ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় আউটার বেড়িবাঁধ না থাকায় নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পানি হলেই নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যায়। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’-এর প্রভাবে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কায় উপকূলীয় চরচান্দিয়া, চরদরবেশ ও সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা ও মৎস্য খামারিরা।
ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস, জোয়ার-ভাটা এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপকূলীয় এলাকার স্বাভাবিক ঘটনা। আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবের ফলে এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়েই চলছে। এসব দুর্যোগের কবল থেকে উপকূলবাসীকে রক্ষা করতে বেড়িবাঁধ এবং বনায়নের মাধ্যমে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়।
সোনাগাজী উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দাদের বর্ষা মৌসুম এবং বিভিন্ন দুর্যোগকালে চরম আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। প্রতিবছর ভরা পূর্ণিমা, অমাবস্যায় সাগর ও নদ-নদীতে জোয়ারের পানির উচ্চতা অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। ফলে সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয় ওই সব উপকূলীয় এলাকা। বড় ফেনী নদী ও ছোট ফেনী নদীর কূলে প্রায় ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার অংশে কোনো বেড়িবাঁধ নেই। বেড়িবাঁধ না থাকায় নদীতে জোয়ার সৃষ্টির ফলে জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যায় এসব এলাকার মানুষের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ফসলের খেত ও মৎস্য ঘের।
উপকূলীয় সোনাগাজী উপজেলার চরদরবেশ, চরচান্দিয়া ও সোনাগাজী সদর ইউনিয়নের চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের গ্রামগুলোকে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা করার জন্য কোনো প্রতিরক্ষা বেড়িবাঁধ নেই। যার কারণে বছরের পর বছর ছোট-বড় সব ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলীয় এ অঞ্চলের জনসাধারণের জানমাল ও গবাদিপশু (গরু, মহিষ, ভেড়া, ছাগল) ও মাঠের ফসল মারাত্মক ক্ষয়-ক্ষতির সম্মুখীন হয়। প্রতি বছর ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতির মুখে পড়তে হয় উপকূলের বাসিন্দাদের, ঘটে প্রাণহানীও। এত কিছুর পরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কখনো টনক নড়েনি। এখন পর্যন্ত নেওয়া হয়নি উপকূলের মানুষের সুরক্ষার কোনো ব্যবস্থা। আকাশে কালো মেঘ ও সাগরের নিম্নচাপ দেখলেই উপকূলবাসীর বুক ভয়ে কেঁপে ওঠে। বেড়িবাঁধ না থাকায় গোটা উপকূলীয় এলাকা অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে।
দক্ষিণ পূর্ব চরচান্দিয়া গ্রামের মৎস্য খামারি ইকবাল হোসেন জানান, উপকূলীয় এ উপজেলায় বেড়িবাঁধ না থাকায় গত বছর সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের সময় আমার মৎস্য প্রকল্পের ৩টি পুকুরের পাড় ভেঙে প্রায় সত্তর লাখ টাকার মাছ জোয়ারের পানির সঙ্গে ভেসে যায়।
উপকূলীয় চরচান্দিয়া ইউনিয়নের মদিনা বাজার এলাকার জীবন মিয়াজী জানান, ঘূর্ণিঝড়ের মুখে প্রাণ হাতে নিয়ে উপকূলবাসীর বসবাস। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছোটাছুটি। যখন ঘূর্ণিঝড় হয় না তখনো প্রবল জোয়ার ভাটায় নোনা পানি এপাশ-ওপাশ খেলছে। এতে করে বসতভিটা, ফল-ফসলি জমি, ক্ষেত, খামার, লবণের মাঠ, চিংড়িসহ মাছের ঘেরের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এরপরও বেড়িবাঁধ হয় না সোনাগাজীতে।
চরচান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন মিলন জানান, উপকূলীয় এ উপজেলায় আউটার বেড়িবাঁধ না থাকায় সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই। সামুদ্রিক জোয়ারের নোনা পানি অবাধে ফসলি জমিতে প্রবেশ করার কারণে আমাদের ফসল নষ্ট হয়ে যায়। মাছের ঘেরগুলো সাগরের নোনা পানিতে তলিয়ে যায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. কামরুল হাসান বলেন, আউটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করার জন্য আমরা প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। এটি মিরসরাই ইকোনমিক জোনে ভেজার সুপার ডাইকের মতো হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান বলেন, সোনাগাজী একটি উপকূলীয় এলাকা। এখানকার উপকূলীয় মানুষের জন্য আউটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ খুব জরুরি। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক অবগত আছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। আশা করি শিগগিরই ভালো ফলাফল পাব।
মন্তব্য করুন