শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ৪ পৌষ ১৪৩২
ওয়াহিদুর রহমান রুবেল, কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৬ মে ২০২৪, ০৩:১৩ পিএম
আপডেট : ২৬ মে ২০২৪, ০৩:২৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
ঘূর্ণিঝড় রিমাল

মহাবিপৎসংকেতেও সৈকত ছাড়ছেন না পর্যটকরা

ঘূর্ণিঝড় রিমালের তীব্রতা দেখতে সৈকত তীরে ভিড় জমিয়েছেন পর্যটক-দর্শনার্থীরা। ছবি : কালবেলা
ঘূর্ণিঝড় রিমালের তীব্রতা দেখতে সৈকত তীরে ভিড় জমিয়েছেন পর্যটক-দর্শনার্থীরা। ছবি : কালবেলা

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ইতোমধ্যে কক্সবাজার সৈকত ও উপকূলে পানির উচ্চতা বেড়েছে। ঢেউ উপচে পড়ছে তীরে। রিমালের এ তীব্রতা দেখতে সৈকতের তীরে ভিড় জমিয়েছেন কক্সবাজারে অবস্থান করা পর্যটক ও দর্শনার্থীরা। বেলাভূমির লাবণী, সি-গাল, সুগন্ধা, ওশান বিচ ও কলাতলী পয়েন্টে শত শত পর্যটক আবালবৃদ্ধবণিতার উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। অনেকে উপচেপড়া ঢেউয়ের সঙ্গে মিতালি গড়ে গোসলে নামছে। সমানে তাদের উপরে নিরাপদ স্থানে উঠে আসতে তাগাদা দিচ্ছেন ট্যুরিস্ট পুলিশ, জেলা প্রশাসনের বিচ কর্মী ও সৈকতে কাজ করা লাইফগার্ড কর্মীরা।

শনিবার (২৫ মে) বিকেলেই আবহাওয়া অধিদপ্তর সতর্কতা জারি করে বলেছিল, রোববার রিমাল ঘূর্ণিঝড় থেকে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। দুপুর ১২টা থেকে সেভাবেই আচরণ করছে প্রকৃতি। বেড়েছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ঢেউ এবং বাতাসের তীব্রতা। বিপদ বোঝাতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে লাল পতাকা টাঙানো হয়েছে। এরপরও নির্দেশনা না মেনে সৈকতে গোসলে নেমেছেন অনেক পর্যটক ও দর্শনার্থীরা।

সৈকতের কলাতলী, সুগন্ধা ও লাবণী পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, টানা কয়েক মাস তীব্র তাপদাহে ভোগা স্থানীয়রা একটু শীতলতার আশায় এবং ঘূর্ণিঝড় রিমালের তীব্রতা দেখতে সৈকতে এসেছেন স্থানীয়রা। পাশাপাশি অনেক পর্যটকও এসে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। মাঝারি বৃষ্টিপাতে দাঁড়িয়ে শীতলতা অনুভবের পাশাপাশি সমুদ্র পরিস্থিতিও দেখছেন তারা।

মানিকগঞ্জ থেকে আসা পর্যটক দম্পতি ইব্রাহিম সায়মন বলেন, শনিবার কক্সবাজার এসে বিকেলে জানতে পারি ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসছে। তিন দিনের ছুটি পেয়ে পরিবার নিয়ে এসেছি, এখন চলেও যেতে পারছি না। আবার কবে আসব নিশ্চয়তা নেই। তাই বৃষ্টি পেয়েই গোসলে নামতে এসেছি। তবে, অন্য দিনের চেয়ে ঢেউ অনেক বড় বলে মনে হচ্ছে। বিচ কর্মী ও লাইফগার্ডরা পানিতে নামতে দিচ্ছেন না। গোসল করতে ব্যর্থ হলে খরচটা জলে যাবে।

স্থানীয় ইব্রাহিম খলিল বলেন, বিগত কয়েক মাস চরম তাপদাহে জীবন ওষ্ঠাগত ছিল। রোববার দুপুর হতে একটু বৃষ্টির দেখা পেয়েছি। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কী হচ্ছে তা দেখতে এসেছি। তবে, সমুদ্রে নামছি না। পাশাপাশি সবাইকে সতর্কতা অবলম্বন করতে উৎসাহ দিচ্ছি। কারণ নির্দেশনা না মানলে বিপদাপন্ন হতে হবে। সমুদ্রের বড় ঢেউ সত্যিই উপভোগ্য।

লাইফগার্ড রিফাত ইসলাম বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেকে এক স্থানে বাধা দিলে অন্য স্থান দিয়ে নামছেন। রূঢ় আচরণও করা যাচ্ছে না। বিপৎসংকেত বুঝাতে লাল পতাকা টাঙানো হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের ১১ নম্বর বুলেটিনে, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ৯ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, দুর্যোগের আভাস পেয়েই জেলায় ৬৩৮টি সাইক্লোন সেন্টার খুলে দেওয়া হয়। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী জরুরি মোকাবিলায় জিআর নগদ দুই লাখ ৭৫ হাজার টাকা, দুর্যোগ মোকাবিলায় ব্যবস্থাপনা তহবিলের ১৮ লাখ ২৩ হাজার ৪৪৮ টাকা, ৪৮৬ টন চাল মজুত রাখা হয়। খোলা হয়েছে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। দুর্যোগকালীন এ সময়ে মাঠে কাজ করছে ৮ হাজার ৬০০ জন সিপিপি এবং দুই হাজার ২০০ জন রেড ক্রিসেন্ট সদস্য। উপকূলীয় এলাকার মানুষদের নিরাপদ স্থানে নেওয়ার পূর্ব প্রস্তুতি মতে ইউএনওরা কাজ করছে। শনিবার সন্ধ্যায় জরুরি মিটিং শেষ করেই সিপিপি ও অন্য স্বেচ্ছাসেবক টিমগুলো সচেতনতা বাড়াতে উপকূলে মাইকিং নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। মাঠে রয়েছে সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক টিম, রেড ক্রিসেন্ট, স্কাউট, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টরা।

উল্লেখ্য, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপ রিমাল প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। রিমালের প্রভাবে দেশের ১৬ জেলায় ৮ থেকে ১২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ঘূর্ণিঝড় রিমাল নিয়ে ১১ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দেশের প্রায় প্রতিটি বিভাগে বৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়ে রোববার (২৬ মে) সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাতের মধ্যে রিমাল বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। ইতোমধ্যে পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর এবং কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

ঘটনাপ্রবাহ: ঘূর্ণিঝড় রিমাল
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

হাদি হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের বিক্ষোভ

হাদির মৃত্যুর ঘটনায় ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ

ওসমান হাদির মৃত্যুতে নাহিদ ইসলামের আবেগঘন প্রতিক্রিয়া

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার ভবনে হামলা-ভাঙচুর

ওসমান হাদিকে ‘বাংলার বীর’ হিসেবে স্বীকৃতির দাবি

হাদির মৃত্যুতে এনসিপির শোক

আমাদেরও যেন শহীদি মৃত্যু হয়: মাহফুজ আলম

ওসমান হাদি কখন মারা যান, জানালেন ডা. আহাদ

রাতে নিরাপত্তার স্বার্থে ওসমান হাদির পরিবারকে কথা না বলার নির্দেশ

ওসমান হাদির মৃত্যুতে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার শোক

১০

ওসমান হাদির মরদেহ দেশে ফিরবে যখন

১১

ওসমান হাদির সন্তান ও পরিবারের দায়িত্ব নেবে সরকার : প্রধান উপদেষ্টা

১২

ওসমান হাদির মৃত্যুতে তারেক রহমানের প্রতিক্রিয়া

১৩

হাদির মৃত্যুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের গভীর শোক

১৪

হাদির মৃত্যুতে যে ঘোষণা দিলেন প্রধান উপদেষ্টা

১৫

ওসমান হাদির মৃত্যুতে ভিপি সাদিক কায়েমের প্রতিক্রিয়া

১৬

শুক্রবার সারাদেশে বাদ জুমা বিশেষ দোয়া ও কফিন মিছিল

১৭

ভোট নিয়ে টকশোতে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, চেয়ার ভাঙচুর

১৮

‘হাদির খুনিদের ফিরিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত ভারতীয় হাইকমিশন বন্ধ থাকবে’

১৯

তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে যুবদলের আনন্দ র‍্যালি

২০
X