মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের গোপীনাথপুর ইউনিয়নের উজানপাড়া থেকে কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের বৌদ্ধকান্দি পর্যন্ত পদ্মা নদীর তীর রক্ষা কাজে নিম্নমানের জিও ব্যাগ দিয়ে কাজ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব নিম্নমানের জিও ব্যাগে বালি ভর্তি করে নদীর তীরে ফেলার ৪-৫ দিনের মধ্যেই ব্যাগ ছিঁড়ে বালি বের হয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বিভাগের ব্যবস্থাপনায় ফ্লাড অ্যান্ড রিভার ব্যাংক ইরোশন রিস্ক ম্যানেজম্যান্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম প্রকল্পের আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উপজেলার গোপীনাথপুর উজানপাড়া থেকে কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের বৌদ্ধকান্দি পর্যন্ত পদ্মা ভাঙনরোধে নদীর তীর রক্ষায় চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ শুরু হয়। ৯ কোটি ৩২ লাখ ৭ হাজার ২০২ টাকা ব্যয়ে কাজটি পান মেসার্স এমএ এন্টারপ্রাইজ। ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত তিন মাস মেয়াদি কাজের সময়সীমা নির্ধারণ করা হলেও এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
শনিবার (৪ মে) বিকেলে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, পাঁচ স্তরে জিও ব্যাগ ফেলার কথা থাকলেও কোথাও কোথাও চার স্তর আবার কোথাও কোথাও দুই থেকে তিন স্তর জিও ব্যাগ ফেলানো সম্পূর্ণ হয়েছে। এতে তিন এবং চার স্তরের অধিকাংশ জিও ব্যাগই নিম্ন মানের হওয়ায় ব্যাগগুলো ফেটে বালি বের হয়ে আসছে। আর এ ব্যাগগুলো সাপ্লাই দিয়েছে আরএম জিওটেক্স লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি।
একাধিক স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, পনেরো দিন আগে যে জিও ব্যাগ ফেলানো হয়েছে তা ৪-৫ দিন না যেতেই একাই বস্তাগুলো ফেটে বালি বের হয়ে আসছে। ছিঁড়া ব্যাগগুলো কোনো রকমে আলতো টান দিলেই ছিঁড়ে যাচ্ছে। এমন নিম্নমানের জিও ব্যাগ দিয়ে কাজ করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন এলাকাবাসী।
কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের কোটকান্দি গ্রামের বাসিন্দা অ্যাড. মো. নাসির উদ্দীন কালবেলাকে জানান, কাজগুলো আমার কাছে সিস্টেম মতো হচ্ছে না বলে মনে হচ্ছে। একেক জায়গায় ফাঁকা রয়েছে। কোনো জায়গায় দুই লেবেল হয়েছে। আবার কোথাও মাটি উঁচু করে ফেলে রাখা হয়েছে। কাজগুলো কেন জানি সুন্দর মতো হচ্ছে না। কিছু জিও ব্যাগ ফেটে বালিও বের হয়ে যাচ্ছে। আবার অনেক জিও ব্যাগের মুখ খোলা। কেমন জানি অরক্ষিত এবং নিম্নমানের কাজ হচ্ছে।
কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী বনি ইসলাম রূপক কালবেলাকে জানান, এবারের কাজগুলো খুবই নিম্নমানের হচ্ছে। বালি ভরার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাগগুলো ফেটে বালি বের হয়ে যাচ্ছে।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব প্রকৌশলী সানোয়ার হোসেন জানান, জিও ব্যাগগুলো পানি উন্নয়ন বোর্ড দিয়েছে। কিছু খারাপ জিও ব্যাগ আছে, এগুলো আমরা রেখে দিয়েছি। আরও কিছু নতুন ব্যাগ পাঠাবে। তবে রোদের টেম্পাচারের কারণেও কিছু ক্ষতি হয়। রোদের কারণে ক্ষতি হবে বলে আমরা মাটি ফেলে দিছি।
কাজের সময়সীমা নিয়ে তিনি জানান, মে মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। আশা করি, এর মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাঈন উদ্দীন কালবেলাকে জানান, আমি শনিবার সকালে নদী শাসনের চলমান কাজের স্থান পরিদর্শন করেছি। এখানে জিও ব্যাগগুলো আলাদাভাবে টেন্ডার দেওয়া হয়েছিল। এখানে দুটি কোম্পানি ব্যাগগুলো দিচ্ছে। তার মধ্যে আর এম জিওটেক্স লিমিটেডের ব্যাগগুলো বেশি নষ্ট বের হচ্ছে। আমরা কোম্পানিকে নষ্ট ব্যাগগুলোর ভর্তুকির ব্যবস্থা করছি। আর অনাবৃষ্টির কারণে ব্যাগগুলো বেশি নষ্ট হয়েছে। জিও ব্যাগগুলো পানিতে টেকসই হয়। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না থাকায় এ সমস্যাটা আরও বেশি হয়েছে।
মন্তব্য করুন