অটোরিকশা চালকদের কাছ থেকে পুলিশের নামে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে স্ট্যাণ্ডের সুপারভাইজারদের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
তবে এ ঘটনায় স্ট্যাণ্ডের দায়িত্বরত সুপারভাইজারদের কেউ কেউ দায় নিচ্ছেন নিজের ওপর, আবার কেউ এ বিষয়ে কথাই বলতে রাজি হননি।
এ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের আভ্যন্তরীণ যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম এখন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা (ইজিবাইক)। বর্তমান সময়ে পৌরসদরসহ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে চলাচল করে অন্তত হাজারখানেক ইজিবাইক।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পৌর এলাকার লাল মিয়ার বাজার, কাকাইলছেও রোডের রামকৃষ্ণ মিশন সড়ক, মুন সিনেমা হল সংলগ্ন পাহারপুর সড়ক, বদলপুর ইউনিয়নের বদলপুর বাজার, পাহারপুর বাজার, জলসুখা ইউনিয়ন বাজার, কাকাইলছেও ইউনিয়ন বাজার এবং শিবপাশা বাজারে অবস্থিত নয়টি স্ট্যাণ্ড থেকে প্রতিদিন প্রায় হাজার খানেক অটোরিকশা উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন ও পৌরসদরে যাত্রী নিয়ে চলাচল করে। আর এসব স্ট্যাণ্ড থেকে সুপারভাইজাররা চালকদের কাছ থেকে প্রতিমাসে এ টাকা উত্তোলন করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, রামকৃষ্ণ মিশন রোড সংলগ্ন কাকাইলছেও রোডে অটোরিকশা (টমটম) সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। এ সময় চালকদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, প্রতিমাসে পুলিশকে দেওয়ার নাম করে সুপারভাইজাররা ১০০ টাকা করে তাদের কাছ থেকে নেন। আর টাকা না দিলে নানান অজুহাতে গাড়ি ধরে নিয়ে থানায় আটকিয়ে রাখে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চালক জানান, মাস শেষ হলেই চাঁদার টাকার জন্য লাইন সুপারভাইজার মিন্টু মিয়া চাপ প্রয়োগ করে। নিরুপায় হয়ে টাকা দিতে হয়।
আজমিরীগঞ্জ সদর থেকে কাকাইলছেও সড়কে যাত্রী পরিবহনকারী একাধিক অটোরিকশা চালক জানান, তাদের কাছ থেকে প্রতিমাসে পুলিশের নাম করে চাঁদার টাকা নিচ্ছেন স্ট্যাণ্ড সুপারভাইজাররা।
অনেক গাড়ির চালকরা জীবিকা নির্বাহের জন্য বিভিন্ন এনজিও থেকে কিস্তিতে ঋণ নিয়ে গাড়ি কিনে সেই গাড়ির উপার্জনে সংসার চালান। প্রতিদিন যে টাকা ইনকাম হয় সেখান থেকে বিদ্যুৎ বিল, কিস্তির টাকা রেখে অবশিষ্ট আয় দিয়ে পরিবারের সদস্যদের মুখে কোনো রকমে খাবার জুটে। তার ওপর প্রতি মাসে পুলিশের নামে চাঁদা দিতে গিয়ে উর্দ্ধগতির বাজারে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাদের।
তারা আরও জানান, প্রতিটি অটোরিকশাকে ধারাবাহিকভাবে একদিন করে পুলিশের টহলের জন্য দিতে হয় ফ্রি সার্ভিস। ওই দিন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কষ্টে দিনানিপাত করতে হয়। এছাড়া টহলের দিন সামান্য দেরিতে গেলে শুনতে হয় গালাগাল।
পিরোজপুর গ্রামের অটোরিকশা চালক মঈনুল বলেন, আমরা দিনে রাতে ডিউটি করি এবং প্রতিমাসে ১০ তারিখের ভেতরে পুলিশের নামে ১০০ করে টাকা দিতে হয় সুপারভাইজার তাজু মিয়ার কাছে। আমরা গরিব মানুষ, এর থেকে আমরা মুক্তি চাই।
কাকাইলছেওয়ের সুপারভাইজার মিন্টু মিয়া বলেন, আমি টাকা তুলে নিজে খরচ করি।
বদলপুর ইউনিয়নের পিরোজপুর স্ট্যাণ্ডের সুপারভাইজার তাজু মিয়া বলেন, আমি প্রতিমাসে দুই হাজার টাকা করে সোহাগ মিয়ার কাছে দিচ্ছি।
পৌরসদরের রামকৃষ্ণ মিশন রোড সংলগ্ন অটোরিকশা চালকদের সুপারভাইজার সোহাগ মিয়ার সঙ্গে মুটোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে পরে কথা বলবেন বলে ফোন কেটে দেন।
আজমিরীগঞ্জ থানার ওসি মো. ডালিম আহমেদ কালবেলাকে বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। যদি পুলিশের নামে কেউ টাকা তুলে তবে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন