রাজধানীতে বিএনপির ডাকা অবরোধে যাত্রীবেশে বাসে উঠে আগুনের ঘটনায় নির্দেশনায় জড়িত এক কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজধানীতে প্রতিটি বাসে আগুন দিলে পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হতো টাকা। এমন অভিযোগে ছাত্রদলের এক নেতাকে সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিট (সিটিটিসি)।
সোমবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।
গতকাল রোববার রাতে বাবুবাজার ব্রিজ এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তাররা হলেন- ঢাকা মহানগর দক্ষিনের সূত্রাপুর থানা ছাত্রদের যুগ্ম আহ্বায়ক আমির হোসেন রকি (২৫) তার সহযোগী সাকিব ওরফে আরোহান (২১)। এ সময় তাদের কাছ থেকে বোতল ভর্তি পেট্রোল উদ্ধার করা হয়।
সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, গত পহেলা নভেম্বর রাজধানীর মুগদাপাড়া আইডয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে মিডলাইন বাসে কতিপয় রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত যাত্রীবেশে আগুন দিয়ে পালানোর আল আমিন নামে একজনকে হাতেনাতে আটক করা হয়। আল আমিন কার নেতৃত্বে কি ভাবে বাসে আগুন দিয়েছে তা স্বীকার করে। এই ঘটনায় সিটিটিসি গোয়েন্দা দল আল আমিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরবর্তীতে সে বেশকিছু তথ্য দেয়।
সিটিটিসির প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আল আমিন বলে, তার নেতা মিজানুর রহমান। এই মিনানের নেতৃত্বে আরও দুজন কমলাপুর টিটিপাড়া থেকে বাসে ওঠে পেছনের সিটে গিয়ে বসে। এরপর সঙ্গে থাকা পেট্রোল ঢেলে বাসে আগুন দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। মিজাসহ ৩ জন পালিয়ে যেতে পারলেও স্থানীয়রা আল আমিনকে ধরে ফেলে। পরবর্তীতে মিজানকে গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মিজানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সিটিটিসিকে জানায়, মহানগর ছাত্রদলের একজন নেতা আমির হোসেন রকির (২৫) নেতৃত্বে মিজান রাজনীতি করে। এই রকির নির্দেশনায় ও তত্বাবধানে প্রথম দফা মিডলাইন বাসসহ বেশ কয়েকটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। এই নেতার কাছ থেকে সকল রশদ পেয়ে চারজন বাসে আগুন দেওয়া শুরু করে৷ এরবাইরেও আরও বেশ কয়েকটি বাসে আগুন দিয়েছে।
প্রথম দিনের অবরোধে মিজান এসে আল আমিনের কাছে বোতলে পেট্রোল ও টাকা দেয়। এ সময় মিজান তাদের আশ্বস্ত করে যে, দল ক্ষমতায় আসতেছে। কোনো সমস্যা হবে না। বাস পোড়ানোর নির্দেশনা দেয়। কমলাপুরের টিটিপাড়া থেকে খিলগাঁও সড়কে চলাচল করা বাসে আগুন দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রতিটি বাসে আগুন দেওয়ার জন্য তিন হাজার টাকা বোনাস বিকাশ করে দেয়। পরবর্তীতে দ্বিতীয় দফা অবরোধে বাসে আগুন দেওয়ার জন্য ডাবল বোনাস ঘোষণা করা হয়৷
সিটিটিসি প্রধান বলেন, অবরোধ কর্মসূচিতে বাসে আগুন দিতে কার কার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে৷ কারা কারা সহযোগিতা করেছে আমরা সবার নাম পেয়েছি। আপনারা জানেন আরও একটি ভয়ংকর তথ্য দিয়েছে, প্রথম অবরোধে একটি বাসে আগুন দিলে যা পুরস্কার দিতো, দ্বিতীয় অবরোধে সেটি ডাবল করার ঘোষণা দিয়েছে। আগুন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা পুরস্কার পাঠানো হতো৷ আমরা রকির কাছ থেকে নির্দেশ দাতাদের তথ্য পেয়েছি। রকির নেতৃত্বে আরও কয়েকটি দল সক্রিয় রয়েছে।
পুরস্কারের অর্থদাতা কারা জানতে চাইলে সিটিটিসি প্রধান বলেন, আমরা সবার তথ্য পেয়েছি৷ কিন্তু তদন্তের স্বার্থে কারও নাম প্রকাশ করছি না। তবে একে একে সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে এবং গণমাধ্যমের সামনে হাজির করা হবে।
মন্তব্য করুন