সিলেটের আরেকটি কূপে গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। খননকাজ শেষে সিলেটের কৈলাশটিলা গ্যাসক্ষেত্রের ৮নং কূপে গ্যাস সন্ধান পাওয়ার কথা জানিয়েছে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল)। এ নিয়ে গত সাত মাসে সিলেটের চারটি কূপে গ্যাসের সন্ধান মিলল।
বিষয়টি নিশ্চিত করে এসজিএফল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, গত বছরের জানুয়ারি থেকে কৈলাশটিলার ৮নং কূপে খননকাজ শুরু করে বাপেক্স। কূপের ৩ হাজার ৪৪০ থেকে ৫৫ হাজার ফুট গভীরতায় গ্যাস পাওয়া গেছে। এখন দৈনিক ২১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পরীক্ষামূলকভাবে উত্তোলন হচ্ছে। ৩ মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ উত্তোলন শুরুর আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এসজিএফল সূত্রে জানা যায়, প্রাকৃতিক সম্পদের সমৃদ্ধ আধার হিসেবে পরিচিত সিলেটে গত বছর থেকেই কূপ অনুসন্ধান ও খননের কাজ চলমান রেখেছে সিলেট গ্যাসফিল্ড কর্তৃপক্ষ। তারই অংশ হিসেবে ২০২৩ সালের প্রথম দিকে কৈলাশটিলা ৮ নম্বর কূপে খননকাজ শুরু হয়। প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকা খরচে এই কূপ খনন করা হয়।
জানা যায়, সিলেট গ্যাসফিল্ড লিমিটেডের উৎপাদনে থাকা কূপগুলো থেকে এখন প্রতিদিন জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। চলতি বছরের মধ্যে আরও কয়েকটি প্রকল্পের কাজ শেষ করে তারা সেই উৎপাদনকে ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুটে নিয়ে যেতে চায়। আর সরকারের বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী ২০২৫ সালের মধ্যে সকল কাজ শেষ করতে পারলে শুধু এই কোম্পানি থেকে প্রতিদিন জাতীয় গ্রিডে ২৫০ মিলিয়ন গ্যাস যুক্ত করা সম্ভব বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে গত ২৭ জানুয়ারি সিলেট গ্যাসফিল্ডের আওতাধীন রশিদপুরের ২নং কূপে গ্যাসের নতুন স্তরের সন্ধান মেলে। যার পরিমাণ প্রায় ১৫৭ বিলিয়ন ঘনফুট।
তারও আগে গত ২৬ নভেম্বর দেশের সবচেয়ে পুরোনো গ্যাসক্ষেত্র হরিপুরের ১০ নম্বর কূপে গ্যাসের সন্ধান মেলে। খননকাজ শেষে ওইদিন গ্যাস প্রাপ্তির তথ্য নিশ্চিত করে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল)।
গত বছরের জুনে এই কূপ খননকাজ শুরু হয়। ১৪৯ কোটি টাকায় সিলেট-১০ নম্বর কূপ খনন করে চীনা কোম্পানি সিনোপেক। কূপটিতে প্রায় ৫০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদ রয়েছে বলে জানিয়েছে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস কর্তৃপক্ষ। আর ২২ নভেম্বর সিলেটের কৈলাশটিলায় পরিত্যক্ত ২নং কূপ থেকে গ্যাস জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়। এখান থেকে দৈনিক ৭০ লাখ ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হচ্ছে জাতীয় গ্রিডে।
সিলেটের হরিপুরে প্রথম গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায় ১৯৫৫ সালে। এরপর আবিষ্কার হতে থাকে একের পর এক গ্যাসক্ষেত্র। বর্তমানে এসজিএফএল-এর আওতায় পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে।
সেগুলো হলো- হরিপুর গ্যাসফিল্ড, রশীদপুর গ্যাসফিল্ড, ছাতক গ্যাসফিল্ড, কৈলাশটিলা গ্যাসফিল্ড ও বিয়ানীবাজার গ্যাসফিল্ড। এর মধ্যে ছাতক গ্যাসফিল্ড পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। বাকিগুলোর মধ্যে ১৪টি কূপ থেকে বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ১০৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে।
জানা যায়, জ্বালানি সংকট নিরসনে গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে দেশের ৪৬টি কূপ অনুসন্ধান, খনন ও পুনঃখননের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। ২০২৫ সালের মধ্যে এসব খননকাজ শেষ হওয়ার কথা। এতে ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এসজিএফএল-এর আওতাধীন ১৪টি কূপ খনন ও পুনঃখননের কাজ চলছে। সিলেটের ১৪ কূপের মধ্যে তিনটির খনন কাজ থেকে ২০২২ সাল থেকে উৎপাদন শুরু হয়। ২০২৩ সালে আরও একটি থেকে উৎপাদন শুরু হয়।
২০২২ সালে সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের (এসজিএফএল) আওতাধীন সিলেট-৮, কৈলাশটিলা-৭ ও বিয়ানীবাজার-১ নামে তিনটি পরিত্যক্ত কূপ পুনঃখনন করা হয়। এসব কূপ থেকে দৈনিক ১৬ থেকে ১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় সঞ্চালন লাইনে সরবরাহ করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন