দেশের প্রতিটি অঞ্চলেরই একটি পরিচিত গাছ ঢোলকলমি। অঞ্চলভেদে ঢোলকলমি একেক এলাকায় একেক নামে পরিচিত। এ গাছকে অনেক এলাকায় বেহায়া নামেও ডাকা হয়। নাম যেমনিই হোক তবে ঢোলকলমি ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন না এ রকম লোকের সংখ্যা নেই বললেই চলে। অতিপরিচিত এ গাছটি প্রকৃতি থেকে দিন দিন কমে যাচ্ছে।
এদিকে কুমিল্লার গোমতী নদীর পাড়ে পসরা সাজিয়ে প্রকৃতিকে রাঙিয়ে তুলেছে ঢোলকলমি ফুল। অনাদর ও অবহেলায় বেড়ে ওঠা এসব ঢোলকলমি ফুলের নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে বিমোহিত হচ্ছেন নানা বয়সী মানুষ।
গোমতী নদীর পাড়ে গিয়ে দেখা গেছে, সৌন্দর্য মেলে ফুটে আছে ঢোলকলমি ফুল। এ ফুলের সৌন্দর্যে বিমোহিত হচ্ছেন ফুলপ্রেমীসহ নানা বয়সী মানুষ। নদীর পাড়ের আশেপাশের জমিতেও চোখে পড়ছে এ ফুল। হালকা বেগুনি বা হালকা গোলাপি পাপড়িবিশিষ্ট এ ফুল দেখতে অনেকটা মাইক আকৃতির।
এর মঞ্জরিতে ৪-৮ ফুল থাকে। সবুজের মাঝখানে ফুটে থাকা ফুলগুলো যেন মন ভালো করে দেওয়ার মতো সুন্দর। চলতিপথে ঢোলকলমির বাহারি সাজসজ্জার সৌন্দর্য লুফে নিচ্ছেন সৌন্দর্যপ্রেমীারা।
তবে, এ উদ্ভিদটি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। ৯০ দশকের আগে ঢোলকলমি কুমিল্লা বিভিন্ন উপজেলায় প্রচুর পরিমাণে দেখা যেত। ফসলি জমির বেড়া তৈরিতে, সড়কের পাশের বা জলাশয়ের পাড়ের মাটি ক্ষয়রোধে ঢোলকলমি গাছ লাগানো হতো।
ঢোলকলমি নিয়ে ৯০ দশকের দিকে দেশজুড়ে ভয়ঙ্কর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। ওই সময় গাছ নিয়ে গুজব রটেছিল যে, গাছে থাকা এক ধরনের কালো রঙের পোকা মানুষের সংস্পর্শে এলে মানুষটির মৃত্যু হতে পারে। এ গুজবের ফলে ঢোল কলমির ওপর বড় ধরনের ধাক্কা পড়ে।
এতে ঢোলকলমির অস্তিত্ব সংকটে পড়ে। এ উদ্ভিদটি যেকোনো পরিস্থিতিতে টিকে থাকার ক্ষমতা থাকায় কোথাও কোথাও এখনো উপকারী উদ্ভিদটি চোখে পড়ে।
জানা গেছে, ঢোলকলমি একটি বহুল ব্যবহৃত গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। এটি কনভলভালাসি পরিবারের উদ্ভিদ। এর আদি নিবাস সুদূর দক্ষিণ আমেরিকার পেরু ও বলিভিয়ার পাহাড়ি এলাকায়। এটি যত্ন ছাড়াই নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারে। এরা দ্রুত বংশবিস্তার করে। এক সময় গ্রামবাংলায় ঢোল কলমি গাছ রোপণ করে পুকুর ও জলাশয়ের বেড়া স্থাপনে ব্যবহার করা হতো। এ উদ্ভিদে ঔষধিগুণও বিদ্যমান।
এ ছাড়া উদ্ভিদটি কাগজ তৈরির কারখানায় কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। রান্নাবান্নায় জ্বালানির কাজেও ব্যবহার করা হয় ঢোলকলমি। এ ফুল সারাবছরই কমবেশি ফোটে। তবে বর্ষার সময় এ ফুলটি বেশি দেখতে পাওয়া যায়। কিছু এলাকায় স্থানীয়দের কাছে এটি বেহায়া গাছ নামেই বেশি পরিচিত।
আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে এ গাছের ভেষজ গুণাগুণের কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। ঢোলকলমির গাছের পাতা ফুল ও কষ মানবদেহের চর্মরোগসহ নানা রোগ নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা তাজুল ইসলাম বলেন, একসময় এ উপজেলায় প্রচুর পরিমাণে দেখা যেতো ঢোলকলমি গাছ। এখনো কোথাও কোথাও দেখা যায়। তবে আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে ঢোলকলমি। এ গাছের ফুল দেখতে বেশ সুন্দর। ছোট ছোট শিশুরা ফুল নিয়ে খেলা করে।
তিনি বলেন, আমাদের মতো বড়রাও ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছে। হালকা বেগুনি রঙের এ ফুল সারাবছরই ফুটতে দেখা যায়, তবে বর্ষার সময়টাতে ফুল বেশি দেখা যায় বেশি। সৌন্দর্য চোখে পড়ে বেশি।
দীর্ঘভূমি বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রুহুল আমিন বলেন, ঢোলকলমি প্রকৃতির এক অনন্য ফুল। একসময় গ্রামীণ প্রকৃতিতে এ ফুল অহরহ দেখা যেত। এ গাছে পাখি বসে পোকামাকড় খায়। এতে প্রকৃতির বাস্তুসংস্থান স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সারা বছর ফুটলেও বর্ষার সময় ঢোল কলমি ফুল বেশি ফোটে। ফুলের ঘ্রাণ না থাকলেও মোহনীয় সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউনানি চিকিৎসক ডা. সোহেল রানা কালবেলাকে বলেন, ঢোলকলমি ফুল সৌন্দর্যবর্ধনের পাশাপাশি মানুষের নানা রোগে ভেষজ ওষুধ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। এ গাছের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপদান থাকার কারণে মানবদেহের নানা রোগ নিরাময়ে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
মন্তব্য করুন