অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক জিনাত রশিদ আজাদ। তার চাকরি জীবনের জমানো ২৮ লাখ টাকা রেখেছিলেন কর্ণফুলী সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতিতে। নিজের বাসা ভাড়া নিয়ে করা অফিস ও পরিচিত লোকজন থাকায় বিশ্বাস করে সমিতিতে রেখেছিলেন শেষ সম্বল।
শুধু শিক্ষক জিনাত রশিদই নন, নওগাঁর বদলগাছীর আফরোজা বেগম, খাদিজা আক্তার, রাসেল আল মামুন, বেনজির ইয়াসমিন, শহীদ, কার্ত্তিকসহ উপজেলার শতাধিক নারী-পুরুষ বিপুল টাকা জমা রাখেন। আমানতকারীদের জমানো অন্তত ৬ কোটি টাকা নিয়ে হঠাৎ করে উধাও কর্ণফুলী সমিতির কর্তারা।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, মাসে প্রতি লাখে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা লাভ দেওয়ার কথা ছিল। লাভের আশায় আমাদের কষ্টের টাকা সঞ্চয় হিসেবে জমা রাখি। কয়েক মাস লাভ দেওয়ার পর বন্ধ করে দেয়। এরপর সঞ্চয়ের টাকা উত্তোলন করতে চাইলে কালক্ষেপণ করে। টাকা ফেরত না দিয়ে এখন তারা পালিয়ে গেছে।
টাকা ফেরত পেতে এ দুয়ার থেকে অন্য দুয়ারে ঘুরছেন ভুক্তভোগীরা। বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে দিয়েছেন লিখিত অভিযোগ। ফেরত পাননি কোনো টাকা।
ভুক্তভোগী জিনাত রশিদ আজাদ বলেন, ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে আমার বাসায় নিচতলা ভাড়া নেয় এ সমিতি। ভাড়া নেওয়ার সময় সমিতির এমডি আশরাফুল ইসলাম, সভাপতি জাহিদ হাসান, সাধারণ সম্পাদক আশা খাতুন, এরিয়া ম্যানেজার জাহিদুল ইসলাম ও শাখা ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম, অডিট অফিসার মিনহাজসহ পরিচিত অনেকে ছিল।
তিনি বলেন, আমি সরল বিশ্বাসে তাদের অফিস করার জন্য ভাড়া দিয়েছিলাম। এক সময় তাদের প্রলোভনে আমি আমার চাকরি জীবনের জমানো ২৮ লাখ টাকা সমিতিতে জমা রাখি। প্রথম তিন বছর তাদের কার্যক্রম ভালো ছিল। পরে তাদের লেনদেনের পরিবর্তন দেখা যায়। বুঝতে পেরে তাদের কাছে আমানত ফেরত চাই। তারা আজ নয়, কাল দিবে বলে কালক্ষেপণ করতে থাকে। অপেক্ষা করতে করতে একদিন উধাও হয়ে যায়। তখন থেকে অফিসে ঝুলছে তালা।
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আরও বলেন, গত বছরের ডিসেম্বরে এমডি আশরাফুল ইসলাম পালিয়ে যায়। জানুয়ারি মাসে অফিস বন্ধ করে সব স্টাফরা উধাও হয়ে গেছে। টাকা জমা দিয়ে এখন আমরা পথে বসেছি। প্রতিকারের আশায় থানায়, ইউএনও, র্যাবে অভিযোগ দিয়েছি। আদালতেও মামলা করেছি।
কর্ণফুলী সমবায় সমিতির এমডি আশরাফুল ইসলাম। তিনি মহাদেবপুর উপজেলার উত্তর গ্রাম ইউনিয়নে বামনসাতা গ্রামের বাসিন্দা। আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সমিতির সভাপতি জাহিদ হাসান বলেন, এই বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আপনি চাইলে যাচাই করতে পারেন। আমার কোথাও স্বাক্ষর নেই।
তিনি বলেন, যারা সমিতির কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত।
সমিতির শাখা ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম ও এরিয়া ম্যানেজার জাহিদুল ইসলামের নম্বরে কল করা হলেও তারা রিসিভ করেননি।
বদলগাছী থানার ওসি মাহবুবুর রহমান বলেন, অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে র্যাব-৫, সিপিসি-৩ জয়পুরহাট কোম্পানী কমান্ডার জানান, বিষয়টি নিয়ে আমাদের কার্যক্রম চলমান আছে। যে কোনো সময় আমরা তাদের আটক করতে সক্ষম হব।
মন্তব্য করুন