গুনাইঘর বায়তুল আজগর সাত গম্বুজ মসজিদ। দেবিদ্বার সদর থেকে দুই কিলোমিটার পশ্চিম দক্ষিণে গুনাইঘর গ্রামে অবস্থিত। এই মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জি. মঞ্জুরুল আহসান মুন্সি। তিনি ২০০২ সালের ১০ জুলাই এটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০০৫ সালের ১৪ জানুয়ারি এটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। এটির নির্মাণ খরচ হয়েছে তৎকালীন প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
এটির ভেতরে, বাহিরে ও বারান্দায় রয়েছে বাংলা ও আরবি হরফের সিরামিকসে করা শতাধিক ক্যালিওগ্রাফি। এ সাত গম্বুজ মসজিদটি তৈরি করতে ৩৫ জন শ্রমিক টানা আড়াই বছর কাজ করেছেন। এই মসজিদটি দেখতে দেশের বিভিন্নস্থান থেকে শত শত দর্শনার্থী ছুটে আসেন। চোখজুড়ানো এই মসজিদের ক্যালিগ্রাফি, কারুকাজ ও নকশার সৌন্দর্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে।
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এ মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৪৮ ফুট ও প্রস্থ ৩৬ ফুট। এর চার কোনায় ৮০ ফুট উচ্চতার চারটি মিনার রয়েছে। রয়েছে ৭টি গম্বুজ। এর মধ্যে একটি বড় গম্বুজ। রয়েছে একটি পরিসর অজুখানা। মসজিদের ভিতরের অংশে এক সঙ্গে শতাধিক মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। এ ছাড়াও মূল অংশের সামনের অংশে রয়েছে টাইলস করা সুপরিসর বারান্দা। এই বারান্দায় মূল অংশের প্রায় দ্বিগুণ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারেন।
মসজিদের ওপরে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা রয়েছে। এতে বিভিন্ন রঙ্গের বৈদ্যুতিক বাতি ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদে লিখা ‘আল্লাহু’ শব্দটি রাতের অন্ধকারে তারার মতো জ্বলতে থাকে, যা আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা থেকেও দেখা যায়। মসজিদের পেছনের রয়েছে দৃষ্টি নন্দিত একটি শিশুপার্ক, ফুলের বাগান ও একটি জলধারা।
মসজিদ নির্মাণে রয়েছে আধুনিক সমৃদ্ধ স্থাপত্যকলার নিদর্শন। মসজিদের ভেতর ও বাইরে আরবি হরফে লিখা হয়েছে ‘সুরা আর রহমান’, ‘আয়তুল কুরছি’ ও ‘চার কুল’। মসজিদের ভেতরের মূল অংশে ৫টি গম্বুজ আছে। একটিতে লিখা আয়াতুল কুরসি। অন্য চারটি গম্বুজের ভেতরে লিখা ৪টি কুল। মসজিদটির ইট, সিমেন্ট, বালির পাশাপাশি চিনামাটি ও টাইলস ব্যবহার করা হয়েছে।
মসজিদের কারুকাজ করা হয়েছে ইসলামী স্থাপত্য মোঘল তুর্কি ও পারস্যের সংমিশ্রণ থেকে। ভেতরে রয়েছে সুদৃশ্য ঝাড়বাতি। মসজিদটি তৈরিতে ৩ শত ৫০ মন চিনামাটির টুকরো ও ২০০টি গ্যাস ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদটিতে ৬টি এসি ও একটি ঝাড়বাতি আছে। এ মসজিদটির স্থপতি ছিলেন শাহীন মালিক এবং কারুকাজ ও নকশা করেছেন বিখ্যাত মুসলিম স্থাপতি আরিফুর রহমান। মসজিদের আলোকসজ্জা অনেক দূর থেকেও নজর কাড়ে। ভেতরে-বাইরে অগণিত চাঁদ ও তারা আঁকা। বাংলায় ৮টি ক্যালিগ্রাফি রয়েছে। আরবিতে লেখা আছে কোরআনের বিভিন্ন বাণী।
ক্যালিগ্রাফি এবং ফুল ও লতা পাতায় আরবি অক্ষরে শোভিত এ মসজিদটি নির্মাণশৈলীর দিক থেকে দেশের বিখ্যাত মসজিদগুলোর অন্যতম। দেবিদ্বারের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের মিশে আছে এ মসজিদটি। মসজিদটির স্থাপত্যকীর্তি সত্যই বিস্ময়কর। শেষ বিকেলের আলো নান্দনিক মসজিদটির পশ্চিম-দক্ষিণ পাশে ছড়িয়ে পড়ে। সূর্যের আলো পড়ে শুভ্র মসজিদটি ঝলমল করে ওঠে।
মন্তব্য করুন