আট বছর আগে রাজধানীর গুলশানে ইতালির নাগরিক তাবেলা সিজার হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। ঘটনার এক বছর পর সাত আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু হয়। সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে সাত বছর পার হলেও মামলার বাদী আইসিসিওর কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ হেলেন ভেন ডার বিকের সাক্ষ্য হয়নি। এমনকি তাকে আদালতে উপস্থিতের মাধ্যমে সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন করার ব্যাপারেও কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। এভাবে বছরের পর বছর পার হলেও আলোচিত এ হত্যা মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে ঝুলে রয়েছে। তবে রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, দ্রুত এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করা হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল কালবেলোকে বলেন, ‘এ মামলাটিতে তদন্ত কর্মকর্তার জেরার জন্য দিন ধার্য রয়েছে। এ বছরের মধ্যে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করা হবে। মামলার পরবর্তী কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করে মামলাটি নিষ্পত্তি করা হবে।’
এ সময় ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে মামলার বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণ করবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো এ ব্যবস্থায় কোনো বিচার কার্যক্রম শুরু হয়নি। তবে আমরা এ মামলার বিচারকাজ শেষ করতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুসরণ করব।
আসামি মতিনের আইনজীবী সৈয়দ নজরুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘তাবেলা সিজারের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আসামি মতিনের কোনও সম্পৃক্ততা নেই। তিনি শ্রদ্ধা রেখে প্রতিটি ধার্য তারিখে আদালতে উপস্থিত হয়ে হাজিরা দিয়েছেন। এ মামলার এজাহারের সঙ্গে চার্জশিটের কোনো মিল নেই। এ পর্যন্ত কোনো সাক্ষী মতিনের নামও বলেননি। আদালত নিরপেক্ষভাবে বিবেচনা করলে মতিন খালাস পাবেন।’
মামলাটি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামানের আদালতে বিচারাধীন। বর্তমানে মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। এ পর্যন্ত মামলায় মোট ৭০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। এ মামলার দ্বিতীয় তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) জেহাদ হোসেনের জেরা অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ গত ২১ সেপ্টেম্বর এ মামলার জেরার জন্য দিন ধার্য ছিল। তবে বিচারক ছুটিতে থাকায় সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি। পরে আদালত এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ২৫ অক্টোবর দিন ধার্য করেন।
এ আসামিরা হলেন বিএনপি নেতা এমএ কাইয়ুম ওরফে কাইয়ুম কমিশনার ও তার ভাই আবদুল মতিন, তামজিদ আহমেদ ওরফে রুবেল ওরফে শুটার রুবেল, রাসেল চৌধুরী ওরফে চাক্কি রাসেল, মিনহাজুল আরেফিন রাসেল ওরফে ভাগনে রাসেল, শাখাওয়াত হোসেন ওরফে শরিফ ও মো. সোহেল ওরফে ভাঙারি সোহেল। আসামিদের মধ্যে কাইয়ুম কমিশনার ও ভাঙারি সোহেল এখনও পলাতক রয়েছেন। আসামি আবদুল মতিন জামিনে রয়েছেন। এ ছাড়া অপর চার আসামি তামজিদ, রাসেল, মিনহাজুল ও শাখাওয়াত কারাগারে আটক রয়েছে। তারা এ মামলায় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গুলশান-২ এর ৯০ নম্বর সড়কে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন নেদারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইসিসিও-বিডির কর্মকর্তা তাবেলা সিজার। এ ঘটনায় একই দিন তার সহযোগী আইসিসিওর কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ হেলেন ভেন ডার বিক বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ হত্যা মামলার ২০১৬ সালের ২২ জুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পরিদর্শক গোলাম রাব্বানী সাতজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। পরে একই বছরের ২৫ অক্টোবর সাত আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।
মামলার চার্জশিটে বলা হয়, ‘আসামি সোহেলের কাছ থেকে পিস্তল ভাড়া নিয়ে খুনিরা তাবেলা সিজারকে হত্যা করে। মতিনের নির্দেশে ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর শাখাওয়াতের মোটরসাইকেল নিয়ে মিনহাজুল, তামজিদ ও রাসেল চৌধুরী গুলশান ২-এর ৯০ নম্বর সড়কে যান। ওই সড়কের গভর্নর হাউসের সীমানাপ্রাচীরের বাইরে ফুটপাতে নিরিবিলি ও অন্ধকার স্থানে তামজিদ গুলি করে তাবেলা সিজারকে (৫১) হত্যা করেন। তাকে সহায়তা করেন রাসেল চৌধুরী ও মিনহাজুল। হামলাকারীদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল একজন শ্বেতাঙ্গকে হত্যা করে দেশ-বিদেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া। দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে এই পরিকল্পনা করা হয়।’
মন্তব্য করুন