কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:৩৭ এএম
আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:১১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
ড. ইউনূস ইস্যু

১২ মার্কিন সিনেটরের চিঠির জবাব দিল খুরশীদ আলম

ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। ছবি : সংগৃহীত
ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। ছবি : সংগৃহীত

শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ এবং গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘হেনস্তা’ করা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পাঠানো ১২ মার্কিন সিনেটর। সেই চিঠির প্রত্যাখ্যান করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেছেন, কোন দেশের কোন সিনেটর কী বললো আমরা সেগুলো গায়ে মাখি না।

বুধবার (২৪ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে তিনি এ সব কথা বলেন।

তিনি বলেন, তাদের বক্তব্য অবান্তর, অযৌক্তিক এবং বাংলাদেশের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থায় সরাসরি হস্তক্ষেপের সামিল। বিভিন্ন জায়গা থেকে বায়াস্ট হয়ে না জেনে না শুনে তাদের এমন বক্তব্য দেওয়াকে আমি মনে করি, বিচার ব্যবস্থায় অযাচিত হস্তক্ষেপ।

খুরশীদ আলম খান বলেন, সিনেটররা শ্রম আদালতের রায়টি পড়ুক, বিচার বিশ্লেষণ করে তারপর বক্তব্য দিক। না পড়ে, না শুনে মন্তব্য করা সরাসরি বাংলাদেশে বিচার ব্যবস্থাকে হস্তক্ষেপের সামিল। যদিও আমরা এগুলো আমলে নেই না, পাত্তা দেই না। কোন দেশের কোন সিনেটর কী বলল আমরা সেগুলো গায়ে মাখি না।

প্রসঙ্গত, আইন ও বিচার ব্যবস্থার অপব্যবহার করে শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ এবং গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘হেনস্তা’ করা হচ্ছে। এমন অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি পাঠিয়েছেন ১২ জন মার্কিন সিনেটর।

প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি পাঠানো ১২ সিনেটর হলেন সংখ্যাগরিষ্ঠ হুইপ ইলিনয়ের ডেমোক্রেট দলীয় সিনেটর ডিক ডারবিন, ইন্ডিয়ানা রাজ্যের রিপাবলিকান সিনেটর টড ইয়াং, নর্দার্ন ভার্জিনিয়ার ডেমোক্রেট সিনেটর টিম কেইন, অরিগন রাজ্যের ডেমোক্রেট সিনেটর জেফ মার্কলি, নিউ হ্যাম্পশায়ারের ডেমোক্রেট সিনেটর জেন শাহিন, ম্যাচাচুসেটসের ডেমোক্রেট দলীয় সিনেটর এড মার্কি, ওহাইও রাজ্যের ডেমোক্রেট দলীয় সিনেটর শেরোড ব্রাউন, ভারমন্ট রাজ্যের ডেমোক্রেট সিনেটর পিটার ওয়েলস, রোডস আইল্যান্ডের ডেমোক্রেট দলীয় সিনেটর শেলডন হোয়াইটহাউস, অরিগনের ডেমোক্রেট দলীয় সিনেটর রন উয়াইডেন এবং নিউজার্সির ডেমোক্রেট সিনেটর কোরি বুকার।

চিঠিতে বলা হয়েছে, কমপক্ষে এক দশক ধরে বাংলাদেশে অন্তত ১৫০টি অপ্রমাণিত বিষয়ে মামলা করা হয়েছে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে। স্বাক্ষরকারীরা চিঠিতে লিখেছেন, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে এসব মামলায় প্রক্রিয়াগত ত্রুটির বিষয় তুলে ধরেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো মানবাধিকারবিষয়ক সংগঠনগুলো। এমন বিচারে ইউনূসকে সম্প্রতি শ্রম আইন লঙ্ঘনের জন্য ৬ মাসের জেল দেওয়া হয়েছে, যার বিরুদ্ধে তিনি আপিল করছেন। স্বনামধন্য এসব সংস্থার যুক্তি ফৌজদারি কার্যপদ্ধতিতে যে গতি এবং বারবার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিচারিক প্রক্রিয়ার অপব্যবহারের ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে। তারা বলেছেন, বারবার ইউনূসকে হয়রানি এটাই প্রতিফলিত করে, বাংলাদেশের বহু নাগরিক সমাজের সদস্যরা ক্রমবর্ধমান প্রতিকূল পরিবেশের মুখোমুখি।

২২ জানুয়ারি পাঠানো ওই চিঠিতে তারা আরও বলেছেন, বাংলাদেশে এবং সারাবিশ্বে লাখ লাখ মানুষকে উন্নত অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতিতে ক্ষুদ্রঋণের প্রবক্তা ইউনূস কাজ করছেন। বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্যবিমোচনের লক্ষ্যে তার ঐতিহাসিক অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৩ সালে তাকে কংগ্রেসশনাল গোল্ড মেডেল পুরস্কার দেয় মার্কিন কংগ্রেস। চলমান রাজনৈতিক প্রতিশোধ নেওয়ার ফলে বিশেষ করে একটি গণতান্ত্রিক দেশের আইনে—এসব উদ্যোগ বাধা দেওয়া উচিত হবে না।

ইউনূসের বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি দিতে তাকে ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অভিজাত কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল পুরস্কার দেওয়ার প্রচেষ্টায় ডিক ডারবিন মার্কিন কংগ্রেসে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ককে মূল্যায়ন করে যুক্তরাষ্ট্র। এই সম্পর্কে আছে ঘনিষ্ঠ দ্বিপক্ষীয় এবং অভিন্ন স্বার্থের বিষয়ে বহুজাতিক সহযোগিতা। ইউনূসের হয়রানি বন্ধ করে এবং অন্যদের সরকারের সমালোচনা করার ক্ষেত্রে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দিলে এই গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে। অন্য যেসব দেশে গণতন্ত্রের বাধা আছে, মুক্ত মতপ্রকাশে বাধা আছে, তাদের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে কথা বলে যাচ্ছেন ডিক ডারবিন। সম্প্রতি তিনি রাশিয়া, বেলারুশ, আলজেরিয়া, কম্বোডিয়া এবং গুয়াতেমালা থেকে রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্ত করার আহ্বান জানান সিনেটে।

ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত শ্রম আইন লঙ্ঘন প্রমাণিত হওয়ায় গত ১ জানুয়ারি ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। সেই সঙ্গে তাকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

পরে ওই দিন এক মাসের মধ্যে আপিলের শর্তে জামিন পেয়েছেন শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মামলায় রায় ঘোষণার পর এ আদেশ দেন আদালত।

এদিকে শ্রম আদালতের সব সার্টিফায়েড নথি বার বার চাওয়ার পরও না পাওয়ার অভিযোগ এনেছেন ড. মুহাম্মাদ ইউনূসের আইনজীবী। আগামী ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ড. ইউনূস আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ওটস নিয়মিত খেলে কী ঘটে শরীরে? জেনে নিন

১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোচিং সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

সীমান্তে শেষবারের মতো মায়ের মুখ দেখলেন মেয়ে

বিদেশে ফার্স্ট সেক্রেটারি পদমর্যাদার কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে চায় দুদক

স্থগিত লাতিন বাংলা সুপার কাপে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ম্যাচ

এদেশে আর আমি-ডামি নির্বাচন হবে না : সেলিমুজ্জামান

ভারতে পর্যটক গমনে টানা পাঁচ বছর দ্বিতীয় বাংলাদেশ

আলিমে বাদ পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য সুখবর

খেলোয়াড়দের কথা মাথায় রেখে বিশ্বকাপে নতুন নিয়ম আনছে ফিফা

দুর্নীতিবাজদের প্রতি ঘৃণার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে : অর্থ উপদেষ্টা

১০

ভারত-কানাডার ওপর নতুন শুল্কের হুমকি ট্রাম্পের

১১

মায়ামি নাকি উরুগুয়ে, ভবিষ্যৎ নিয়ে দোটানায় সুয়ারেজ

১২

মাদ্রাসা থেকে ফেরার পথে শিশুকে ধর্ষণ, অভিযুক্তকে গণপিটুনি

১৩

ওমরাহ পালনে ঢাকা ছাড়লেন ওমর সানী

১৪

জিমেইলের এই স্বয়ংক্রিয় সেটিংটি বন্ধ করুন এখনই

১৫

বিস্ফোরক সাক্ষাৎকারের পর লিভারপুলের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ স্কোয়াডের বাইরে সালাহ

১৬

জাপার কেন্দ্রীয় নেতা এবার হাতপাখার প্রার্থী, সমালোচনার ঝড়

১৭

মায়ের স্বর্ণের হার বন্ধুদের ভাগ করে দিল ছেলে

১৮

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হলেন ৩১ কর্মকর্তা

১৯

ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের দপ্তরে ইসরায়েলের অভিযান

২০
X