বজ্রপাতে প্রাণহানি এড়াতে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, বজ্রপাতে নিহত এবং আহতদের পর্যাপ্ত আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদন দাখিল।
বুধবার (১৪ মে) মানবাধিকার সংগঠন ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাউছারের পক্ষে ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদন দাখিল করেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ সচিব, পরিকল্পনা সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালককে বিবাদী করা হয়েছে।
রিটা আবেদনে বলা হয়, বজ্রপাতে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী বিশেষত কৃষক ও জেলেরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হন। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বজ্রপাতে ১৭৭ জনের মধ্যে ১২২ জনই কৃষক। সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও গাইবান্ধা দেশের সবচেয়ে বজ্রপাতপ্রবণ এলাকা। বজ্রপাতে নিহতের সংখ্যা এখন অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন সাইক্লোন, বন্যা ও ভূমিধসে নিহতের সংখ্যার চেয়ে বেশি। গ্রামীণ এলাকার বিস্তৃত জমি, খোলা মাঠ ও খেলার মাঠ এখন বজ্রপাতের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। যদিও সরকার বজ্রপাতকে ২০১৬ সাল থেকে একটি প্রাকৃতিক বিপর্যয় বলে ঘোষণা করেছে, তবু বজ্রপাতের ফলে হতাহতের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে এখন পর্যন্ত গৃহীত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
আরও বলা হয়, বজ্রপাতে হতাহতের ঘটনা এড়াতে পাশের দেশ নেপাল ইতিমধ্যে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশেও সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করলে বজ্রপাতের ফলে হতাহতের সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব। পদক্ষেপগুলোর মধ্যে প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও সচেতনতা তৈরি, আগাম সতর্কতামূলক টেলিযোগাযোগব্যবস্থা তৈরি, হাওর-বাঁওড় এলাকায় প্রয়োজনীয়সংখ্যক বজ্রপাত আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন, তালগাছ রোপণ, মোবাইলে খুদে বার্তা প্রেরণ, বজ্রপাত নিরোধক যন্ত্রপাতি স্থাপন এবং বজ্রপাত থেকে বাঁচার বিভিন্ন কৌশল লিফলেট আকারে বজ্রপাতপ্রবণ এলাকায় বিতরণ করা উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া বজ্রপাত ও প্রতিরোধসংক্রান্ত যেসব যন্ত্রপাতি ক্রয় করতে হবে, সেসব সরঞ্জাম সহজলভ্য করার লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব বলেন, সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রত্যেক মানুষের জীবনের অধিকার একটি মৌলিক অধিকার। মানুষের জীবন রক্ষায় রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা সাংবিধানিক এবং আইনি দায়িত্ব। একই সঙ্গে বজ্রপাতে নিহত এবং আহতদের প্রয়োজনীয় আর্থিক সুবিধা এবং ক্ষতিপূরণ দেওয়াও রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
স্বাভাবিক অর্থে বজ্রপাত প্রকৃতির একটি অমোঘ নিয়তি হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে আধুনিক গবেষণা এবং প্রযুক্তির বিকাশের ফলে বজ্রপাত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাও আবিষ্কৃত হয়েছে। ফলে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে মানুষের প্রাণহানি এবং ক্ষতি অনেকাংশে কমানো সম্ভব। এই বিষয়ে রাষ্ট্রকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। গবেষণালব্ধ উপাত্ত থেকে দেখা যায়, বজ্রপাতে অধিকাংশ গরিব কৃষক ও জেলেরা আক্রান্ত হয় যেহেতু তারা বিস্তীর্ণ ভূমিতে এবং নদী অঞ্চলে বসবাস করেন এবং পেশায় কর্মরত থাকেন । ফলে রাষ্ট্রের ধনিক সমাজ তাদের কথা একেবারেই ভুলে থাকে। এটি রাষ্ট্রের বৈষম্যমূলক আচরণ।
এর আগে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বিবাদীদের কয়েকবার নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশের জবাব না পেয়ে ওই বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব।
মন্তব্য করুন