ঢাকার কেরানীগঞ্জে হাসনাবাদ এলাকার সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক শাখায় বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিট্যান্সের টাকা ব্যাংক কর্মকর্তার স্বাক্ষর হুবহু নকল করে নকল পেমেন্ট স্লিপ ব্যবহার করে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে তুলে নেওয়া চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রোববার (১৬ জুলাই) দুপুরে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ৩৮ হাজার নগদ টাকা, ৮টি রিয়া স্লিপ ও ইসলামী ব্যাংকের ১২টি নকল ক্যাশ মেমো উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান জানান, চক্রটি বিভিন্ন সময়ে দেশের পাঁচটি ব্যাংকের ১১টি শাখা থেকে ৭০ লক্ষাধিক টাকা জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে তুলে নিয়েছে বলে স্বীকার করেছে। সর্বশেষ গত ৩ মে হাসনাবাদ শাখা থেকে ৫ লাখ ৮৬ হাজার টাকা তুলে নিলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করে। মামলার তদন্তে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও তথ্যপ্রযুক্তি সহায়তায় কেরানীগঞ্জ, গাজীপুর ও ডিএমপি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
তিনি আরও জানান, চক্রটির মোট কতজন সদস্য এবং তারা আরও কী ধরনের অপরাধ করেছে, এ বিষয়ে অধিকতর তদন্তের জন্য গ্রেপ্তারদের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে।
গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- মাদারীপুরের শিবচর থানার বাহেরাতলা এলাকার রুস্তম শেখের ছেলে রিপন ওরফে হোন্ডা রিপন (৩৮), রাজধানীর যাত্রাবাড়ী মিরহাজিরবাগ এলাকার আলী মুন্সির ছেলে রহিম মুন্সী (২৮), কেরানীগঞ্জ মডেল থানার রসুলপুর এলাকার মালেক মোড়লের ছেলে মো. জুয়েল (৩১), কেরানীগঞ্জ মডেল থানার জনি টাওয়ার এলাকার লাল মিয়ার স্ত্রী কুলসুম বেগম (৪০) ও গাজীপুর টঙ্গী পূর্ব থানার আবদুল আউয়াল মিয়ার ছেলে আসাদুজ্জামান (৫৫)।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা সূত্রে জানা যায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, কেরানীগঞ্জ সার্কেল শাহাবুদ্দীন কবিরের নেতৃত্বে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার একটি চৌকস তদন্ত টিম সংঘবদ্ধ এই প্রতারকচক্র যারা ব্যাংক কর্মকর্তাদের বোকা বানিয়ে নকল রেমিট্যান্স পেমেন্ট স্লিপ (রিয়া) দেখিয়ে প্রবাসীদের কষ্টার্জিত রেমিট্যান্সের টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে তাদেরকে শনাক্ত করার জন্য ব্যাপক কার্যক্রম শুরু করে। তদন্তকালে জানা যায় হাসনাবাদের সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড শাখা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানের অন্য ব্যাংকের কর্মকর্তারা একইভাবে উক্ত রেমিট্যান্স প্রতারকচক্র দ্বারা প্রতারণার স্বীকার হয়েছেন। তদন্ত দল বিভিন্ন ব্যাংকের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহের পর পর্যালোচনা করে আসামিদের শনাক্ত করে। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আসামিদের গতিবিধি ও অবস্থান শনাক্ত করা হয়। একপর্যায়ে সংঘবদ্ধ এই রেমিট্যান্স প্রতারকচক্রের সদস্যদের চিহ্নিত ও অবস্থান শনাক্তের পর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি শাহজামানের নেতৃত্বে একটি অভিযানিক দল গাজীপুর ও ডিএমপিসহ বিভিন্ন এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে ঘটনায় জড়িত পাঁচজন আসামি রিপন মিয়া ওরফে হোল্ডা রিপন, রহিম মুন্সি, মো. জুয়েল, কুলসুম বেগম ও আসাদুজ্জামান স্বপনকে গ্রেপ্তার করে।
আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা দীর্ঘদিন ধরে সারাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা হতে একইভাবে রিয়া পেমেন্ট স্লিপ জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক কর্মকর্তাদের ধোকা দিয়ে প্রবাসীদের রেমিট্যান্সের টাকা আত্মসাৎ করে আসছিল।
মন্তব্য করুন