আর কদিন পরই ঈদুল ফিতর। এই দিনটিতে পরিবারের সব সদস্য একসঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে। বাড়ির ছোট থেকে বৃদ্ধ বয়সের ছেলেরা একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে যায় ঈদগাহ মাঠে।
কিন্তু এবার জীবিত থেকেও যেন পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে পারছে না সম্প্রতি জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর চিফ ইঞ্জিনিয়ার নওগাঁর এ এস এম সাইদুজ্জামান। ফলে বাবা-মা, সন্তান, স্ত্রী তার স্বামী আর বাচ্চা বাবাকে ছাড়া ঈদ করতে যাচ্ছে।
প্রকৌশলী এ এস এম সাইদুজ্জামানের বাড়ি নওগাঁ শহরের আরজি নওগাঁ এলাকার শাহি মসজিদ এলাকায়। বাবা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল কাইয়ুম। স্বামীকে ফিরে পাওয়ার আশায় প্রহর গুনছেন স্ত্রী মান্না তাহরিন শতধা আক্তার। আর শিশু সন্তান মেহেরিমা সাফরিন জামান ছটফট করছে বাবার বুকে যাওয়ার জন্য। তাই গ্রামের বাড়িতে নীরবতা, নেই ঈদের আনন্দ। এদিকে ঈদ উপহারসামগ্রী নিয়ে সাইদুজ্জামানের পরিবারে সাক্ষাৎ করেছেন নওগাঁ জেলা প্রশাসক গোলাম মওলা।
তিনি মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) বিকেলে বাড়িতে গিয়ে স্ত্রী, পিতা, মাতা ও শিশু কন্যা সন্তানের খোঁজ নেন। এসময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাইদুজ্জামানের শিশু কন্যার জন্য ঈদের নতুন জামা উপহার দেন জেলা প্রশাসক। এ ছাড়াও রমজানে পরিবারে খাদ্যসামগ্রী উপহার দেন। পাশাপাশি পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি।
গত ১২ মার্চ সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে ভারত মহাসাগর থেকে জিম্মি হন বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর ২৩ জন নাবিক। এদের মধ্যে বন্দি নওগাঁর চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান। জাহাজটি অপহরণের পর থেকে পরিবারের সদস্যরা তার আগমনে পথের দিকে চেয়ে আছেন। ঈদের আগেই সরকার বা জাহাজ মালিকদের পক্ষ থেকে সু-সংবাদের অপেক্ষায় বন্দি সাইদুজ্জামানের বাবা, মা, স্ত্রী ও স্বজনরা।
সাইদুজ্জামানের বাবা আবদুল কাইয়ুম বলেন, আমার ছেলে এবার ঈদে বাড়িতে আসার কথা ছিল। বলছিল ছুটি নিয়ে সবাই মিলে ঈদ করব একসঙ্গে। কিন্তু ভাগ্যের কী পরিহাস ছেলে আমার হাজার হাজার মাইল দূরে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি। মাঝে মাঝে যোগাযোগ করা যাচ্ছে জলদস্যুরা কোনো বাঁধা দিচ্ছে না। আর জাহাজ কোম্পানি ও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে তারা চেষ্টা করছে ফিরিয়ে আনার।
উপহারসামগ্রী গ্রহণ করে তিনি বলেন, জেলা প্রশাসক সরকারের পক্ষ থেকে তাদের পরিবারের প্রতি যে সমবেদনা জানিয়েছেন তাতে তারা সরকারের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা। গতকালও তার ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছে। সেখানে দস্যুরা তাদের সঙ্গে বেশ নমনীয় ব্যবহার করছে। কোম্পানি থেকে জিম্মি জাহাজে ২০টা দুম্বা দেওয়া হয়েছে। ১০টি জিম্মি নাবিকদের আহারের জন্য দেওয়া হয়েছে- বাকি ১০টি দস্যুরা নিয়েছে এমনটাই বলেছেন ছেলে সাইদুজ্জামান। সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণে তারা বেশ খুশি। তবে খুব তাড়াতাড়ি ঘরে ফিরে আসলে পরিবারের বইবে খুশির ঈদ এমনটাই বলছেন তিনি।
সাইদুজ্জামানের মা কোহিনূর বেগম বলেন, আমাদের মাঝে ঈদের আনন্দ নেই। ছেলেকে দ্রুত ফিরে পেতে চাই আমরা। সরকার যেন দ্রুত ঈদের আগেই আমার ছেলেসহ অন্যদের দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয় সেই দাবি ও অনুরোধ করছি। ছেলেকে ছাড়া কিছুই ভালো লাগছে না। কবে ফিরে আমার বুকের ধন।
সাইদুজ্জামানেরর স্ত্রী মান্না তাহরিন শতধা বলেন, ঈদের আনন্দের চেয়ে বড় আনন্দ হবে যদি দ্রুত স্বামীকে ফিরে পেতাম। কবে ফিরবে কিছুই জানি না। সরকার যেন দ্রুত উদ্যোগ নেয়।
তিনি বলেন, সুস্থ সবলভাবে সব জিম্মি যেন ঘরে ফিরে আসে এমনটাই প্রত্যাশা করছি। কোম্পানির পদক্ষেপে যেন কোনো গরিমসি না থাকে এমনটাই চাওয়া আমাদের। তবে জিম্মি উদ্ধারে সরকারের পদক্ষেপ প্রসংসনীয়। জেলা প্রশাসক মহোদয় নিয়মিত আমাদের খোঁজখবর নিচ্ছেন। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি পাশে থাকার জন্য।
জেলা প্রশাসক গোলাম মওলা জানান, ঘটনার পর পরই সাইদুজ্জামানের পরিবার জেলা প্রশাসনে যোগাযোগ করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বরাবর তিনি দরখাস্ত করেছিলেন। সরকার সবসময় এই পরিবারের পাশে থাকবে। সবার পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে জিম্মি নাবিকরা যেন তারাতাড়ি ফিরে আশে পরিবারের মাঝে। জিম্মি নাবিকদের ফিরিয়ে আনতে সব প্রকার কাজ করে যাচ্ছে।
মন্তব্য করুন