পাশাপাশি সংসারের যাবতীয় আসবাবপত্র কাঠ, স্টিল ও প্লাস্টিকের ফার্নিচার, মিষ্টান্ন, মসলা, জুতা ও কাপড়সহ এমন কোনো জিনিস নেই যা এ মেলায় বিক্রি হয় না। প্রায় আড়াই কিলোমিটার বর্গাকার এ মেলা ঘিরে এলাকার প্রায় ২০ গ্রামে চলে মেজবান আয়োজনও।
কিন্তু এই মেলায় প্রায় দেড় দশক থেকে গরু মহিষ ও ছাগলেরও আমদানি নেই। প্রথম দিন থেকেই মেলায় ঘোড়ার আমদানি হয় চোখে পড়ার মতো। মেলা শুরুর একদিন আগে থেকেই ঘোড়া ব্যবসায়ীরা তাদের ঘোড়া নিয়ে আসেন মেলায়।
সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় দিনাজপুর বিরল উপজেলার জেলার জুলিমুদি খানার ঘোড়া নিয়ে আসা গুরু মা নিশির (তৃতীয় লিঙ্গ) সঙ্গে। জানান, তিনি ৮টি ঘোড়া নিয়ে এসেছেন। পঙ্খীরাজ, বিজলী রানী ও রাস্তার পাগলসহ বাহারি সব নামের ঘোড়া নিয়ে এসেছেন তিনি। এর মধ্যে ৩টি অত্যন্ত দ্রুত গতিসম্পন্ন। একেকটি ঘোড়ার দাম হাঁকছেন ৬ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত। প্রথম দিন মানুষ আসছে, দেখছে। দাম বলছে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত দাম না বলায় একটি মাত্র ঘোড়া বিক্রি করতে পেরেছেন তিনি।
নওগাঁ সাপাহার থেকে ৫টি ঘোড়া নিয়ে এসেছেন মো. মোস্তাকিম। তার ঘোড়ার নাম নিউ রাজা। তিনি বলেন, তার ঘোড়া রেসের জন্য নতুন প্রস্তুত হয়েছে। তাই তার নাম দিয়েছেন নিউ রাজা। কিন্তু ঘোড়ার কাঙ্ক্ষিত দাম না বলায় বিক্রি করেননি।
নওগাঁ ধামইরহাট উপজেলা থেকে এসেছেন সামছুল আলম। তার ঘোড়া অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ছুটে। এজন্য ঘোড়ার নাম দিয়েছেন ‘পারলে ঠেকাও’। এলাকায় তার ঘোড়াকে সবাই ‘পারলে ঠেকাও’ বলেই ডাকে। তার ঘোড়ার দাম এক লাখ টাকা। ৮০ হাজার টাকা হলে ঘোড়াটি বিক্রি করবেন বলে জানালেন।
দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার হাটখোলা থেকে আসা নজরুল আলম নজু। তাকে সবাই ঘোড়া নজু বলে চিনে থাকেন। তিনি জানান, গত বছর তার ঘোড়ার নাম দিয়েছিলেন ‘কিরণ মালা’। সেটি মহিলা ঘোড়া ছিল। এবার পুরুষ ঘোড়ার কিনেছেন। যার নাম সাদাবাজ। এটি তিনি কিনেছেন ৫০ হাজার টাকায়। আর ‘কিরণ মালা’ বিক্রি করেছেন ৮০ হাজার টাকা কেনা দামে।
বিকেলে দিনাজপুর সদরে ৭৭তম ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশ চেরাডাঙ্গী মেলার উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি দিনাজপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইমদাদ সরকার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সাল রায়হান, সাবেক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ফরিদুল ইসলাম, চেরাডাঙ্গী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান, আউলিয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা কামাল, উপজেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মো. আকবর আলী, আউলিয়াপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগেরসভাপতি অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন, সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকারিয়া জাকির, দিনাজপুর দোকান মালিক সমিতির সভাপতি জহির শাহ্, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মো. খাদেমুল ইসলাম প্রমুখ।
মন্তব্য করুন