বিজয়নগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৫:৪১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

মই টেনে জীবিকার চাকা ঘুরাচ্ছেন তৈয়ব

দুই ভাই নিজেরাই হালের লাঙল টানছেন, মই দিচ্ছেন
টাকা না থাকায় গরু কিংবা ট্রাক্টরের বিকল্প হিসেবে দুই ভাই নিজেরাই হালের লাঙল টানছেন, মই দিচ্ছেন। ছবি : কালবেলা

‘অবেলায় পচা মাছ-তরকারি কিনে খাবারের ব্যবস্থা করতে গেলেও লাগে হাজার টাকা। টাটকা কিনতে গেলেতো আরও বেশি দাম। নিজেই কী খাব, কামলারে কী খাওয়াব আর মুজুরিই বা দেব কোথা থেকে।’ -এভাবেই করুণ কণ্ঠে তৈয়ব মিয়া তার সপরিবারে কেন কাজ করছেন তার জবাব দিচ্ছিলেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের বাসিন্দা তৈয়ব মিয়া (৪২)। ৯ সদস্যের সংসারে বর্তমানে আয়ের উৎস দুই বিঘা জমিই। তৈয়ব কৃষি কাজ করত আর তার ভাই রাসেল (৪৮) অটোরিকশা চালাত। সম্প্রতি রাসেলের অটোরিকশা চুরি হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে তার পরিবার। তাই কৃষি কাজের জন্য ট্রাক্টর কিংবা বলদ বা মহিষ ব্যবহার না করে কিছু টাকা বাঁচানোর জন্যই দুই ভাই নিজেই কোদাল দিয়ে মাটি প্রস্তুত করেন। মই টেনে জমি ঠিকঠাক করছেন।

শুধু দুই ভাইয়ের কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেননি তৈয়ব। পরিবারের মহিলারাও মাঠে চলে এসেছেন কাজ করতে। একপাশে দুই ভাই মই টানছেন, অপরপ্রান্তে বাড়ির বউ এবং মেয়েরা বীজতলা থেকে চারা তুলছেন।

কৃষি জমিতে কর্মরত নিলুফা বেগমের কাছে তাদের কাজ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, স্বামীকে সহযোগিতা করছেন। কারও কাছে টাকা ধার চেয়ে না পাওয়া এবং পেলেও সময়মতো পরিশোধ করতে না পারলে অনেক কথা শুনতে হয়। তাই কারও কাছে মাথা নত না করে নিজের কাজ নিজে করাই উত্তম বলে মনে করেন নিলুফা বেগম।

বিজয়নগরের বাসিন্দা রাসেল বলেন, জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও আয় আরও কমেছে। এ অবস্থায় ৯ সদস্যের পরিবার নিয়ে খেয়ে পরে বাঁচাই মুশকিল। কেউ বসে খাবে, সেই সুযোগ নেই। নিত্যপণ্যের দর যে প্রতিনিয়ত বাড়ছে সেই কথা বলতে গিয়েই রাসেল তুলে ধরেন দিনের পর দিন তার অসহায় হয়ে ওঠার অবস্থা। বাজারে ৫০০ টাকা নিয়ে গেলে এক কেজি মাছ কেনা যায় না। কীভাবে চলমু আমরা। চলার কোনো কায়দা নাই।

বাজারে গিয়ে চাল-ডাল-আলু কিনেই পকেট ফাঁকা হয়ে যায় বলে জানান তিনি। মাঝে মধ্যে নষ্ট কম দরে কিছু মাছ কিনলেও মাংস কেনার সামর্থ্য অনেক আগেই হারিয়েছেন বলে জানালেন এ রিকশাচালক। যদিও বর্তমানে রিকশাটাও হারিয়েছে।

দৈনিক কেনাকাটার হিসাব তুলে ধরে তিনি বলেন, দৈনিক চার কেজি চাল কিনতে হয়। একেবারে হস্তা এইডা কিনি, তারপরও ২০০ টাকা লাগে। মাছ কিনতে গেলে কিনি যেডা মাইনসে না কিনে হেইডা। মানুষ যেডা ৩০০ টাকা দিয়া কিনে, আমরার কিনতে হয় ১০০ টাকা দিয়া। আর না হয় শুঁটকি কি না লাগে। ১০০ টাকার শুঁটকি কিনলেও দুইবেলা হয় না। কী করমু আমরা তো দিশাহারা।

নিজেরাই ট্রাক্টরের কাজ করতেছে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে, তিনি জানান নিজেদের গরুও নেই। অন্যের কাছ থেকে গরু বা ট্রাক্টর ভাড়া এনে কাজ করার মতো টাকাও নেই। তাই বাধ্য হয়ে গরুর বিকল্প হিসেবে দুই ভাই হালের লাঙল টানছেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শেখ হাসিনার রায় ঘিরে ছড়িয়ে পড়া ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের ছবি সরানোর নির্দেশ 

সাত পদের ৫টিতে বিএনপির জয়

ঢাকা-ময়মনসিংহ রেল যোগাযোগ বন্ধ

গুমের মামলায় শেখ হাসিনার আইনজীবী জেড আই খান পান্না

বাংলাভিশনকে হারিয়ে সেমিফাইনালে কালবেলা

রূপলাল হত্যার আসামি গ্রেপ্তার

আজ থেকে বন্ধ বাংলাদেশ ব্যাংকে সরাসরি গ্রাহকসেবা 

বিপিএলে বাড়তে পারে আরও এক দল, আলোচনায় নতুন নাম

‘১৭ বছর পর ভোট দেওয়ার অধিকার ফিরে এসেছে’

নিজের চেহারা নিয়ে যা বললেন ধানুশ

১০

একসঙ্গে জন্ম নেওয়া পাঁচ শিশুকে গাভি উপহার

১১

এক পদের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ২ পদে শিক্ষক নিয়োগ

১২

হল ছাড়তে শুরু করেছেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা

১৩

দেবের সঙ্গে রোম্যান্সে নজর কেড়েছেন জ্যোতির্ময়ী

১৪

আটটির মধ্যে পাঁচটি যুদ্ধ থামিয়েছি : ট্রাম্প

১৫

বরিশালের এক নেত্রীকে সুসংবাদ দিল বিএনপি

১৬

ডাকাতি করতে গিয়ে ধরা, গণপিটুনিতে নিহত ১

১৭

প্রসূতির মৃত্যু, পালিয়ে গেলেন চিকিৎসক-নার্স

১৮

টাইপকাস্ট হতে চান না তৃপ্তি

১৯

আয়ারল্যান্ড সিরিজ মিস করবেন তারকা ক্রিকেটার!

২০
X