পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গাজীপুরে বেশিরভাগ কারখানায় নির্ধারিত সময়ে শ্রমিকদের ঈদের বেতন বোনাস দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বেতন ভাতা পেয়ে খুশি শ্রমিকরা। ভিড় এড়াতে অনেকেই স্বজনদের আগেভাগে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়েছেন। পুলিশ বলছে, কারখানাগুলো শতভাগ যেন ঈদের আগে বেতন ভাতা দেয় সে জন্য তারা কাজ করছেন।
জানা গেছে, শিল্পঅধ্যুষিত গাজীপুরে অন্তত ৫ হাজার শিল্পকারখানা রয়েছে। এসব কারখানার মধ্যে অধিকাংশ তৈরি পোশাক, ডায়িং ও স্পিনিং কারখানা। প্রতিবছর ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন ভাতা নিয়ে ছোটখাটো অসন্তোষ থাকলেও বিজিএমইএ, পুলিশের এর তৎপরতার কারণে এবার বড় সহিংস আন্দোলনের খবর পাওয়া যায়নি। বেশিরভাগ কারখানা মালিক বিজিএমইএ এর দেওয়া নির্ধারিত সময়ে শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিশোধ করেছেন।
শ্রমিকরা বলছেন, আগে ভাগে ঈদের বোনাসসহ বেতন-ভাতা পেয়ে খুশি তারা। সড়কের দুর্ভোগ এড়াতে অনেকেই স্বজনদের গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন।
সাদমা গ্রুপে কর্মরত এক নারী শ্রমিক বলেন, আমাদের ঈদের জন্য ৮ তারিখ ছুটি নির্ধারিত করেছেন কর্তৃপক্ষ। মাসের শুরুতে ঈদ বোনাস পেয়েছি। আমাদের পেমেন্ট মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে হয়। ঈদ ছুটির আগেই বেতন পেয়ে যাব। বোনাসের টাকা দিয়ে কিছু কেনাকাটা করেছি। বাড়ি গিয়ে বাবা, মা আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ভালোভাবে ঈদ উদযাপন করতে পারব।
কারখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বিজিএমইএ ও সরকারের নির্দেশনা মেনে মাসের শুরুতে শ্রমিকদের বেতন ও ঈদ বোনাস পরিশোধ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে সাদমা গ্রুপের পরিচালক সোহেল রানা বলেন, এপ্রিল মাসের শুরুতে কারখানায় কর্মরত ৭ হাজার শ্রমিককে ঈদ বোনাস দেয়া হয়েছে। আগামী ৮ তারিখ কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হবে। এর আগেই বিকাশের মাধ্যমে শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাদের বেতন পেয়ে যাবে।
তুশুকা গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার মাসুম হোসেন বলেন, আমরা আমাদের শ্রমিকদের পাওনা বেতন ভাতা পরিশোধ করে দিয়েছি। এজন্য শ্রমিকরা অত্যন্ত খুশি। কোনো অপ্রীতিকর খবর এখানে নেই। আশা করছি, শ্রমিকরা ঈদ উদযাপন করে ঈদের ছুটির পর আবার কাজে যোগ দেবে।
এবার দু-একটি কারখানায় বিক্ষিপ্ত শ্রমিক অসন্তোষ হলেও বিজিএমইএ বলছে, তাদের তৎপরতায় ঈদের ছুটির আগে সব কারখানায় বেতন ভাতা পাচ্ছেন শ্রমিকরা।
এ ব্যাপারে বিজিএমইএর স্ট্যান্ডিং কমিটি চেয়ারম্যান মো. সালাউদ্দিন চৌধুরী বলেন, বৈশ্বিক মন্দা থাকার পরও কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিশোধে আন্তরিক। ব্যাংকের সহযোগিতা নিয়ে হলেও আমরা সবাইকে বেতন ভাতা দেওয়ার চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে শিল্প পুলিশও সার্ভে করেছে। মালিকদের তারা কাউন্সিলিং করেছে। সুতরাং আশা করি, ব্যাংক ও সরকারের সহযোগিতা নিয়ে আমরা শ্রমিকদের বেতন ভাতা দিতে সক্ষম হবো যাতে তারা সুন্দরভাবে ঈদ উদযাপন করতে পারেন।
শিল্প পুলিশের দাবি, কয়েকটি কারখানায় মালিক পক্ষের বেতন ভাতা পরিশোধে সমস্যা হচ্ছে এমন তথ্য পেয়ে পুলিশ আগেভাগেই কাজ শুরু করেছে। এ জন্য বিজিএমইএসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে যেন ঈদের আগেই শ্রমিকরা তাদের বেতন ভাতা পেয়ে সুন্দরভাবে ঈদ উদযাপন করতে পারেন।
এ ব্যাপারে গাজীপুর-২ শিল্পাঞ্চলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারওয়ার আলম বলেন, প্রাথমিকভাবে গাজীপুরে ৬৮টি কারখানায় বেতন ভাতা পরিশোধ নিয়ে সমস্যা হতে পারে এমন তথ্য পেয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। শ্রমিকরা যেন নির্ধারিত সময়ে বেতন ভাতা পান তা নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি। এক্ষেত্রে বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। প্রয়োজনে প্রণোদনা হোক বা আর্থিক সহায়তা হোক আমরা চাই, শ্রমিকরা যেন তাদের ঈদ উদযাপন করতে পারেন। আমাদের পাশাপাশি মহানগর পুলিশ, জেলা পুলিশও কাজ করছে।
গাজীপুরে বিভিন্ন পোশাক কারখানায় কাজ করেন অন্তত ২২ লাখ শ্রমিক। এদের অধিকাংশই এবার ঈদের ছুটি কাটাতে গ্রামের বাড়ি যাবেন। আর কাঙ্ক্ষিত বেতন ভাতা পেয়ে খুশি মনেই তারা গ্রামে যাবেন বলে মনে করছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ।
মন্তব্য করুন