১৮ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না এমপিওভুক্ত এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা। দেওয়া হচ্ছে না তাদের কোনো ভাতাদি। হবিগঞ্জের মাধবপুরের চৌমুহনি খুর্শিদ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে এ ঘটনা ঘটেছে।
চাকরিতে আঘাত আসতে পারে এই ভয় অভিযোগ কিংবা গণমাধ্যমে কথা বলছেন না ভুক্তভোগী শিক্ষক-কর্মচারী ও গভর্নিং কমিটির কেউ কেউ।
প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির সভাপতি মো. রহম আলী মাধবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তিনি স্থানীয় সাবেক বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীর ঘনিষ্ঠ লোক। এ বিষয়ে তাকে জবাবদিহিতা কিংবা প্রশ্ন করতে ভয় পান সংশ্লিষ্ট অনেকে।
এদিকে গভর্নিং বডির সভাপতির সরলতার সুযোগে নিয়ে একটি স্বার্থান্বেষী মহল প্রতিষ্ঠানের ফান্ডের টাকা ভুয়া-বিল ভাউচারে উত্তোলন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
প্রতিষ্ঠানটির সাবেক অভিভাবক সদস্য মো. আব্দুল হামিদ জানান, ওই প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন কলেজ মার্কেটে চল্লিশের অধিক দোকান আছে। যার কোনোটি থেকে ১১ লাখ, কোনোটি থেকে ১০ লাখ করে সিকিউরিটি বাবদ গ্রহণ করেছে প্রতিষ্ঠানের ফান্ড। প্রতি মাসে ভাড়া বাবদ অর্ধ লাখ টাকার চেয়ে বেশি ওঠে। শিক্ষার্থী শুধু হাইস্কুল শাখাতে রয়েছে হাজারের অধিক। তাদের মাসিক ফি কম নয়।
সম্প্রতি স্থানীয় সাংবাদিক হামিদুর রহমান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই প্রতিষ্ঠানের কিছু অনিয়ম নিয়ে পোস্ট দিলে কমিটি নড়েচড়ে বসে।গভর্নিং বডি সভাপতি রহম আলী তাকে ডেকে নিয়ে শাসান বলেও জানা যায়।
এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ গভর্নিং বডির সদস্য আজহার উদ্দিন ভূঁইয়াকে প্রধান করে অনিয়ম ও গাফিলতি অনুসন্ধানে একটি অডিট কমিটি গঠন করে।
অডিট কমিটির প্রধানকে প্রতিষ্ঠানে আয়-ব্যয়ের হিসাব ও ভুয়া বিল ভাওচারে অর্থ আত্মসাৎ হয় কিনা- এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান, একটি কুচক্রী মহল এসব প্রশ্ন তুলছে। এসব বিষয়ের তদন্তে সত্যতা পেলে আমরা সেটা অবশ্যই জানাব।
প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ও গভর্নিং বডির সদস্য সচিব মোহন মিয়া বলেন, প্রতিষ্ঠানটিতে কী ফান্ড আছে তা তিনি জানেন না। শুধু জানি স্থানীয় কৃষি ব্যাংকে সামান্য একটি এফডিআর আছে।
ওই গভর্নিং বডির আরেক সদস্য সাহাবুদ্দিন জানান, বিভিন্ন মিটিংয়ে কলেজের আয়-ব্যয়ের হিসাব আমাদের দেওয়া হয় না। প্রতিষ্ঠানটির স্কুল শাখার ১২-১৩ জন শিক্ষক, কলেজ শাখার ১৫ জন এবং স্কুল ও কলেজের ৬ জন কর্মচারী রয়েছে। এমপিওভুক্তির সরকারি টাকা পেলেও প্রতিষ্ঠানের ফান্ড থেকে এক বছরের অধিক সময় ধরে ভাতাদি প্রদান করা হচ্ছে না।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান সোহাগ জানান, প্রতিষ্ঠানটি নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকলে এমনটি হওয়ার কথা নয়। এর বেশি চেয়ারম্যান হিসেবে বলার এখতিয়ার আমি রাখি না।
হবিগঞ্জের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল্লাহ প্রতিষ্ঠানটির নানামুখী সমস্যা ও অনিয়ম খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি জানান, গভর্নিংবডির দায়িত্ব এখানে বেশি, তবে সরকারিভাবে বরাদ্দ পাওয়ানোর ক্ষেত্রে তাদের প্রচেষ্টার কোনো কমতি নেই।
মন্তব্য করুন