নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৬ মে ২০২৪, ১১:১৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

উৎপাদন বাড়াতে বিকল্প বঙ্গবন্ধু১০০ জাত উদ্ভাবন

নতুন জাত উদ্ভাবনে কাজ করছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট। ছবি : কালবেলা
নতুন জাত উদ্ভাবনে কাজ করছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট। ছবি : কালবেলা

আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে অল্প সময়ে অধিক পরিমাণ ফসল উৎপাদনে নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনে কাজ করছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট। তারই অংশ হিসেবে নওগাঁর নিয়ামতপুরে ব্রি উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতের নমুনা শস্য কর্তন ও মাঠ দিবস পালিত হয়েছে।

সোমবার (৬ মে) দুপুরে জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার পারইল গ্রামের মাঠে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট রাজশাহী অঞ্চল এর আয়োজন করে। অন্যান্য ধানের চেয়ে দুর্যোগ সহনশীল ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এবং ফলন প্রতি বিঘাতে ৩-৪ মণ বেশি হওয়ায় খুশি কৃষকরা।

উচ্চ ফলনশীল জাতের নমুনা শস্য কর্তন ও মাঠ দিবসে প্রধান অতিথি হিসেবে শস্য কর্তনের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর। এছাড়া কৃষকদের মাঝে এ জাতের ধান চাষাবাদ করতে সমাবেশ করা হয়েছে।

সমাবেশে রাজশাহী ব্রি আঞ্চলিক কার্যালয় প্রধান এবং প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ফজলুল ইসলাম হকের সভাপতিত্বে রাজশাহী আঞ্চল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মাহমুদুল ফারুক, নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন।

নিয়ামতপুর উপজেলার পাড়ইল গ্রামের মাঠে দুলছে সোনালি ধান। যেখানে বাতাসে দুলছে অধিকাংশ জিরাশাইল ও কাটারিভোগ অন্যান্য জাতের ধান। তবে এ গ্রামের মাঠে ১৯০ বিঘা জমিতে ৪০ জন কৃষক ব্রি উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতের বঙ্গবন্ধু ধান ১০০, ব্রি-১০২, ১০৪ ও ১০৫ চাষাবাদ করেছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট রাজশাহী অঞ্চল থেকে পার্টনার প্রকল্পের অর্থায়নে কৃষকদের উদ্বৃদ্ধ করা হয়েছে।

এসব ধান বিশেষ করে জিরাশাইল ধানের চেয়ে দুর্যোগ মোকাবিলা ও খরা সহিষ্ণু। জীরাশাইল যেখানে বিঘাপ্রতি ২৪-২৬ মণ, সেখানে উন্নত এ ধানের ফলন বিঘাপ্রতি ২৬-৩০ মণ। বিঘাতে ৩-৪ মণ ফলন বেশি, চাল সরু ও চিকন, জিংক সমৃদ্ধ এবং সুগন্ধি চালের মতো। এর জীবনকাল বীজতলা থেকে শুরু করে কাটা-মাড়াই পর্যন্ত প্রায় ১৪০ দিন। জীবনকাল কম হওয়ায় কৃষকদের মাঝে চাষাবাদে আগ্রহ বেড়েছে।

কৃষক আরিফুজ্জামান আরিফ বলেন, বিগত বছরগুলোতে আমরা জিরাশাইল ও কাটারিভোগ ধানের আবাদ করতাম। তবে এ বছর নতুন জাতের ব্রি-১০২ ধান ১০ বিঘাতে আবাদ করেছি। খরচ ও পরিচর্চা অন্যান্য ধানের মতোই। আশা করছি, বিঘাতে ৩০-৩৩ মণ ফলন পাব।

কৃষক ইফরেখারুল ইসলাম বলেন, নতুন জাতের ধান চাষাবাদের প্রতি কৃষকদের অনীহা। কারণ নতুন জাতে কোনো ধরনের ফলনের বিপর্যয় হলে ক্ষতিগ্রস্তের মধ্যে পড়তে হবে। নতুন জাতের ধান চাষাবাদের জন্য সংশ্লিষ্ট অফিসে যোগাযোগ করেছিলাম। পরে কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে অনেকেই এ নতুন জাতের ধান চাষাবাদে আগ্রহ প্রকাশ করেন। শুরুতে আমরা কৃষকদের মাঝে সাড়া জাগাতে অল্প পরিমাণ জমিতে চাষাবাদ করেছি। এখন অনেকেই এ জাতের ধান চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। এসব জাতের জীবনকাল বীজতলা থেকে শুরু করে কাটা-মাড়াই পর্যন্ত প্রায় ১৪০ দিন। জীবনকাল কম হওয়ায় কৃষকদের মাঝে চাষাবাদে আগ্রহ বেড়েছে।

কৃষক আব্দুস সাত্তার বলেন, আমাদের এলাকায় নতুন জাতের ধানের আবাদ করা হয়েছে। ফলন দেখছি ভালো হয়েছে। এছাড়া রোগবালাইয়ের পরিমাণ কম ও কোনো ধরনের ঝড় ও বাতাসে হেলে পড়ছে না। কারণ বাতাসে হেলে পড়লে ফলন কম হয়। সেদিক দিয়ে বিবেচনা করলে এ ধানের কোনো সমস্যা দেখছি না। ফলন ভালো দেখে এসব ধান চাষাবাদে আগ্রহ বাড়ছে। তবে পর্যাপ্ত পরিমাণ বীজ সরবরাহ করা গেলে আমাদের মতো অনেক কৃষক চাষাবাদ করবে এবং লাভবান হতে পারবে।

রাজশাহী অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. মাহমুদুল ফারুক বলেন, উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষাবাদে বীজতলা তৈরি থেকে শুরু করে জমিতে ধানের চারা রোপণ ও পরিচর্চা বিষয়ে কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আর কৃষকদের হাড়ভাঙা পরিশ্রমে মিলেছে কাঙ্ক্ষিত ফলন। উত্তরাঞ্চলের মধ্যে নওগাঁ জেলা শস্যভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত। স্থানীয় কৃষকরা যেসব জিরাশাইল ধানের আবাদ করছেন তার বিকল্প হিসেবে এ চার জাতের উন্নত ফলনশীল ধান।

তিনি বলেন, অন্যান্য ধানের তুলনায় এ জাতের উচ্চতাও বেশি এবং ঝড় ও বাতাসে হেলে পড়ে না। দুর্যোগ মোকাবিলা ও খরাসহিষ্ণু। আগামীতে এ জাত আরও সম্প্রসারিত হবে বলে মনে করছি। গোখাদ্য হিসেবে এ খড় কৃষকদের জন্য সুবিধা দিবে।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর বলেন, খাদ্য ঘাটতি মেটানোসহ আমদানিনির্ভরতা কমাতে কম সময়ে অধিক সফল উৎপাদন করতে উন্নত জাতের উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। যেখানে কৃষকরা লাভবান হওয়ার পাশাপাশি পুষ্টির জোগান দিতে সক্ষম। কৃষকদের উদ্বৃদ্ধ করতে এবং তাদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কাজ করছে।

তিনি বলেন, উন্নত এ জাত স্থানীয় জিরাশাইল ধানের চেয়ে বিঘাপ্রতি ৩-৪ মণ ফলন বেশি। বঙ্গবন্ধু ধান১০০ এবং ব্রি ধান১০২ উচ্চ ফলনশীল ও জিংক সমৃদ্ধ। এছাড়াও ব্রি ধান১০৪ সুগন্ধি ও বাসমতি আকারে। যা পোলাও/বিরিয়ানির চাল হিসেবে রপ্তানি করা যাবে এবং স্থানীয় জিরাশাইলের চেয়ে বাজার মূল্যও বেশি পাওয়া যাবে। ব্রি ধান১০৫ ডায়াবেটিস রাইচ হিসেবে চাষাবাদ করে ডায়াবেটিস রোগীদের ভাত খাওয়ার সুযোগ তৈরির পাশাপাশি কৃষক আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কেন এত সময় লাগছে অনুসন্ধানে

টানা চারটি লিগ জয়ীদের এলিট ক্লাবে ম্যানসিটি

হেলিকপ্টার পাওয়ার বিষয়ে যা জানাল রেড ক্রিসেন্ট

রাইসির সঙ্গে হেলিকপ্টারে আর যারা ছিলেন

উন্নয়নের নামে রাতের আঁধারে শাহবাগে গাছ কাটার অভিযোগ

সবশেষ বিহারে ছিলেন এমপি আনার

‘অভিবাসী কর্মীদের জন্য আরও টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণে কাজ করছে সরকার’

ইরানের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিখোঁজ, যা বলছে যুক্তরাষ্ট্র

স্বামীর মোটরসাইকেলের চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে নারীর মৃত্যু

তবুও প্রার্থী হলেন সেই নাছিমা মুকাই 

১০

গাজীপুরে কারখানার ১০ তলার ছাদ থেকে লাফিয়ে নারী শ্রমিকের মৃত্যু

১১

রাজশাহীতে আগুনে পুড়ে ছাই ১০ বিঘার পানের বরজ

১২

বিয়েবাড়ি থেকে কনের পিতাকে তুলে নিয়ে টাকা দাবি

১৩

ঠাকুরগাঁওয়ে নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর , এলাকায় উত্তেজনা

১৪

ঈশ্বরদীতে ফেনসিডিলসহ রেল নিরাপত্তা বাহিনীর সিপাহি আটক

১৫

এমপি আনোয়ার খানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ওসিকে নির্দেশ

১৬

উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ১১৬ কোটিপতি প্রার্থী : টিআইবি

১৭

রাইসির জন্য দোয়ার আহ্বান

১৮

‘শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সুদৃঢ় হয়েছে’ 

১৯

প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা সিটির কাছেই থাকল

২০
X