শিশু গৃহকর্মী নির্যাতনের মামলায় গ্রেপ্তার ও কারাবাসের তথ্য গোপন করে ১৯ বছর চাকরি, পদোন্নতি এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল এবং তার স্ত্রী জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফাতেমা দোজা।
তথ্য গোপন ও সরকারকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সুযোগ-সুবিধা নেওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে তিন সচিবসহ আটজনকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। ঢাকার পল্টনের বাসিন্দা মো. হাসমত মিয়ার পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. খবির উদ্দিন ভূঁইয়া জনস্বার্থে এই আইনি নোটিশ পাঠিয়েছন। খবির উদ্দিন ভূঁইয়া আজ শুক্রবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নোটিশপ্রাপ্তরা হলেন—জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ সচিব এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর মহাপরিচালক, জাতীয় হদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল এবং জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফাতেমা দোজা।
কী বলা হয়েছে আইনি নোটিশে
অ্যাডভোকেট মো. খবির উদ্দিন ভূঁইয়া উল্লেখ করেন, শিশু গৃহকর্মীকে গুরুতর দগ্ধ করে গ্রেপ্তার হয়ে জামাল ও ফাতেমা হাজতবাস করেছিলেন। ফৌজদারি মামলা ও কারাবাসের তথ্য কর্তৃপক্ষকে জানানোর বিধান থাকলেও ওই তথ্য লুকিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নেন। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর কারাবাসের দিনগুলো ব্যক্তিগত, পারিবারিক কারণে কর্মস্থলে অনুপস্থিত দেখিয়ে অর্জিত ছুটি মঞ্জুর করান। এরপর ১৯ বছর কর্মরত থেকে দফায় দফায় পদোন্নতি এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নেন। সরকারি চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী, আসামি গ্রেপ্তারের দিন থেকে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির দিন পর্যন্ত সাময়িক বরখাস্ত হিসেবে থাকার কথা এবং সেই সময়ে তারা শুধু খোরপোশ ভাতা পাবেন। ফৌজদারি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে হাজতবাসের তথ্য গোপন করায় কখনোই সাময়িক বরখাস্ত হননি এবং সম্পূর্ণ বেতনভাতা নিয়েছেন, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
ফৌজদারি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে হাজতবাসের তথ্য লুকিয়ে ১৯ বছরে পর্যায়ক্রমে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন এবং গত ১ জানুয়ারি থেকে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালকের (চিকিৎসা শিক্ষা) দায়িত্ব পালন করছেন।
তথ্য গোপন এবং অন্যটি সরকারকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে তারা সুযোগ-সুবিধা আদায় করেছেন। এই অপরাধের জন্য তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা ও দণ্ড হওয়ার প্রয়োজনীয়তা থাকা সত্ত্বেও তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
তাদের উপরোক্ত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া সরকারি কর্মচারী বিধিমালা লঙ্ঘন এবং জনস্বার্থবিরোধী। তারা সরকারি চাকরি করার যোগ্যতা হারিয়েছেন এবং যে বেতনভাতা গ্রহণ করছেন তা জনগণের অর্থ আত্মসাতের শামিল। সুতরাং জনস্বার্থে অত্র লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হলো।
তথ্য গোপন এবং সরকারকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সুযোগ-সুবিধা আদারের অপরাধে জামাল ও ফাতেমার বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা অত্র লিগ্যাল নোটিশ পাওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে নোটিশ দাতাকে জানাতে অনুরোধ করা যাচ্ছে। অন্যথায় এ বিষয়ে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন