চট্টগ্রামের চকবাজার ইসলামী ব্যাংকের লকার থেকে ১৪৯ ভরি স্বর্ণালংকার গায়েবের ঘটনার রহস্য উদঘাটনের তদন্ত পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার (৪ জুন) সকালে অফিসিয়ালি দুদকে ওই ব্যাংকের গ্রাহক ভুক্তভোগী রোকেয়া আক্তার বারীর অভিযোগটি পাঠায় চকবাজার থানা পুলিশ।
অভিযোগে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল মওলা, কোম্পানি সচিব জেকিউএম হাবিবুল্লাহ, চকবাজার শাখার ব্রাঞ্চ ম্যানেজার এস এম শফিকুল মাওলা চৌধুরী ও লকার ইনচার্জ মো. ইউনুসকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। সোমবার রাতে রোকেয়া বারী এই অভিযোগ দায়ের করেন।
চকবাজার থানার ওসি ওয়ালী উদ্দিন আকবর বলেন, লকার থেকে সোনা চুরির অভিযোগের বিষয়ে ভুক্তভোগী রোকেয়া বারী একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি দুদকের শিডিউলভুক্ত হওয়ায় থানায় মামলা রেকর্ড হচ্ছে না। আমরা অভিযোগটি আজকে (মঙ্গলবার) সকালে অফিসিয়ালি দুদকে পাঠিয়েছি।
লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ইসলামী ব্যাংক চকবাজার শাখার একজন হিসাবধারী সেবাগ্রহীতা রোকেয়া বারী। ২০০৬ সাল থেকে তিনি ও তার মেয়ে নাসিয়া মারজুকা যৌথ মালিকানার ওই লকারটি ব্যবহার করছিলেন। ওই লকারে তার পরিবারের সদস্যদের আনুমানিক ১৬০ ভরি স্বর্ণালংকার গচ্ছিত ছিল। ২৯ মে দুপুরে কিছু স্বর্ণালংকার আনার জন্য ওই ব্যাংকে গিয়ে দায়িত্বরত অফিসারের উপস্থিতিতে তিনি লকার খোলা অবস্থায় পান। পরে সেখানে গচ্ছিত ১৬০ ভরি স্বর্ণালংকারের মধ্যে আনুমানিক ১৪৯ ভরি স্বর্ণালংকার চুরি হয়েছে বলে বুঝতে পারেন। ভুক্তভোগী রোকেয়া বারীর অভিযোগ, ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে স্বর্ণালংকার চুরিসহ বিশ্বাস ভঙের এ অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।
দুদক চট্টগ্রাম অফিসের উপপরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত বলেন, চকবাজার থানা থেকে ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ আমরা পেয়েছি। অভিযোগটি ফাইলিং করার কাজ প্রায শেষ পর্যায়ে। বিকেলেই আমরা ঢাকা হেড অফিস বরাবর তদন্ত অনুমোদনের জন্য পাঠিয়ে দেব। হেড অফিস থেকে অনুমোদিত হয়ে আসতে দু-তিন দিনের মতো সময় লাগে। এরপরই আমরা তদন্ত শুরু করব।
শনিবার (১ মে) ব্যাংকের লকার থেকে এবার দেড়শ ভরি সোনা গায়েবের ঘটনা সারা দেশে বেশ আলোচিত হয়। যদিও ব্যাংক কর্তৃপক্ষের দাবি গ্রাহক স্ববিরোধী এবং কিছু বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছেন।
সোনার মালিকের দাবি, এসব সোনা ব্যাংকের কর্মকর্তা, কর্মচারীরাই সরিয়ে ফেলেছেন। চুরি হওয়া ১৪৯ ভরি সোনার মধ্যে রয়েছে ৪০ পিস হাতের চুরি (বড় সাইজ)। যার ওজন ৬০ ভরি। গলা ও কানের ৪টি জড়োয়া সেট। যার ওজন ২৫ ভরি। ১০ ভরি ওজনের একটি গলার সেট। ২৮ ভরি ওজনের ৭টি গলার চেইন। ১৫ ভরি ওজনের ৪টি আংটি। ৩০ জোড়া কানের দুল। যার ওজন ১১ ভরি।
রোকেয়া বারী বলেন, গত ১৬ থেকে ১৭ বছর ধরে চকবাজারের ইসলামী ব্যাংকের একটি লকার ব্যবহার করি। পাশাপাশি আমার নামে একটি অ্যাকাউন্টও রয়েছে। কিন্তু গত বুধবার (২৯ মে) দুপুর দেড়টায় আমি কিছু সোনা লকার থেকে আনতে যাই। এ সময় লকারের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে লকার খুলে দেওয়ার অনুরোধ জানাই। তিনি তার চাবি দিয়ে লকার রুমে দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে আমার জন্য বরাদ্দ রাখা লকার খোলা পাই। পরে আমি বিষয়টি দ্রুত চকবাজার থানার ওসিকে জানাই। তিনি দ্রুত ঘটনাস্থলে যান, দেখতে পান আমার লকারে মাত্র ১০-১১ ভরি সোনা অবশিষ্ট রয়েছে। আমার ধারণা, ব্যাংকের লোকজন এ ঘটনায় জড়িত।
মন্তব্য করুন