বন্দর নগরী চট্টগ্রামে জমে উঠেছে রমজানের প্রথম দিনের ইফতারের বাজার। অভিজাত রেস্তোরাঁ থেকে ফুটপাত, সব জায়গায় বাহারি ইফতারের পসরা সাজিয়েছেন বিক্রেতারা। ক্রেতার ভিড়ও ছিল চোখে পড়ার মতো।
নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুরের পরপরই দোকানের বাইরে সামিয়ানা টাঙিয়ে ইফতারি বিক্রির প্রস্তুতি শুরু করেন বিক্রেতারা। ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপসহ নানা সব বাহারি খাবার বিক্রি করছেন তারা। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই বাড়ে ক্রেতাদের ভিড়।
তবে রোজার প্রথম দিন সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে, হালিমের হাঁড়ির সামনে। রীতিমতো হুড়োহুড়ি করে নগরের জিইসি মোড় এলাকার হান্ডি রেস্টুরেন্ট থেকে হালিম কিনছেন ক্রেতারা। হালিমের পাশাপাশি ক্রেতাদের পছন্দের হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানি, মেজবানির মাংস, শ্রীলঙ্কান রোল, শাম্মি কাবাব, বাট্টি পরোটা, চিকেন কাটলেট, জিরা পানি, দই-জিরা পানি, জুস, হালিম আখনি, ল্যাম্ব শর্মা, চিকেন শর্মা, শ্রিম্প পাকোড়া, পুরান ঢাকার শাটল কাবাব, মাটন লেগরোস্টসহ নানা মুখরোচক ইফতারসামগ্রী বিক্রি হচ্ছে দেদার।
নগরীর হান্ডি রেস্টুরেন্টে হালিম কিনতে আসা গরিবুল্লাহ হাউজিং সোসাইটির বাসিন্দা আলি আব্বাস বলেন, ‘এখানে প্রতি বছর তিন ধরনের হালিম পাওয়া যায়। ওরা যেটা করে আলাদা করে বিফ, চিকেন ও মাটন হালিম তৈরি করে। অবস্থা এমন হয়েছে যে এখন হালিম ছাড়া ইফতার, এটা কল্পনাই করা যায় না।’
হান্ডি রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপক মাজহারুল হক বলেন, ‘প্রতি রমজানে আমাদের দৈনিক একশ কেজির বেশি হালিম বিক্রি হয়। হালিমের মধ্যে চিকেন, বিফ ও মাটন তিনটাই আছে। তিনটার দামও এক, প্রতি কেজি ৬৮০ টাকা।’
একই চিত্র নগরীর কাজির দেউড়ি এলাকার রোদেলা বিকেল, ওয়াসা এলাকার কুটুমবাড়ি, দামপাড়ার ঢাবা, তিনতারকা হোটেল পেনিনসুয়ালা, জিইসি মোড় এলাকার মেরিডিয়ানসহ অভিজাত সব রেস্তোরাঁতেও।
জিইসি এলাকার মেরিডিয়ানে ইফতারি কিনতে এসেছিলেন নিজাম রোডের বাসিন্দা ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘প্রথম রোজায় পরিবারের সঙ্গে ইফতার করব। বাসার সবার চাহিদা অনুযায়ী মাটন লেগরোস্ট ও চিকেন তান্দুরি নিব। দাম একটু বেশি, কিন্তু ভালো জিনিস পেতে চাইলে দাম তো একটু বেশিই হবে।’
নগরের এনায়েত বাজার মোড়ের রয়েল বাংলা সুইটসে পরিস্থিতিও একই ছিল। দুপুর থেকেই ইফতার বেচাকেনা জমে ওঠে ঐতিহ্যবাহী এ দোকানে। ভিড়ের মধ্যে রীতিমতো যুদ্ধ করে ইফতার সংগ্রহ করতে হয় এখানে। এবার রয়েল বাংলার মাটন হালিম কেজি ৯০০ টাকা, চিকেন হালিম ৭০০ টাকা, মেজবানি মাংস ১ হাজার টাকা, বিরিয়ানি কৌটা (২ জনের) ৩৫০ টাকা, জাফরান ফিরনি ৩৮০ টাকা, দই ৩৬০, টক দই ৩০০ টাকা। এ ছাড়া রকমারি ইফতারি আইটেম আছে।
রয়েল বাংলা সুইটসের স্বত্বাধিকারী মো. আলী বলেন, গমসহ বিভিন্ন উপকরণ ধাপে ধাপে ১৫ ঘণ্টা জ্বাল দিয়ে তৈরি করা হয় হালিম। এটা হালিমের আদি রন্ধনপ্রণালি। যা ৬০ বছর ধরে আমরাই অনুসরণ করি। আমার বাবা মইজ আহমেদ আলী চিকন জিলাপি চালু করেছেন এ দেশে। জার্মানির ফুড কালার ব্যবহার করি জিলাপিতে।
আলী জানান, সুনামের সঙ্গে একই জায়গায় ৬০ বছর ধরে ব্যবসা করছি আমরা। কারণ আমরা স্বাস্থ্যসম্মতভাবে খাবার তৈরি করি। গত দুই বছর আমরা ইফতারির দাম বাড়াইনি।
মন্তব্য করুন