ঢাকার সাভারে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট না দেওয়ায় গ্রামবাসীর চলাচলের রাস্তায় দেয়াল তুলে ৪ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন ভূঁইয়া ও তার জামাতা মো. খাজার বিরুদ্ধে।
রাস্তার মাঝখানে প্রায় ৬ ফুট উঁচু করে ইট দিয়ে দেয়াল নির্মাণ করায় স্থানীয় বাসিন্দা ও স্কুলপড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীসহ রাস্তাটি ব্যবহারকারীরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে।
সরেজমিনে ভাকুর্তা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড মুশুরীখোলা এলাকায় গেলে রবির বাড়ি থেকে শফিকের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় ১০ ফুট চওড়া রাস্তার মাঝখানে ইট দিয়ে গাঁথা দেয়ালটি চোখে পড়ে। স্থানীয়রা বলছেন, এটি মানবতা ও বিবেকবহির্ভূত কাজ। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে এই প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে বলেও জানান তারা।
সাংবাদিকদের দেখে অনেকে এগিয়ে এলেও দখলকারী ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় ভয়ে কথা বলতে রাজি হয়নি অনেকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী এক নারী বলেন, ‘বাবারে আমি কিছু জানি না। কিছুই কইবার পারুম না; কিছু কইলেই আমার ছেলের ওপর তুফান নাইমা আইবো’।
স্থানীয় ইউপি সদস্য রোজিনা বেগম বলেন, গত উপজেলা নির্বাচনে সভাপতির চশমা প্রতীকের প্রার্থীকে ভোট না দেওয়ার অপরাধে সভাপতি চলাচলের রাস্তাটি বন্ধ করে দেন। তাকে চার লাখ টাকা না দিলে তিনি দেয়াল সরাবেন না বলেও জানান।
এলাকাবাসীরা অভিযোগ করেন, গত ২১ মে সাভার উপজেলা নির্বাচনে চশমা প্রতীকের ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার নির্দেশ দেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন ভূঁইয়া। কিন্তু ওই এলাকার স্থানীয় প্রার্থী তালা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করলে এলাকাবাসীরা নিজেদের গ্রামের ছেলেকে ভোট দেন। ফলে নির্বাচনে চশমা প্রতীকের প্রার্থী দুই কেন্দ্র থেকে মাত্র ৭৩ ভোট পায় এবং তালা প্রতীকের প্রার্থী পায় প্রায় ৫ হাজার ভোট। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে নির্বাচনের দুই দিন পর চার লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে সাধারণ জনগোষ্ঠীর চলাচলের পথটি প্রাচীর নির্মাণ করে বন্ধ করে দেন ওই আওয়ামী লীগ নেতা ও তার মেয়ের জামাই।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, নিজেরা টাকা দিয়ে জমি কিনে রাস্তা করার পরও সেই রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে পারছি না। বৃষ্টি কাদার মধ্যে অন্যদিক দিয়ে ঘুরে আমাদের কর্মস্থলে যেতে হয়। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়লে রিকশা-ভ্যান না আসতে পারায় কষ্ট করে তাদের কোলে করে সড়কে নিতে হচ্ছে। সভাপতি ও তার লোকজনের ভয়ে আমরা কোনো কথাও বলতে পারি না। এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হলে সভাপতিকে চার লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ভাকুর্তা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন ভূইয়া বলেন, রাস্তাটি নিয়ে আগে একটি মামলা হয়েছিল। সেখানে হাজিরা দিতে এবং মামলা চালাতে আমার আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়। আমি সেই টাকাই দাবি করছি। কোনো চাঁদা দাবি করিনি।
ভাকুর্তা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মো. লিয়াকত হোসেন বলেন, নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের কাজ রাস্তা তৈরি করা, প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা না। রাস্তা যেই বন্ধ করে থাকুক, জনসাধারণের নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিত করতে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাহুল চন্দ বলেন, চাইলেই জনসাধারণের চলাচলের রাস্তা কেউ বন্ধ করতে পারেন না। রাস্তা বন্ধের বিষয়ে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন