এতিম কিশোরটির বয়স মাত্র ১৫ বছর। তারপর আবার মানসিক প্রতিবন্ধী। নানু বাড়িতে অযত্ন-অবহেলায় বেড়ে ওঠা কিশোরটি মানুষের কাছে হাত পেতে ক্ষুধা নিবারণ করে। অথচ এই কিশোরকেই প্রায় ৫০ জন মিলে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি, লাথি-উষ্ঠার পাশাপাশি পিটিয়েছে লাঠি ও রড দিয়ে। এরপর দিয়াশলাইয়ের আগুন আর সিগারেটের ছেঁকা দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে শরীরের চামড়া।
জানা যায়, মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে কিশোর আনোয়ারকে এভাবে মারা হয়েছে। পরে প্রমাণিত হয়, সে মোবাইল চুরি করেনি। স্থানীয় যুবক রাহুলের নেতৃত্বে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য রবিন, বাপ্পি, হৃদয়, দিদার, সানাউল্লাসহ এলাকার বখাটেরা মিলে মেরেছে তাকে। কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর কালবেলার কাছে লোমহর্ষক সেই নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছে মানসিক প্রতিবন্ধী আনোয়ার।
এমন নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন নির্যাতনের শিকার প্রতিবন্ধী ওই কিশোরের বৃদ্ধ নানা আব্দুল কুদ্দুস।
নাতির সঙ্গে ঘটে যাওয়া নির্যাতনের এ ঘটনার বিচার চেয়ে সোমবার (৩ জুন) বিকেলে চৌদ্দগ্রাম থানায় পাঁচজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪-৫ জনের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ (এসডিআর নং-২০৮৯/২৪) দায়ের করেন তিনি।
থানায় দায়েরকৃত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মোবাইল চুরির অভিযোগে আটকে রেখে আলমগীর হোসেন (১৫) নামে এক মানসিক প্রতিবন্ধীকে রোববার (২ জুন) সন্ধ্যার পর থেকে দফায় দফায় নির্যাতন করেন স্থানীয় যুবকরা। নির্যাতন শেষে তাকে বেওয়ারিশ দেখিয়ে ফেনী সদর হাসপাতালে গোপনে ভর্তি করিয়ে চলে আসেন তারা। নির্যাতনের শিকার ওই কিশোর উপজেলার আলকরা ইউনিয়নের ভাজনকরা গ্রামের মৃত খোকন মিয়ার ছেলে।
বাবার মৃত্যুর পর নানার বাড়িতেই বড় হয়েছে সে। ঘটনাটি ঘটেছে একই ইউনিয়নের ভাজনকরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে। পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে সোমবার সকালে ফেনী সদর হাসপাতাল থেকে তাকে উদ্ধার করে চৌদ্দগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে পরিবারের লোকজন।
অভিযুক্ত রাহুল বলেন, ‘আমার সঙ্গে তার কোনো শত্রুতা নেই। ওর বিরুদ্ধে এলাকার অনেকেই চুরির অভিযোগের কথা বলতে শোনা গেছে। তাকে ধরে এলাকার সবাই স্বীকারোক্তি নেওয়ার জন্য মারধর করেছে। আমি না শুধু এ ঘটনায় এলাকার অনেকেই ছিল।’
এ ব্যাপারে আলকরা ইউপি চেয়ারম্যান মাইনউদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘নির্যাতিত কিশোরকে নিয়ে তার নানা ও পরিবারের লোকজন আমার কাছে এসেছিল। আমি তাদের ছেলেটির চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য বলেছি। এ ব্যাপারে আইনি সহায়তা গ্রহণের জন্য তাদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি ত্রিনাথ সাহা বলেন, ‘প্রতিবন্ধী কিশোরকে নির্যাতনের বিষয়ে তার নানা থানায় অভিযোগ দিয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষ দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
নির্যাতনের শিকার কিশোর আনোয়ারকে যারাই দেখছেন, ধিক্কার জানাচ্ছেন। এলাকাবাসী এই নির্যাতনে জড়িত বখাটেদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
মন্তব্য করুন