ঢাকার বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডে নিজের সন্তান ও স্বজনদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ধোঁয়ার কুন্ডুলিতে হারিয়ে গেলেন পিরোজপুরের তানজিনা নওরিন এশা। মায়ের একমাত্র সন্তান ছিলেন এই এশা। মা জানতেন না তার কলিজার ধন লাশবাহী গাড়িতে ফিরেছে।
লাশ যখন পিরোজপুরের মাতৃসদন সড়কে এশার খালার বাড়ি এসে পৌঁছায় তখন স্বজনদের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। মা যেন কাঁদতেও ভুলে গেছেন। এভাবে খালার বাড়ি থেকে নিথর এশাকে বিদায় দেন শহরের নড়াইলপাড়ায় শ্বশুর বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য। বিকেলে আসর নামাজের পর পৌর কবরস্থানে তাকে দাফন করেন স্বজনেরা।
ছেলে আরহামের বিরিয়ানি খাওয়ার আবদার পালন করতে গিয়ে এ দুর্ঘটনার শিকার হন এশা। এ সময় তার সঙ্গে খালাতো ভাইয়ের স্ত্রী লামিয়া ইসলাম ও তার দুই সন্তান ছিল। আগুন লাগার পর এশা তার সন্তান আরহামকে ভাবি লামিয়ার দুই সন্তানসহ বের হওয়ার জন্য আগে যেতে বলে। একটু পেছনেই ছিল এশা। এ সময় লামিয়া তার সন্তান ও আরহামকে নিয়ে বের হয়ে যেতে পারলেও হঠাৎ একটা বিস্ফোরণ হয়। ধোঁয়ার কুণ্ডুলিতে পথ হারিয়ে আর বের হতে পারেননি এশা। তারপর অনেক খোঁজাখুঁজি করেছেন স্বজনরা। কোথাও না পেয়ে ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটের মর্গে এশার লাশ শনাক্ত করেন স্বজনরা।
তানজিনা নওরিন এশা ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। এশার মা অনেক কষ্টে স্বামী ছাড়াই মেয়েকে যক্ষের ধনের মতো আগলে রেখে লেখাপড়া শিখিয়েছিলেন। একমাত্র মেয়েই ছিল তার ধ্যান-জ্ঞান এবং স্বপ্ন। চার দেয়ালের ভেতরে একরকম বন্দি জীবন বেছে নিয়ে ভাইবোনের সহযোগিতায় মেয়েকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত পড়াশোনা করিয়েছেন। পাত্রস্থ করেছেন জেলার স্বনামধন্য পরিবারে।
এশার শ্বশুর সাবেক কাউন্সিলর নাসির উদ্দিন। স্বামী নাদিম আহমেদের সঙ্গে এশার বিয়ে হয় ৮ বছর আগে। পরে তাদের কোলজুড়ে এসেছে ফুটফুটে সন্তান আরহাম আহমেদ (৬)।
ছেলের স্বাদ পূরণ করতে গিয়েই ছেলে এবং অন্য স্বজনদের বাঁচিয়ে নিজেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে পরপারে যাত্রা করলেন এশা। লাশবাহী গাড়ি নিয়ে স্বামী নাদিম আহমেদ ও তার পরিবারের লোকজন পিরোজপুরে পৌঁছায় শুক্রবার দুপুরে।
এ খবরে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। লোকের মুখে মুখে একটি শব্দ- আহারে মেয়েটি কত ভালো ছিল। ছোটবেলা থেকেই ভদ্র, বিনয়ী এবং আদর্শিক জীবনযাপনের কারণে এশা সবার স্নেহের পাত্রী ছিল।
মন্তব্য করুন