মেজাজি আর কালো কুচকুচে দেখতে রাজাবাবু। অপরিচিত কাউকে দেখলেই তেড়ে আসে। তখন শান্ত করতে দিতে হয় মালভোগ বা শবরী কলা। মালভোগ কলা রাজা বাবুর প্রিয় খাবার। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে রাজাবাবুকে।
ফ্রিজিয়ান জাতের এ গরুটি কৃষক শামিম হোসেন তার বাড়িতেই সন্তান-স্নেহে পরম যত্নে লালনপালন করছেন গত তিন বছর ধরে। রাজা বাবু নামের ষাঁড়টির ওজন প্রায় ১৬-১৭ মণ। এর দাম ধরা হয়েছে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা।
কৃষক শামিম ও তার স্ত্রী জানান, রাজা বাবুকে বিক্রি করে বন্ধকি জমি ফেরত নেবেন তারা।
উপজেলার ফকিরপাড়া ইউনিয়নের ১নং বুড়াসারডুবী গ্রামের মৃত আছের আলীর ছেলে কৃষক শামীম হোসেন শখ করে একটি ছোট বাছুর কেনেন। তিন বছর ধরে রাজাবাবুকে পরম মমতায় তিল তিল করে নিজ বাড়ির টিনশেড ঘরে বড় করে তুলেছেন শামীম-লিপি দম্পতি। রাজাবাবুকে নিজের সন্তান মনে করেন লিপি বেগম। ভালোবেসে তার নাম রেখেছেন রাজাবাবু। গ্রামের লোকজন রাজাবাবুকে দেখতে তাদের বাড়ি ভিড় করছে।
শান্ত ও মেজাজি প্রকৃতির কালো কুচকুচে রাজা বাবু। রেগে গেলে কারও আটক করার ক্ষমতা নেই। তবে রাজাবাবুর শরীর মালিশ এবং মালভোগ কলা পেলেই শান্ত হয় রাজা বাবু। তাকে শান্ত রাখতেই প্রতিদিন দুই থেকে তিন ঝুঁকি মালভোগ কলার প্রয়োজন। পরিবারের লোকজন ছাড়া অন্য কাউকে দেখলেই রেগে যায় রাজাবাবু। এ সময় শান্ত করতে রাজাবাবুর গায়ে হাত বুলিয়ে দিয়ে শান্ত করতে হয়।
জানা গেছে, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার ফকিরপাড়া ইউনিয়নের ১নং বুড়াসারডুবী গ্রামের কৃষক শামীম হোসেন। এবার কোরবানি ঈদে রাজা বাবুকে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকায় বিক্রি করার আশা করছেন। রাজা বাবুর খাবার হিসেবে প্রতিদিন ৮শ থেকে ১ হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়। কৃত্রিম কোনো কিছু ব্যবহার করা হয়নি। প্রাকৃতিক উপায়ে খৈল, ভুট্টা, ভুসি, কলা, ভাত ও খড়-ঘাস খাইয়ে বড় করা হয়েছে তাকে।
এ বিষয়ে কৃষক শামীম হোসেন বলেন, আমাদের কোনো খামার নেই। শখ করেই ছোট থেকে গরুটিকে লালনপালন করে অনেক বড় করেছি। আগামী কোরবানি ঈদে সঠিক মূল্য যে দেবে আমরা তার কাছেই রাজাবাবুকে দিতে চাই। রাজাবাবুকে বিক্রি করে সে টাকা দিয়ে বন্ধক দেওয়া জমি ফিরে পেতে চাই।
এ বিষয়ে লিপি বেগম বলেন, রাজাবাবুকে সন্তানের মতো বড় করেছি। কেউ যদি আমাদের ওপর সহায় হয়ে সঠিক মূল্য দেয় তাহলে সে টাকা দিয়ে জমি বন্ধক খুলব। মহব্বতের রাজাবাবুকে বিক্রি করতে ইচ্ছে করে না। তবুও অর্থের কারণে তাকে বিক্রি করতে হবে।
স্থানীয় বাবুল হোসেন বলেন, প্রত্যন্ত এলাকায় শামীম ভাই বিশাল গরুটি লালনপালন করছে। এর আগে এলাকায় এত বড় গরু আমরা কোনো দিন দেখিনি। গরুর নাম রাজাবাবুর কথা শুনেই তাকে দেখতে এসেছি।
মন্তব্য করুন