শেরপুরে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে জেলা শহরের টেইলার্সে কর্মরত দর্জি শ্রমিকরা। দাবি আদায়ে গত ৬ দিন ধরে দর্জি শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখেছে। এর ফলে জেলা শহরে ঈদের পোশাক তৈরির অর্ধ শতাধিক কারখানায় কার্যক্রম বন্ধ।
টেইলার্স মালিকপক্ষের দাবি, গত ঈদে তাদের দাবির মুখে মজুরি বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু এবার ঈদকে সামনে রেখে এখন তাদের জিম্মি করছেন দর্জিরা। এতে ঈদ উপলক্ষে যেখানে রাতদিন কর্মব্যস্ততায় মুখর থাকার কথা, সেখানে হঠাৎ ধর্মঘটের কারণে জেলা শহরের বিভিন্ন মার্কেটের টেইলার্সগুলোতে যেন সুনশান নীরবতা।
অপরদিকে ঈদের সময় শার্ট, পেন্ট, পায়জামা ও পাঞ্জানির কাপড়ের দোকানগুলোতে বেচাকেনা বন্ধ করেছে। ফলে গজ কাপড় বিক্রির দোকানগুলো লোকসান গুনছে। চলতি মাসের ৮ তারিখ থেকে কাজ বন্ধ করে দিলেও সমাধানের উদ্যোগ নেই স্থানীয় প্রশাসনের।
দর্জি শ্রমিকরা জানান, তারা কাজ করেন মালিকের দোকানে। কাজের বিনিময়ে মালিকরা তাদের মজুরি দিয়ে থাকেন। তারা যে মজুরি দেয় তাতে তাদের পোষায় না। গত ১৫ দিন আগে থেকে মৌখিকভাবে মালিক পক্ষকে মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে কোনো কাজ না হওয়ায় আন্দোলনে যেতে বাধ্য হয়েছেন তারা।
শেরপুর জেলা দর্জি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. আলাল মিয়া জানান, দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরির দাবি জানিয়ে আসলেও মালিকরা এতে কর্ণপাত করেননি। মালিকরা একটা শার্টের মজুরি নেয় ৪শ টাকা আর আমাদের দেয় মাত্র ১২১ টাকা। এই অল্প টাকা দিয়ে আমাদের সংসার চলে না। আমাদের বেশি দাবি নয়। মাত্র ৫ টাকা থেকে ১০ টাকা বৃদ্ধি করলেই আমরা কাজে ফিরব।
কয়েকজন নারী ক্রেতা জানান, প্রতি বছরই কাপড় কিনে ঈদের আগে নকশা অনুযায়ী পোশাক বানিয়ে নেন তারা। এজন্য শহরের লেডিস টেইলার্সগুলোই ভরসা। তবে এবার দর্জিরা ধর্মঘটে থাকায় কোনো টেইলার্স কাপড়ের অর্ডার নিচ্ছে না। ফলে কাপড় কেনা হলেও তা দিয়ে ঈদের নতুন পোশাক তৈরি করতে পারছে না।
মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা আবুল হোসেন বলেন, প্রতিবছর নতু পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে ঈদের নামাজ পড়ি। এবারও প্রস্তুতি নিয়ে পায়জামা-পাঞ্জাবির কাপড় কিনলাম। কিন্তু কাপড় তৈরি করতে পারছি না। ঈদে নতুন জামা পরতে পারব কি না তা নিয়ে আমি সন্ধিহান।
জেলা পর্যায়ে কর্মরত এক সরকারি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঈদের ছুটি হবার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ি চলে যাব। স্ত্রী ও মেয়ের কাপড় টেইলার্সে পরে রয়েছে। এখন কি করব বুঝতে পারছি না। বাচ্চাদের পছন্দের কাপড় ছাড়া ঈদ ভাবতে পারছি না।
এ বিষয়ে শেরপুর দর্জি মালিক বহুমুখি সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি নেপাল চন্দ্র সরকার ও সাধারণ সম্পাদক মো. মোছা আলম সরকার জানান, শ্রমিকদের ধর্মঘট সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। চলতি বছরের মার্চ মাসের ৯ তারিখে শ্রমিকদের দাবি দাওয়া মেনে নতুন মজুরি নির্ধারণ করা হয়। সেই সময় মালিক ও শ্রমিক পক্ষের লিখিত চুক্তি হয়েছে। সেই চুক্তিতে আগামী ২০২৬ সালের আগে আর মজুরি বৃদ্ধি হবে না বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু হঠাৎ করে কোনো ধরনের নোটিশ না দিয়ে তারা আবার কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। এতে ঈদে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। এভাবে বারবার মজুরি বৃদ্ধি করলে আমাদের দোকান বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
শেরপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আসাদুজ্জামান রওশন বলেন, বিষয়টি আমরা অবগত হয়েছি। আমরা উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে শ্রমিকদের কাজে ফেরানোর চেষ্টা করব।
মন্তব্য করুন