দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট করতোয়া নদীর ওপর নির্মিত বাঁধটি চার দশকের অধিক সময়েও সংস্কার না করায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এতে করে হুমকির মুখে পৌরশহরের বাসিন্দারা। দীর্ঘদিন ধরে তদারকি না করায় এসব এলাকায় বাঁধের কোনো চিহ্নই নেই।
সরেজমিনে দেখা যায়, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এরইমধ্যে বাঁধ কেটে অনেকে ফসলি জমিতে পরিণত করেছে। বর্তমানে সেসব স্থানে বাঁধের অস্তিত্বও নেই। কিছু কিছু জায়গায় বাঁধের শুধু মাটির ঢিবি রয়েছে।
এদিকে করতোয়া নদীর তীরবর্তী তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পৌরশহরের কয়েক হাজার মানুষের বসবাস। একদিকে বাঁধ নেই অন্যদিকে নাব্য সংকটের কারণে ধুঁকে ধুঁকে মরা নদীতে পরিণত হয়েছে। যার কারণে অল্প বৃষ্টিতে নদীর পানি ফুলে ফেঁপে উঠে শহরের মধ্যে ঢুকে পড়ে। নদীর তীর থেকে ৫০০ মিটার দূরে পৌরভবন, পুরাতন বাজার, মসজিদ, মাজার, মন্দিরসহ অনেক স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
ওই সব এলাকায় বাঁধ রক্ষা ও সংস্কারকারে পাউবোর কার্যক্রম ও ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তদারকির গাফিলতিকে দায়ী করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ঝুন্টু দাস জানান, ‘হামরা গরিব মানুষ। ফেরি কোরে ঝাল-মুড়ি বিক্রি করি। বাপ-দাদা চৌদ্দ গুষ্টি ধরে এই খানোত বসবাস করছি। কোনো দিন ভাবিনি নদী একেবারে বাড়ির ধারত আসবি। মেলা ভয়ের মধ্যে আছি। বর্ষা আসলে হামার পরিবারসহ অন্তত ২০টা পরিবার নদীর মধ্যে বাড়িঘর হারাবি। আরেকটা জায়গা যে কিনমো সে টেকাও নাই। ভগবানই জানে কী আছে ভাগ্যত!’
সাবেক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মাহমুদুর রহমান জানান, আমি ১৯৮৪ সালে সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাই। তার আগে ৭২ সালের দিকে গোটা উপজেলার করতোয়া নদীর তীরে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এরপর ১৯৮০ সালে দিকে সংস্কার করা হয়। পরে ২০০৫ সালে পৌরসভা গঠিত হওয়ার পরও এখন পর্যন্ত কেউ আর এই বাঁধ পুনঃনির্মাণ অথবা সংস্কারের জন্য এগিয়ে আসেননি। আর এই কারণে টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে পৌরশহরে পানি প্রবেশ করে। এখন পৌরশহর হুমকির মুখে।
পৌর মেয়র আব্দুস সাত্তার মিলন বলেন, শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ খুব জরুরি। শহর রক্ষা বাঁধ দিলে একদিকে যেমন শহর রক্ষা পাবে, অন্যদিকে নদীও বাঁচবে। এজন্য পরিকল্পনা করতে হবে বাস্তবসম্মত ও দীর্ঘমেয়াদি। শুধু শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করলেই হবে না, এর আগে নদীতে ড্রেজিং করতে হবে। পাশাপাশি নদীর তীরে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা যেতে পারে। তাতে নগরবাসীর বিনোদনেরও জায়গা তৈরি হবে, নগরীর সৌন্দর্যও বাড়বে। এজন্য পাউবোকে অবগত করা হবে। যাতে তারা অতি দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
এ বিষয়ে দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান কালবেলাকে জানান, বিষয়টি সম্পর্কে আমার জানা নেই। ঘোড়াঘাট পৌর শহর রক্ষা বাঁধের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। এর আগে বিষয়টি তদন্ত করা হবে। তাছাড়া আমাদের বাজেট অন্তত সীমিত। এই সীমিত বাজেট দিয়ে বিশেষ কিছু ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের কাজ করা হবে।
মন্তব্য করুন