ঈদের দিন ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্ব স্ত্রী ও শিশু সন্তানকে নিয়ে যাওয়া হলো না গ্রামের বাড়িতে। সদরঘাট লঞ্চ দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানার কর্মী বিল্লাল হোসেনের। ঈদের ভিড় এড়াতে সদরঘাট যান স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে মায়ের সাথে ঈদ করবেন বলে। ঈদের সময় ছুটি পেয়ে বিল্লাল প্রতিবার ঈদ করতে ছুটে যান মায়ের কাছে। তবে স্ত্রী মুক্তা বেগম ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় ঈদের আগে বাড়িতে যাননি। ঈদের দিন যাত্রীর চাপ কম থাকবে বলে এদিন বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কিন্তু কে জানতো এই যাত্রায় হবে পরিবারটি শেষ যাত্রা।
রাজধানীর সদরঘাটে লঞ্চের রশি ছিঁড়ে নিহতদের মধ্যে তারা ৩ জন একই পরিবারের সদস্য । তারা হলেন— আব্দুল খালেক মুন্সির ছেলে ছেলে মো. বেলাল (২৮), মুক্তা (২২) ও তাদের চার বছরের শিশু মাইশা।
তাদের বাড়ি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় ৪ নং দাউদখালী ইউনিয়নের খায়ের ঘটিচোরা গ্রামে। বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) দুপুর ৩ টার দিকে সদরঘাট লঞ্চঘাটের ১১ নম্বর পল্টুনের সামনে এ দুর্ঘটনা হয়। ঈদের দিন বাড়ি ফেরার জন্য চার বছরের শিশু সায়মা তার বাবা বিল্লাল এবং মা মুক্তার সঙ্গে ভোলার চরফ্যাশনগামী এমভি তাসরিফ লঞ্চে উঠতে চেয়েছিল। তবে অন্য একটি লঞ্চের ধাক্কায় শিশুটি বাবা-মায়ের সঙ্গে অনন্তকালের পথে পাড়ি জমিয়েছে।
জানা যায়, সদরঘাটের ১১ নম্বর পন্টুনে এমভি তাশরিফ-৪ ও এমভি পূবালী-১ নামের দুটি লঞ্চ রশি দিয়ে বাঁধা ছিল। দুটি লঞ্চের মাঝখান দিয়ে ফারহান নামের আরেকটি লঞ্চ পন্টুনে ঘাটে নোঙ্গর সময় এমভি তাশরিফ-৪ লঞ্চের রশি ছিঁড়ে যায়। এ সময় লঞ্চে ওঠা অবস্থায় পাঁচজন যাত্রী গুরুতর আহত হন। তাদের উদ্ধার করে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
বেল্লাল হোসেনের মামাতো ভাই শাকিল হোসেন (৪৫) কলবেলাকে জানান, বেল্লাল ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতো। তার স্ত্রী টেইলার্সে দর্জি কাজ করতো। তার মা গ্রামে ভিক্ষা করে সংসার চালাতো। বেল্লাল হোসেন পরিবারের একমাত্র উপার্জন করার ব্যক্তি ছিলো।আজ মায়ের সাথে ঈদ করতে লঞ্চে রওনা দিলে সদরঘাট বসে দুর্ঘটনায় তারা প্রাণ হারায়। তার মা মৃত্যুর খবর শোনার পরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন।
মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল কাইয়ূম কালবেলাকে জানান, তাদের পারিবারিক অবস্থা ভালো না থাকার কারণে আমরা উপজেলা প্রশাসন সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব। ইতিমধ্য ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে যাতে সার্বক্ষণিক তাদের সাথে যোগাযোগ করে মরাদেহ নিয়ে আসা হয়।
মন্তব্য করুন