নিজের পেটের সন্তানকে প্রতিদিন অনেকটা গরু-ছাগলের মতো দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখেন এক হতভাগা মা। প্রত্যেক মায়ের কাছে নিশ্চয়ই এ কাজটি পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ। কিন্তু প্রতিনিয়ত এ কাজটি করতে বাধ্য হন মা লাভলী বেগম। করুণ এ দৃশ্যের দেখা মিলেছে রংপুরের পীরগাছার রামগোপাল গ্রামে।
ওই গ্রামের হতদরিদ্র শাহীন মিয়া ও লাভলী বেগমের ঘরে ৯ বছর আগে জন্ম নিয়েছিল ফুটফুটে একটি কন্যা সন্তান। বাবা-মা আদর করে নাম রাখেন সাথী। কে জানত তাদের সেই আদরের সন্তানটি হবে প্রতিবন্ধী। গত ৩-৪ বছর ধরে সেই সাথীকেই অনেকটা গরু-ছাগলের মত বেঁধে রেখে লালনপালন করছেন হতভাগ্য মা-বাবা।
শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সাথীদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সাথী একটি প্লাষ্টিক চেয়ারে বসা। তবে তার দুই পা চেয়ারের দুই পায়ার সঙ্গে কাপড়ের দড়ি দিয়ে বাঁধা। যাতে সে পড়ে না যায়, ছুটে না যায় সেজন্য তার শরীর চেয়ারসহ পাশের খুটির সাথে পুরোনো একটি ওড়না দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে।
কেন তাকে এভাবে বেঁধে রাখা হয়েছে তার উত্তরে সাথীর মা বলেন, সাথী জন্মগত প্রতিবন্ধী। সে হাটতে পারে না। ঠিকমত কথা বলতে পারেনা। যখন তার বয়স কম ছিল তখন তাকে যেখানে রেখেছি সেখানেই থেকেছে। এখন বয়স বেড়ে যাওয়ায় সে হাটতে না পারলেও হামাগুড়ি দিয়ে ছুটাছুটি করে বেড়ায়। ছেড়ে দিলে ময়লা আবর্জনা খায়। এছাড়া কখন কোথায় যায়, কি হয় এই ভয়ে তাকে বেঁধে রাখছি।
সাথীর বাবা শাহীন মিয়া বলেন, আমার দুই মেয়ে। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। ছোট মেয়ে সাথী প্রতিবন্ধী। আমার অভাবের সংসার। এক দিন কাজ না করলে পেটে ভাত জোটে না। টাকার অভাবে মেয়েটার ঠিকভাবে চিকিৎসা করাতে পারিনি। উন্নত চিকিৎসা পেলে হয়তো মেয়েটা আমার সুস্থ হতো। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার মেয়েটার সুচিকিৎসার জন্য সাহায্য চায়।
প্রতিবেশী দাদু আব্দুল গফুর বলেন, বাচ্চাটার ওজন বেশি হওয়ায় ওর মা তাকে কোলে নিতে পারেনা। একটা হুইল চেয়ার হলে সাথী ও তার মায়ের কষ্ট কিছুটা লাঘব হতো।
তাম্বুলপুর ইউপি চেয়ারম্যান বজলুর রশিদ মুকুল বলেন, সাথীর জন্য একটা হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করে দিতে চেয়েছি। ইনশাআল্লাহ করে দিব। ওর জন্য প্রতিবন্ধী ভাতা করে দেওয়া হয়েছে। ওরা গরীব মানুষ। ভাতার যে সামান্য টাকা পায় তা দিয়ে ওর খাওয়া ও চিকিৎসা হয়না। আমি সমাজের বিত্তবানদেরকে সাথীর সুচিকিৎসায় এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করছি।
মন্তব্য করুন