জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিভিন্ন দাবিতে মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন। পরবর্তীতে ১৩টি দাবি উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সমন্বয়ক নূর নবী।
রোববার (১১ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মতবিনিময় সভায় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। তার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টরিয়াল বডি, রেজিস্ট্রার ও হল প্রভোস্টেরর পদত্যাগ ছিল অন্যতম। এছাড়াও ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ, জকসুর নীতিমালা প্রণয়ন, দ্বিতীয় ক্যাম্পাস দ্রুত বাস্তবায়ন, ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মান উন্নতকরণ অন্যতম।
১৩ দফা দাবিগুলো হলো- ১. বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রক্টরসহ সম্পূর্ণ প্রক্টরিয়াল বডি, হল প্রভোস্ট ও ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের প্রধান এবং রেজিস্ট্রারকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করতে হবে। ২. ক্যাম্পাসের ভিতরে লেজুড়ভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। (ক্যাম্পাসের বাইরে তার রাজনৈতিক পরিচয় থাকতে পারে। এটা যে কারও ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু ক্যাম্পাসের ভিতরে সবাই সাধারণ ছাত্র।) ৩. শহীদ ও আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার সার্বিক খরচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বহন করতে হবে। ৪. আগে ছাত্রলীগের পদধারী ছিল এবং এর উপর ভিত্তি করে ক্যাম্পাসে চাকরি পেয়েছে তারা ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকসহ যারা এখনো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরোধিতার সঙ্গে সম্পৃক্ত, শহীদ ও আহত সহযোদ্ধাদের নিয়ে ঠাট্টা-টিটকারি করেছে তাদের আগামী ২ দিনের মধ্যে চাকরি থেকে অব্যাহতি নিতে হবে৷ ৫. আগামী সেপ্টেম্বর মাসের ২০ তারিখের মধ্যে জকসুর নীতিমালা প্রণয়ন করে একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। ৬. দখল হলগুলো অবিলম্বে দখলমুক্ত করতে হবে। মেধার ভিত্তিতে সিট বরাদ্দ দিতে হবে। ৭. দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণ কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। (সেক্ষেত্রে সেনাবাহিনীকে ক্যাম্পাস বাস্তবায়নের দায়িত্ব প্রদান করতে হবে।) ৮. শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। শিক্ষক নিয়োগে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। গবেষণায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে । ৯. ক্যাফেটেরিয়ার জন্য বাজেট বরাদ্দ রেখে খাবারের মান উন্নত করতে হবে এবং অতি শিগগিরই নতুন ক্যাফেটেরিয়া নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করতে হবে। ১০. নারী শিক্ষার্থীদের কমন রুমের মান উন্নত করতে হবে। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে শক্ত আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। ১১. ক্যাম্পাসের আশপাশে চাঁদাবাজি, রাজনীতির নামে টেন্ডারবাজি বন্ধের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা করতে হবে। ১২. পোষ্য কোটা বাতিল এবং রাজনৈতিক নিয়োগ-বাণিজ্য আজীবনের জন্য বন্ধ করতে হবে। ১৩. গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র ভর্তি পরীক্ষা নিতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে হবে।
দাবিগুলোর বিষয়ে সমন্বয়ক নূর নবী বলেন, আমরা সবাই মিলে যে ১৩টি দাবি নির্ধারণ করেছি সেগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে আমাদের ক্যম্পাসের পড়াশোনার পরিবেশ যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি মৌলিক সমস্যাগুলো থেকে কিছুটা হলেও আমরা মুক্তি পাব। এখন যদি আমরা সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসঙ্গে দাবিগুলো নিয়ে কাজ করতে পারি তাহলেই একটি সুন্দর ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে আমরা সক্ষম হবো।
মন্তব্য করুন