'মাই লর্ড' বা 'ইওর লর্ডশিপ' বলে উচ্চ আদালতের বিচারকদের সম্বোধনের প্রচলিত প্রথা প্রায় তিন বছর আগে বাতিল করেছে রাজস্থান, কলকাতাসহ ভারতের বেশ কয়েকটি হাইকোর্ট। এবার সেই প্রথায় ছেদ টেনেছে বাংলাদেশের একটি হাইকোর্ট বেঞ্চও।
আরও পড়ুন : অনুষ্ঠানে ডেকে আয়োজকরাই অনুপস্থিত, ফিরে গেলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী
মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ ‘মাই লর্ড’ ও ‘ইওর লর্ডশিপ' ব্যবহার বাতিল করে নির্দেশনা জারি করেছেন। ওই বেঞ্চের দরজায় বিশেষ বিজ্ঞপ্তির নোটিশ টানিয়ে দিয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘অত্র বেঞ্চে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিজ্ঞ আইনজীবীদের ‘মাই লর্ড’ ও 'ইওর লর্ডশিপ' এর স্থলে ‘ইওর অনার’ সম্বোধন করার নির্দেশ প্রদান করা হইল।’ ওই বেঞ্চের বেঞ্চ অফিসার মনির হোসেন এ আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘এ নির্দেশ শুধুমাত্র আমাদের এই বেঞ্চের জন্য প্রযোজ্য, অন্য বেঞ্চের জন্য না।’
আরও পড়ুন : কম্বোডিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার সংবাদ দেখে অনেকে আনন্দিত: কাদের
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, বাংলায় ব্রিটিশ উপনিবেশ স্থাপনের সাথে সাথে অন্যান্য অনেক বিষয়ের সাথে এই ‘লর্ড’ শব্দও এখানে আমদানি হয়। যেটা দিয়ে ঊর্ধ্বতন ব্রিটিশ প্রশাসককে সম্বোধন করা হতো। পরবর্তীতে আদালতের শ্বেতাঙ্গ ইংরেজ বিচারকরাও সম্বোধনের ক্ষেত্রে ‘মাই লর্ড’, ‘মি লর্ড’ বা ‘ইয়ুর লর্ডশিপ’ সম্বোধনের আওতায় আসেন। আদালতের আচার ও আনুষ্ঠানিকতায় এই ‘লর্ড’ যুক্ত হওয়ার পেছনে বাংলার প্রজাদের ওপর ব্রিটিশ শাসক ও ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠাই যে মূল উদ্দেশ্য ছিল- তা বলা বাহুল্য। বাংলাদেশের নিম্ন আদালতের বিচারকবৃন্দকে আইনজীবী বা বিচারপ্রার্থীরা এখন আর ‘মাই লর্ড’ ডাকেন না, সম্মানার্থে বিজ্ঞ আদালত, ইওর অনার, বা স্যার নামে সম্বোধন করেন। কিন্তু উচ্চ আদালতের বিচারকবৃন্দকে বাংলাদেশে এখনো মাই লর্ড, মি লর্ড বা ইয়ুর লর্ডশিপ সম্বোধনে ডাকা হয়।
আরও পড়ুন : বিয়ের আসরে ডেকে ধর্ষণ করেন পুলিশ কর্মকর্তা, পরোয়ানা জারি
এই প্রথা ভেঙে আজ বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ ‘ইওর অনার’ সম্বোধনের নির্দেশনা জারি করলেন। ওই বেঞ্চে উপস্থিত আইনজীবী মো. রুহুল আমিন কালবেলাকে বলেন, ‘সকালে আমার একটি মামলা মেনশন করার সময় আদালত বললেন, এখন থেকে 'মাই লর্ড' বা 'ইওর লর্ডশিপ'-এগুলো আর বলবেন না। ব্রিটিশরা ছিল, তারা এগুলো ব্যবহারের প্রচলন করেছেন। এখন এদেশে সবাই প্রজা। এখন আর কোন মাই লর্ড নেই। আপনারা ‘স্যার অথবা ‘ইওর অনার’ বলবেন। এরপর বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ওপেন আদালতে কনিষ্ঠ বিচারপতির কাছে জিজ্ঞাসা করেন- এ ব্যাপারে কোনো আপত্তি আছে কিনা? তখন কনিষ্ঠ বিচারপতিও জ্যেষ্ঠ বিচারপতির সঙ্গে একমত পোষণ করেন। তখন বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন বেঞ্চের কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিক আদেশ দেন, এটা নির্দশনা আকারে দরজায় টাঙিয়ে দিতে।’
মন্তব্য করুন