দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা প্রচণ্ড দাবদাহ ও অতিরিক্ত লবণাক্ততায় চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন মোংলা উপকূলের চিংড়ি চাষিরা। চলমান তাপপ্রবাহে মৌসুমের শুরুতেই প্রথম দফায় ঘেরে ছাড়া পোনার অধিকাংশই মারা গেছে। দ্বিতীয় দফায় আবারও পোনা ছাড়ার সময় হলেও দাবদাহের কারণে পোনা ছাড়া যাচ্ছে না। তাই আর্থিকভাবে ক্ষতির পাশাপাশি লোন, ধারদেনা পরিশোধ ও পরিবার-পরিজন নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে এখানকার চাষিদের।
অথচ এখানকার উৎপাদিত চিংড়ির সিংহভাগই রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে। প্রচণ্ড দাবদাহের কারণে চিংড়ি উৎপাদন করতে না পারায় মোংলা উপকূল থেকে এবার কমে যাবে চিংড়ি রপ্তানি। এতে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হবে সরকার আর ক্ষতির মুখে পড়েবেন চাষিরা।
উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাব মতে, এখানে রেজিস্ট্রেশন করা বাগদা চিংড়ির ঘেরের সংখ্যা ৫ হাজার ৪৮৬টি। আর গলদা চিংড়ির ঘের রয়েছে ২ হাজর ৯৬০টি। রেজিস্ট্রেশন নাই এমন ঘেরসহ মোট বাগদা ও গলদার ঘেরের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১২ হাজারের মতো ছিল। আর এ সাড়ে ১২ হাজার ঘেরের মধ্যে সাড়ে ৪০০ ঘের কমে গেছে ভরাট ও শিল্পায়নে। প্রতি বছর এখানকার বাগদা চিংড়ির ঘেরে ১০ কোটি ও গলদা চিংড়ির ঘেরে ৩ কোটি পোনা ছেড়ে থাকেন ঘের মালিকরা। সেই পরিমাণে উৎপাদন খুবই কমই।
মোংলার বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের চিংড়ি ঘের মালিক মো. আলামিন জানান, প্রথম দফায় আড়াই মাস আগে আমাদের ঘেরে যে পোনা ছাড়া হয়েছিল সে মাছগুলো কিছুটা বড় হয়েছে, কিন্তু দাবদাহের কারণে ঘেরের পানিতে অতিরিক্ত গরমে লবণাক্ততা বেড়ে তার শতকরা ৯৫ ভাগ মাছই মারা গেছে। এখন দ্বিতীয় দফায় পোনা ছাড়তে পারছি না।
চাঁদপাই ইউনিয়নের ঘের ব্যবসায়ী মোল্লা হানিফ জানান, মোংলা পোর্ট পৌরসভা সিগন্যাল টাওয়ার এলাকার স্লুইসগেট বন্ধ করে রেখেছে। সে কারণে আমরা জোয়ারের সময় পানি তুলতে পারছি না। তীব্র দাবদাহে ঘেরের পানি শুকিয়ে সব মাছ মারা গেছে। এখন আর পোনা ছাড়তে পারছি না। পৌরসভার স্লুইসগেট বন্ধ ও দাবদাহের কারণে মালগাজী এলাকার প্রায় ছয় থেকে ৭০০ চিংড়ি চাষি তাদের মৎস্য ঘেরে পানি তুলতে পারছেন না। এর ফলে মারাত্মক ক্ষতির মুখে এসব চাষি।
মোংলা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অঞ্জন বিশ্বাস জানান, প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে ক্ষতির মুখে পড়ছে এখানকার চিংড়ি চাষিরা। প্রতিদিন অনেক চাষি মাছ রক্ষায় করণীয় জানতে আমাদের কাছে আসছেন। আমরা সবাইকে পরামর্শ দিচ্ছি, তারা যেন ঘেরে পানি বেশি রাখেন। প্রতিনিয়ত ঘেরে জোয়ারের পানি প্রবেশ করাতে বলছি। কারণ বেশি পানি থাকলে দ্রুত পানি গরম হবে না, তাতে মাছের মৃত্যুর হার কিছুটা কমতে পারে।
মন্তব্য করুন