রাজধানীর মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদকে স্কুলের ত্রিসীমানায় যেতে নিষেধ করেছেন চেম্বার আদালত।
সোমবার (২১ আগস্ট) আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম খন্দকার ধর্ষণ মামলায় মুশতাক আহমেদের জামিন বহাল রেখে এ আদেশ দেন।
অন্য শিক্ষার্থীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে কারণে এ আদেশ দেন আদালত। সেই সঙ্গে গভর্নিং বডির কোনো কাজেও অংশ নিতে পারবেন না তিনি।
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
এর আগে রোববার (২০ আগস্ট) খন্দকার মুশতাক আহমেদকে বিয়ে করা আইডিয়ালের শিক্ষার্থী সিনথিয়াকে তার বাবার জিম্মায় দিতে হাইকোর্টের রিট দায়ের করেন মেয়েটির বাবা।
তার আগে গত ১৭ আগস্ট কলেজছাত্রীকে ফাঁদে ফেলে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় মুশতাক আহমেদকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন দেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে বিশেষজ্ঞদের দিয়ে বোর্ড গঠনের মাধ্যমে ওই ছাত্রীর বয়স নির্ধারণ করতে বলেছেন আদালত। বয়স নির্ধারণ না হওয়া পর্যন্ত ছাত্রীকে সেফ কাস্টডিতে (নিরাপদ হেফাজত) রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
ওইদিন আদালত বলেন, আইডিয়ালের ছাত্রীর বয়স নিয়ে আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষ পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। তাই ভিকটিমের বয়স নির্ধারণ করা জরুরি। বয়স নির্ধারণ না হওয়া পর্যন্ত ভিকটিম ছাত্রী নারী ও সমাজ সেবা অধিদপ্তরের অধীনে সেইফ হোমে (নিরাপদ হেফাজতে) থাকবে।
তার আগের দিন ১৬ আগস্ট বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান এবং বিচারপতি খন্দকার দীলিরুজ্জামান এর হাইকোর্ট বেঞ্চ খন্দকার মুশতাক আহমেদের আগাম জামিন আবেদন শুনতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।
শুনানিতে হাইকোর্ট মুশতাককে ডেকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি কি বিবাহিত? উত্তরে মুশতাক বলেন, হ্যাঁ, তবে সেই সংসার অনেক আগেই ভেঙে গেছে। আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে। এ সময় হাইকোর্ট বলেন, ছাত্রীকে বিয়ে করে নৈতিকতা ভেঙেছেন আপনি।
কলেজছাত্রীকে প্রলোভন ও জোরপূর্বক ধর্ষণের অভিযোগে গত ১ আগস্ট রাজধানীর মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিংবডির দাতা সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদকে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। আর এতে সহযোগী হিসেবে কলেজের অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশেদীকে আসামি করা হয়। ভুক্তভোগী কলেজছাত্রীর বাবা মো. সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
মামলার এজহারে বাদী উল্লেখ করেন, তার মেয়ে মতিঝিল আইডিয়ালের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। আসামি মুশতাক বিভিন্ন অজুহাতে কলেজে আসতেন এবং ভিকটিমকে ক্লাস থেকে প্রিন্সিপালের কক্ষে ডেকে আনতেন। খোঁজখবর নেওয়ার নামে আসামি ভিকটিমকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে প্রলুব্ধ করতেন। কয়েক দিন পর আসামি মুশতাক ভিকটিমকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কুপ্রস্তাব দেন। এতে রাজি না হওয়ায় ভুক্তভোগীকে তুলে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক বিয়ে এবং তাকে ও তার পরিবারকে ঢাকা ছাড়া করবেন বলে হুমকি দেন মুশতাক। এ বিষয়ে বাদী প্রতিকার চাইতে গেলেও কোনো সহযোগিতা করেননি অধ্যক্ষ; বরং আসামি মুশতাককে অনৈতিক সাহায্য করে আসতে থাকেন। এরপর বাদী জানতে পারেন আসামি ভিকটিমকে একেক দিন একেক স্থানে রেখে অনৈতিক কাজে বাধ্য করেছেন এবং যৌন নিপীড়ন করেছেন।
মন্তব্য করুন