বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ছাত্রবাসে শনিবার গভীর রাতে ছাত্রলীগের দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১২ জন। ছয়জনকে শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ নিয়ে রোববার ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করেছে। ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, বিদায়ী সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী এবং পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম এমপির অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারীরা হেলমেট ও মাস্ক পড়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে গভীর রাতে ছাত্রাবাসের ঢুকে প্রতিমন্ত্রীর অনুসারীদের ওপর হামলা করলে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। সাদিক অনুসারীরা রোববার ক্যাম্পাসে অবস্থান করে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে উত্তেজনামূলক স্লোগান দিয়ে দফায় দফায় বিক্ষোভ করছেন। এমনকি রক্তিম-বাকি গ্রুপের নেতৃত্বে সাধারণ শিক্ষার্থীর ওপর হামলার অভিযোগ এনে তাদের বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছে মানববন্ধনে। এমন অভিযোগ অস্বীকৃতি জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী অনুসারীরা জানান, সাদিক গ্রুপ রাতে ক্যাম্পাসে হামলা চালিয়ে যারে যেখানে পেয়েছে মারধর করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানিয়েছে, সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী ২০ থেকে ২৫ জন শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে হেলমেট পরে দেশীয় অস্ত্র ও জিআই পাইপ নিয়ে প্রথমে শেরেবাংলা হলে ঢোকে। তারা প্রধান ফটক ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের কক্ষ বাইরে থেকে আটকে দেয়। পরে চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় গিয়ে প্রতিপক্ষ গ্রুপের কর্মীদের খুঁজতে কয়েকটি কক্ষে তল্লাশি চালায়। পরে তারা বঙ্গবন্ধু হলে গিয়ে একইভাবে তল্লাশি করে। সেখানে প্রতিপক্ষের কয়েকজনকে পেয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। এ সময়ের মধ্যে রক্তিম-বাকি গ্রুপ সংগঠিত হয়ে পাল্টা হামলা করলে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।
এ ঘটনায় রক্তিম-বাকি গ্রুপের মুয়ীদুর রহমান বাকি, সাইমুন ইসলাম, আয়াতউল্লাহ, ইফরান হোসেন রাজ, ইবনে গালিব, রাকিবুল হোসেন রনি ও সোহেল রানা এবং রাফি-শরিফ গ্রুপের ফাত্তাউর রাফি, হাসিবুল হাসান শান্ত, আল সামাদ শান্ত, মো. মঞ্জু ও শরীফুল ইসলাম আহত হয়েছেন।
মেয়র সাদিকপন্থি ছাত্রলীগ কর্মী আল সামাদ শান্ত বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে মুয়ীদুর রহমান বাকি গ্রেপ্তার ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেক আগে বহিষ্কার হয়েছে। সম্প্রতি সে প্রতিমন্ত্রীর অনুসারী দাবি করে অবৈধভাবে ছাত্রাবাসে থাকছে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধর করছে। তারা অতর্কিতভাবে আমাদের ওপরও হামলা চালিয়েছে।
মুয়ীদুর রহমান বাকি এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, হামলাকারীরা বিগত দিনেও একাধিকবার হামলা-সন্ত্রাস করেছে। গত মধ্যরাতেও তারা আমাদের ওপর হামলা চালায়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বাকি বলেন, তার বহিষ্কারাদেশ আরও তিন বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রত্যাহার করেছেন।
আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বরিশাল বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) হরিদাস নাগ বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. খোরশেদ আলম বলেন, শনিবার রাতে হামলার খবর পেয়ে তারা তাৎক্ষণিক ক্যাম্পাসে যান এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে খবর দেন। ঘটনার কারণ উদ্ঘাটনে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। হাসপাতালে আহতদের খোঁজখবর নিতে প্রক্টরিয়াল বডির দুজন হাসপাতালে গেছেন। বর্তমানে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
আরও পড়ুন : ববির দুই হলে হেলমেট পরিহিত দুর্বৃত্তের হামলা
প্রসঙ্গত, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি নেই। তবে মেয়র সাদিক ও প্রতিমন্ত্রী শামীমের অনুসারী দুটিপক্ষ বিদ্যামান। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কয়েক বছর ধরে প্রায়ই তারা হামলা-পাল্টা হামলা করে ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করছে। সাদিক আবদুল্লাহ অনুসারীদের নেতৃত্ব দেন মুবাশ্বির রিদম, নাভিদ ও তানজিম মঞ্জু এবং প্রতিমন্ত্রী অনুসারীদের নেতৃত্বে রক্তিম হাসান ও মুয়ীদুর রহমান বাকি।
মন্তব্য করুন