বাগেরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৪, ০৫:০৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
ঘূর্ণিঝড় রিমাল

বাগেরহাটে পানিবন্দি কয়েক হাজার মানুষ

বাগেরহাটে পানিবন্দি রয়েছে কয়েক হাজার পরিবার। ছবি : কালবেলা
বাগেরহাটে পানিবন্দি রয়েছে কয়েক হাজার পরিবার। ছবি : কালবেলা

বাগেরহাটে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিপাত হচ্ছে বাগেরহাটে। এতে জেলার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি ২ থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। পানির প্রবল চাপে বেরিবাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। ঝড়ের ফলে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে মৎস্য ঘের। পানিবন্দি রয়েছে কয়েক হাজার পরিবার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাত ১২টার দিকে বাগেরহাটের নদ-নদীগুলোয় স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে চার ফুট বেশি জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে পানগুছি নদীর তীরবর্তী মোড়লগঞ্জ উপজেলা, বলেশ্বর তীরবর্তী শরণখোলা উপজেলা, পশুর নদীর তীরবর্তী মোংলা উপজেলা, রামপাল উপজেলা ও বাগেরহাট সদরের বেশ কিছু গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার লোকালয়ে পানি ঢুকে মানুষের ঘরবাড়ি, চিংড়িঘের তলিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

সোমবার (২৭ মে) সকালে বাগেরহাট সদর উপজেলার মাঝিডাঙ্গা এলাকায় গিয়ে দেখা যায় প্রায় দুই শতাধিক পরিবার পানিবন্দি রয়েছেন। ভৈরব নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে তাদের বাড়িঘর।

স্থানীয় ডেইজি বেগম নামের এক নারী জানান, রাত দুটার দিকে মাঝিডাঙ্গা-বাজনদার বাড়ির মোড় সড়কের ওপর দিয়ে পানি এসে আমাদের এলাকা তলিয়ে যায়। এর আগেই সড়কের বিপরীত পাশে থাকা শতাধিক পরিবারের বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছিল। পানিতে আমাদের গ্যারেজের ৪টি ইজিবাইক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রান্না করেও খাওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। সেখানেও পানি।

শুধু মাঝিডাঙ্গা নয়, এ উপজেলার চরগ্রাম, ভদ্রপাড়া, সুলতানপুর, ভাঙনপাড়, রহিমাবাদ, ডেমাসহস অন্তত ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার মানুষ একধরনের পানিবন্দি রয়েছেন।

এদিকে শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়নের রাজৈর এলাকায় বেরিবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। যার ফলে ওই এলাকার ৫ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পেড়েছেন। এ ছাড়া একই উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের বগি ও চালিতাতলা এলাকায় রিং বেরিবাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করে অন্তত ৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

এ ছাড়া মোরেলগঞ্জ, মোংলা ও রামপাল উপজেলার বেশকিছু এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এসব এলাকায় অন্তত ২০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে স্থানীয়রা আমাদের জানিয়েছেন।

তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, বাগেরহাট সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর, গোপালকাঠি, মোরেলগঞ্জের শ্রেণিখালি, পঞ্চকরণ, শরণখোলার রাজৈর এলাকায় বেরিবাঁধ উপচে এবং ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। এসব এলাকার প্রায় ১৭শ মিটারের বেশি জায়গা থেকে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। তবে বাস্তবিক অর্থে এর পরিমাণ আরও বেশি।

এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে জেলার কয়েক হাজার মৎস্য ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রামপাল উপজেলার চাষিরা।

রামপাল উপজেলার বাইনতলা চাকশ্রী গ্রামের চিংড়িচাষি শেখ নূর ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে নদী ও খালে জোয়ারের পানি তিন থেকে চার ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। রাতে জোয়ারের পানির চাপে ঘেরের বাঁধ ভেঙে প্রায় এক লাখ টাকার চিংড়ি মাছ ভেসে গেছে।

ঘের ব্যবসায়ী ডালিম শেখ বলেন, জোয়ারের পানির চাপ এতটাই প্রবল ছিল যে মুহূর্তের মধ্যেই আমার ঘের পানিতে তলিয়ে যায়। রাত থেকে আমার ঘেরসহ এখানকার প্রায় অর্ধশত মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে আছে।

মোরেলগঞ্জ উপজেলার বারইখালি এলাকার আব্দুল্লাহ আল জিমি বলেন, বাতাসে আমাদের বাড়ির গাছগাছালি ভেঙে গেছে। এলাকা পুরো পানিতে তলিয়ে গেছে। আমার ঘরের ভিতরে প্রায় এক ফুট পানি এবং বাইরে তিন চার ফুট পানিতে তলানো। কাল রাতে আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েছিলাম কিন্তু ঘরবাড়ি রক্ষার জন্য আশ্রয়কেন্দ্র থেকে চলে এসেছি। রান্নাবান্না না করতে পেরে কাল রাত থেকে এখনো খাওয়া-দাওয়া হয়নি।

শরণখোলার তাফালবাড়ি এলাকার নাজমুল জানান, গতকাল রাত থেকে সকাল পর্যন্ত একটানা বাতাস হচ্ছে। এই বাতাসে আমাদের বেশ কিছু গাছ পড়ে গেছে। আমাদের এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কও পাওয়া যাচ্ছে না। সব মিলে আমরা খুব আতঙ্কের মধ্যে আছি। তাফালবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রাজিব বলেন, ঘূর্ণিঝড় এর প্রভাবে আমার ইউনিয়নের চালিতাবুনিয়া গ্রামের একটি বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে ওই এলাকা তিন থেকে চার ফুট পানিতে প্লাবিত রয়েছে। সেখানকার মানুষরা অনেকেই আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে তবে এখনো অনেকে নিজেদের বাড়িঘরে অবস্থান করছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে এখনো প্রচণ্ড বাতাস ও বৃষ্টি হচ্ছে।

এদিকে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে গোটা সুন্দরবন। করমজলসহ বনের উঁচু এলাকাগুলোও দুপুরের জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে এতে এখনো বন্যপ্রাণীর ক্ষতির কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে নদীতে ভাটা আসলেও পানি কমছে না। ফলে দুপুরের জোয়ারে আবারো নতুন করে বিস্তৃত অঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহা. খালিদ হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত ৪০০০ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত ও দশ হাজার মানুষ পানিবন্দি আছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

ঘটনাপ্রবাহ: ঘূর্ণিঝড় রিমাল
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

যুক্তরাষ্ট্রের হাত ধরেই শুরু হয়েছিল ইরানের পরমাণু কর্মসূচি

চাল না কিনলে জাপানে নতুন করে শুল্কের হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের

হলি আর্টিসান হামলার আজ ৯ বছর

সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফরের ৮৬তম জন্মবার্ষিকী আজ

কারাগারে যেমন কাটছে মমতাজের

পাকিস্তানে একযোগে হামলা চালাতে চায় ভারত-ইসরায়েল

সুনামগঞ্জ-৩ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করল জমিয়ত

মহররমে বিদআত ও ভ্রান্ত রীতি : যা করণীয়

যশোর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়কের পদত্যাগ

সরকারি চাকরিতে বিপুলসংখ্যক পদ ফাঁকা

১০

দেশের সব ব্যাংকে লেনদেন বন্ধ থাকবে আজ 

১১

০১ জুলাই : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১২

দুপুরের মধ্যে যেসব জেলায় ঝড়বৃষ্টি হতে পারে

১৩

মঙ্গলবার ঢাকার যেসব এলাকায় মার্কেট বন্ধ

১৪

১ জুলাই : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৫

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসে তালা দিলেন বৈষম্যবিরোধী নেতারা

১৬

চাকসু ভবনকে ‘ভাতের হোটেল’ ঘোষণা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের

১৭

৭ দিন ধরে খোঁজ মিলছে না এসএসসি ফলপ্রার্থী রিয়ামনির

১৮

আট মামলার আসামিকে গুলির পর কুপিয়ে হত্যা

১৯

রাসিকের ৮০৬ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন

২০
X