উজানের ঢল ও ভারি বর্ষণে বৃদ্ধি পাওয়া তিস্তা নদীর পানি গত তিনদিন পর বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে পানি কমলেও ভোগান্তি কমেনি পানিবন্দি মানুষের।
শনিবার (১৫ জুলাই) বিকেল ৩টায় তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার তিন সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এর আগে সকাল ৬টায় পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পরে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পানি প্রবাহ কমতে থাকে।
১২ জুলাই রাত থেকে অস্বাভাবিকহারে তিস্তার পানি বৃদ্ধি শুরু হয়। পরে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টের পানি বিপদসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পরদিন শুক্রবার পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়ে সকাল ৬টায় ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
এদিকে পানি বৃদ্ধিতে শুধু তিস্তার বাম তীরে কুড়িগ্রামের পাটগ্রামের আঙ্গরপোতা ও দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিঙ্গিমারী, সির্ন্দুনা, পাটিকাপাড়া ও ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়নের চর এলাকা ও নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলসহ ১৫ গ্রামের প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। কয়েক হাজার একর আমন ধানের বীজতলাসহ অনেক ফসলি জমি তিস্তার পানিতে ডুবে গেছে। ভেঙে যায় চর এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা।
এছাড়া বেড়েছে ধরলা, বুড়ি তিস্তা ও সানিয়াজান নদীর পানি। শনিবার বিকেল ৩টায় ধরলা নদী শিমুবাড়ি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ২১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে প্লাবিত হয়েছে সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকা।
লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, কালমাটি, পলাশী ও সদর উপজেলার ফলিমারীর চর, খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, বড়বাড়ি, রাজপুর, গোকুণ্ডা ইউনিয়নের তিস্তার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলও প্লাবিত হয়। পুরো জেলায় প্রায় ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে।
এদিকে গত তিনদিন তিস্তার পানি বিপদসীমা উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে শনিবার বিকেলে বিপদসীমার নিচে চলে যায়। তবে পানি কমলেও বন্যা পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি। এখনও ভোগান্তি পোহাচ্ছেন পানিবন্দি মানুষ। পানির নিচে তলিয়ে আছে অধিকাংশ রাস্তা ঘাট। এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি যেতে নৌকা ব্যবহার করতে হচ্ছে। কিছুটা উঁচু বাড়ি-ঘর থেকে পানি নেমে গেলেও ঘরে ও বাইরে জমে আছে কাদা মাটি। ফলে তাদের চলাচলে কষ্ট হচ্ছে। এদিকে এখনও ডুবে আছে অনেক ফসলের ক্ষেত ও পুকুর। পশুপাখি নিয়ে বন্যার্তরা উচু স্থানে অবস্থান নিয়েছেন। অনেকেই উচু স্থানে চুলা জ্বালিয়ে সারছেন রান্নার কাজ। এখনও অনেক বাড়িতে নলকূপ ও টয়লেট পানিতে তলিয়ে আছে। বিশুদ্ধ পানি সংকট ও স্যানিটেশন সমস্যায় পড়েছেন বানভাসি মানুষ।
ডালিয়া পানি উন্নায়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আফসাউদ্দৌলা বলেন, গত ৩দিন থেকে উজানের ঢল ও ভারি বৃষ্টিপাতে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তবে শনিবার বিকেল থেকে বন্যার পানি নেমে যেতে শুরু করেছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ বলেন, আমরা সার্বক্ষণিক বন্যার খোঁজ রাখছি। জেলায় দুর্যোগকালীন ৪৫০ টন চাল ও সাত লাখ টাকা বরাদ্দ আছে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট ইউএনও ও পিআইওর মাধ্যমে ১১০ টন চাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন