কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১০:০১ পিএম
আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৪৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

এবার মিল্টন সমাদ্দারের আরেক প্রতারণা ফাঁস!

চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দার। ছবি : সংগৃহীত
চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দার। ছবি : সংগৃহীত

এবার মিল্টন সমাদ্দারের আরেক প্রতারণার পর্দা ফাঁস করেছে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম।

শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) বিকেলে তার নিজের ফেসবুক পেজে এসে এই অভিযোগ করেন।

তিনি লাইভে এসে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নার্সের চাকরি দেওয়ার নাম করে মিল্টন সমাদ্দার আমাদের ৩০-৪০ জনের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা।

তিনি আরও বলেন, মিল্টন সমাদ্দারের কাছে টাকা ফেরত চাইলে ডেকে নিয়ে উল্টো মারধর করেন তিনি। পরবর্তীতে মিল্টনের সঙ্গে আবারও যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার স্ত্রীও আমাদের ওপর হামলা চালাতে চায়।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) কালবেলায় প্রকাশ হয় ‘মানবিক মুখোশের আড়ালে ভয়ংকর মিল্টন সমাদ্দার’ এরপরই অনেকে ফাঁস করতে থাকে সমাদ্দারের কর্মকাণ্ড।

কালবেলার প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, মিল্টন সমাদ্দারের ফেসবুক পেজ ঘেঁটে দেখা যায়, তার আশ্রমে সব সময় আড়াইশ থেকে তিনশ অসুস্থ রোগী থাকেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে রাস্তায় যারা মারা যান, তাদের দাফন করেন মিল্টন। আবার তার আশ্রমে অবস্থানকালেও অনেকে মারা যান। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ৯০০ মরদেহ দাফন করেছেন বলে মিল্টন দাবি করেন।

তবে কালবেলার অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য বলছে ভিন্ন কথা। সরেজমিন মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে গিয়ে জানা যায়, মিল্টন সমাদ্দারের প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে সেখানে সব মিলিয়ে ৫০টি মরদেহ দাফন করা হয়েছে। রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে ১৫টির মতো মরদেহ দাফনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে আজিমপুর কবরস্থানে ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত কোনো মরদেহের দাফন হয়নি বলে কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন সেখানকার দায়িত্বরতরা।

‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ আশ্রমে অবস্থানকালে কারও মৃত্যু হলে তার সার্টিফিকেট দেন মাহিদ খান নামের একজন চিকিৎসক। তবে তার স্বাক্ষর এবং সিলের সঙ্গে বিএমডিসির নিবন্ধন নম্বর উল্লেখ নেই। বিএমডিসির বিধি অনুযায়ী চিকিৎসকের স্বাক্ষর এবং সিলে নিবন্ধন নম্বর উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক। বিস্তারিত জানার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে মোহাম্মদ আব্দুল মাহিদ খান নামে একজন চিকিৎসকের সন্ধান পাওয়া যায়। কমফোর্ট হাসপাতালে তার চেম্বার রয়েছে। তবে সরেজমিন ওই হাসপাতালে গিয়ে উল্লিখিত চিকিৎসকের দেখা মেলেনি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মিল্টন সমাদ্দারের দক্ষিণ পাইকপাড়া আশ্রমের কাছেই বায়তুর সালাম জামে মসজিদ। এই মসজিদে এক সময় তার প্রতিষ্ঠানে নিয়ে আসা মরদেহ বিনামূল্যে গোসল করানো হতো। তার মানবিক কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে মসজিদ কর্তৃপক্ষ তাকে এই সুবিধা দিয়েছিল। তবে গোসল করানোর সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা প্রায় প্রতিটি মরদেহের বিভিন্ন স্থানে কাটাছেঁড়ার দাগ শনাক্ত করেন। করোনার সময় এ বিষয়ে মিল্টন সমাদ্দারকে প্রশ্ন করে মসজিদ কর্তৃপক্ষ। এরপর তিনি ওই মসজিদে মরদেহ পাঠানো বন্ধ করে দেন।

‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’-এ কাজ করেছেন—এমন একজন বলেন, কোনো রোগী অসুস্থ হলে সরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয় না। এখানে রেখেই চিকিৎসা করা হয়। কারণ, তিনি চান না কেউ পুরোপুরি সুস্থ হোক। এটা তার ব্যবসা। ওই ব্যক্তির কথার মিল পাওয়া যায় মৃতদের ডেথ সার্টিফিকেটেও। যতজনকে দাফন করা হয়েছে, তাদের প্রত্যেকের ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারের প্যাডে।

মিল্টন সমাদ্দারের পাঁচটি ফেসবুক পেজে বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের ১৬টি নম্বর দেওয়া রয়েছে। এ ছাড়া তিনটি বেসরকারি ব্যাংকে খোলা হিসাবের মাধ্যমে চলে আর্থিক লেনদেন। এসব মোবাইল ব্যাংকিং এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বরে লেনদেনের তথ্য সংগ্রহ করে কালবেলা। এতে দেখা যায়, প্রতি মাসে কোটি টাকার মতো জমা হয়। তবে মিল্টনের আশ্রমে থাকা সর্বসাকল্যে ৫০ জন মানুষের দেখাশোনার জন্য এই বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যয় হয় কি না—সেই প্রশ্ন উঠেছে।

সরেজমিন মিল্টনের আশ্রম পরিদর্শন করে দেখা যায়, বিভিন্ন বিষয় প্রচার-প্রচারণার জন্য মিল্টনের রয়েছে ১৬ জনের একটি দল। এরা বিভিন্ন মানবিক গল্পের ভিডিও তৈরি করেন। এরপর সেসব ভিডিও ফেসবুকে দিয়ে মানুষের কাছ থেকে অর্থ নেন। গত রোববার কল্যাণপুরের অফিসে মিল্টন সমাদ্দারের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। সে সময় তিনি জানান, তার আশ্রমে বর্তমানে ১৩০ জন নারী, ১২৬ জন পুরুষ, ৪২ জন প্রতিবন্ধী শিশু, মানসিক ভারসাম্যহীন মায়েদের ৬ জন সন্তান এবং তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া ৭টি শিশু রয়েছে। তার হিসাবে সব মিলিয়ে আশ্রিতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩১১ জন। তবে পরিচয় গোপন করে গত শুক্রবার সাভার এবং রোববার পাইকপাড়ার আশ্রম এলাকা ঘুরে মিল্টন সমাদ্দারের দেওয়া হিসাবের সঙ্গে বাস্তবতার মিল পাওয়া যায়নি।

গার্মেন্ট কারখানায় চাকরি খোঁজার কথা বলে সাভারের ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’-এর সামনের একটি চায়ের দোকানে ঘণ্টাখানেক অবস্থান করেন এ প্রতিবেদক। সে সময় আশ্রমের দ্বিতীয় তলায় ৩ জন, তৃতীয় তলায় ২ জন এবং চতুর্থ তলায় ৩ থেকে ৪ জনকে দেখা যায়। স্থানীয়রা জানান, আশ্রমে সর্বোচ্চ ২৫-৩০ জন থাকতে পারেন। এ ছাড়া পাইকপাড়ার আশ্রমে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ২০ জনের মতো লোক আছেন।

সার্বিক বিষয়ে জানার জন্য চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারকে ফোন করা হলে তিনি কালবেলাকে বলেন, সাভারে তার আশ্রমে বর্তমানে ২৫৬ জন লোক আছে।’ মরদেহ দাফনের হিসাবে গরমিল সম্পর্কে একাধিকবার প্রশ্ন করা হলেও তিনি কোনো সদুত্তর দেননি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তার এক কোটি ষাট লাখের বেশি অনুসারী রয়েছে। তার মূল টার্গেট ছিল মানবিক ভিন্ন কাজ প্রচার করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঢাবি অধ্যাপক বাহাউদ্দিনের থিসিস জালিয়াতির তদন্তে কমিটি  

বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া রোগ নিয়ে জানা জরুরি : প্রধানমন্ত্রী

১৬ জেলায় তীব্র ঝড়ের শঙ্কা

স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত কিশোর বিজ্ঞানী তারিফ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত

চাঁদা না দেওয়ায় ঠিকাদারের প্রতিনিধিকে মারধর

প্রথম ধাপে ১৩৯ উপজেলায় ভোটগ্রহণ শুরু

বুধবার বন্ধ রাজধানীর যেসব মার্কেট

কী বলছে রাশিফল, দিনটি কেমন যাবে?

ইতিহাসের এই দিনে আলোচিত যত ঘটনা

আজকের নামাজের সময়সূচি

১০

কালবৈশাখীর ঝড়ে বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি, খুঁটি ভেঙে বিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ

১১

বিশ্বকবির জন্মবার্ষিকী উদযাপনে প্রস্তুত শিলাইদহের কুঠিবাড়ি

১২

পিএসজিকে কাঁদিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে ডর্টমুন্ড

১৩

নিখোঁজ শ্রমিকের ভাসমান মরদেহ উদ্ধার

১৪

মাটির নিচে পাওয়া গেল মদ তৈরির উপকরণ

১৫

আত্মীয়ের জানাজা শেষে ফেরার পথে ট্রাকচাপায় নিহত ৩

১৬

কুবিতে উদ্ভূত পরিস্থিতি ও দাবি-দাওয়া নিয়ে পৃথক তদন্ত কমিটি

১৭

২৪ ঘণ্টায়ও সন্ধান মেলেনি নদীতে নিখোঁজ শিশুর

১৮

রেলসেতুতে নাটবল্টুর পরিবর্তে ব্যবহার হচ্ছে গাছের ডাল

১৯

খোলা আকাশের নিচে চলছে ক্লাস 

২০
X