শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১১ মে ২০২৫, ০৯:১১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

এক নজরে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ও ফলাফল

আটারি-ওয়াঘা সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের সীমান্ত রক্ষীরা। ছবি : সংগৃহীত
আটারি-ওয়াঘা সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের সীমান্ত রক্ষীরা। ছবি : সংগৃহীত

উপমহাদেশের দুই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক পূর্ণমাত্রার হামলা-পাল্টা হামলা ও সীমান্ত সংঘাতে উভয় দেশই বড় ধরনের সামরিক ও বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে। যদিও মার্কিন মধ্যস্থতায় শনিবার বিকেল থেকে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এসেছে, তবুও সংঘাতের কয়েক দিনে যে ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে, তা দুই দেশের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় অধ্যায় হিসেবে থেকে যাবে।

সংঘাতের সূচনা : পেহেলগাম হামলার প্রতিক্রিয়া

এই সাম্প্রতিক উত্তেজনার সূত্রপাত হয় গত মাসে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগাম এলাকায় এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর। ওই হামলায় অন্তত ২৬ নিরীহ পর্যটক প্রাণ হারান। ভারত সরকার এ হামলার জন্য পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনকে দায়ী এবং ইসলামাবাদের যোগসূত্রতার অভিযোগ করে। অন্যদিকে পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করে ও তাদের সরকার এবং দেশের কারও সঙ্গে হামলার কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানায়।

উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে ৭ মে রাতে পাকিস্তানের মাটিতে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায় ভারত। ভারত দাবি করে, তারা ‘সন্ত্রাসবাদবিরোধী অভিযান’ হিসেবে পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ড ও পাকিস্তান অধ্যুষিত কাশ্মীরের ৯টি শহরে মোট ২৪টি হামলা চালিয়েছে। পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিশোধ হিসেবে এ হামলা চালানো হয়েছে।

পূর্ণমাত্রার হামলা-পাল্টা হামলা ও সীমান্ত সংঘাত

ভারতের হামলায় পাকিস্তানে বেসামরিক প্রাণহানি ঘটে এবং বেশ কয়েকটি শহরে ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি হয়। এর জবাবে পাকিস্তান ১০ মে ভোররাতে চালায় এক বিশাল প্রতিশোধমূলক অভিযান ‘অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুস’, যার আওতায় অন্তত ২০টিরও বেশি ভারতীয় সামরিক স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়। এছাড়া আগের দুই দিন রাতে পাকিস্তান থেকে অন্তত ৪০০ সামরিক ড্রোন ভারতে প্রবেশ করেছে বলে দাবি করে ভারতের সামরিক বাহিনী। এসব ড্রোনের অনেকগুলো ভারতের মাটিতে আঘাত হানার তথ্য জানায় সংবাদমাধ্যমগুলো।

এদিকে মঙ্গলবার রাতে হামলা-পাল্টাহামলার উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে সীমান্তেও। দুই দেশের সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভারতের হামলার পর থেকে শনিবার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা পর্যন্ত কয়েক দিন লাইন অব কন্ট্রোল (এলওসি) বরাবর ভারত ও পাকিস্তান সেনাদের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি ও মর্টার হামলা চলতে থাকে। এতে দুই দেশের অনেক সাধারণ মানুষ নিহত এবং আহত হন।

যুদ্ধে পাকিস্তানের ক্ষয়ক্ষতি

ভারতের প্রথম দফা অভিযানে পাকিস্তানের অন্তত পাঁচটি শহরে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এবং গণমাধ্যমসূত্রে জানা গেছে, হামলায় অন্তত ৬৫ বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ২০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ইসলামাবাদ, লাহোর ও কোয়েটা শহরে স্কুল, আবাসিক এলাকা এবং একটি রেলস্টেশন লক্ষ্য করে হামলা হয়।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, সেনা সদস্যদের মধ্যে ১৮ জন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ড্রোন ঘাঁটি এবং রাডার স্থাপনা।

তবে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণের ক্ষেত্রে- কারণ ভারতের পক্ষ থেকে এই হামলাকে ‘সন্ত্রাসবিরোধী স্ব-প্রতিরক্ষা’ হিসেবে তুলে ধরা হয়, যা কিছু আন্তর্জাতিক মহলে সমর্থনও পায়।

যুদ্ধে ভারতের ক্ষয়ক্ষতি

পাকিস্তানের পাল্টা অভিযানে ভারতের ক্ষতি আরও বিস্তৃত। পাকিস্তান দাবি করে, তারা ভারতীয় ভূখণ্ডে অন্তত ২০টিরও বেশি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে সফলভাবে আঘাত হেনেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য : উধমপুর ও শ্রীনগর বিমানঘাঁটিতে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শ্রীনগরে ২০ সেনা নিহত হওয়ার কথা বলা হয়েছে।

আদমপুরে একটি S-400 এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ধ্বংস হয়েছে বলে দাবি করেছে পাকিস্তান। এছাড়া চণ্ডীগড়ের একটি অস্ত্রভাণ্ডার, পাঠানকোট ও বাথিন্ডা বিমানঘাঁটি এবং উরি ব্রিগেড হেডকোয়ার্টারও আক্রান্ত হয়েছে। একাধিক স্থানে ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে অন্তত ৫০ সেনাসদস্য নিহত এবং আরও ১৫০ জন আহত হয়েছে বলে ভারতীয় মিডিয়ায় অনানুষ্ঠানিকভাবে তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।

ভারতের দিকেও বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, বিশেষ করে জম্মু ও পাঞ্জাব সীমান্ত এলাকায়। সেখানে কমপক্ষে ৩০ সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

সামরিক ও কৌশলগত ক্ষতি

উভয় দেশের পক্ষেই শুধু প্রাণহানি নয়, গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম, বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, রাডার ও যোগাযোগ অবকাঠামোতে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। যুদ্ধবিমান ও ড্রোন ব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধাক্কা দুই দেশের সামরিক ব্যয়ের ওপর দীর্ঘমেয়াদি চাপ তৈরি করবে। ভারতের সামরিক আধিপত্য রক্ষা এবং পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামূলক সক্ষমতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে উভয় পক্ষকেই এখন নতুন করে ব্যয় পরিকল্পনা করতে হবে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও যুদ্ধবিরতি

এই ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মধ্যেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় যুদ্ধবিরতির পথ তৈরি হয়। দুই দেশের সেনাপ্রধান ও নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সঙ্গে টানা আলোচনার পর শনিবার বিকেল ৫টা থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।

পরবর্তী পরিস্থিতি ও আশঙ্কা

যদিও যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে, তবে এই সংঘাতের ক্ষত এখনো শুকায়নি। সীমান্তে দুই পক্ষের সেনা মোতায়েন ও নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। পরমাণু শক্তিধর দেশ দুটির মধ্যে অবিশ্বাস ও সংঘর্ষের যে শেকড়, তা গভীর এবং দীর্ঘকালীন।

বিশ্লেষকদের মতে, এই ক্ষয়ক্ষতি ভবিষ্যতে দুই দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, প্রতিরক্ষা কৌশল ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে। সর্বোপরি এ ঘটনা দুই দেশের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় অধ্যায় হিসেবে থেকে যাবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত-পাকিস্তান সংঘাত
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অনির্বাচিত সরকার সব কিছুর সমাধান করতে পারে না : যুবদল সভাপতি

ব্যবসায়ীদের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে সচেষ্ট সরকার : আইসিটি সচিব

রাজউকের সার্ভারে ঢুকে ভবনের অনুমোদন করিয়ে নিয়েছিল হ্যাকার নিজেই

সরাসরি গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পেলেন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউট ও তদন্তকারী কর্মকর্তারা

জুলাই ঐক্যের বিক্ষোভে উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

অধ্যাপক ইউনূস ‘পদত্যাগের বিষয়ে ভাবছেন’ : নাহিদ ইসলাম

এবার আসিফ ও মাহফুজের পদত্যাগ দাবি গণঅধিকার পরিষদের

শীতের শুরুতে স্থানীয় নির্বাচন চায় ইসলামী আন্দোলন

ডাকসুর রোডম্যাপ দাবিতে ৩২ ঘণ্টা ধরে অনশনে বিন ইয়ামিন

বই চুরির মামলায় অ্যাকাডেমিক সুপারভাইজার গ্রেপ্তার

১০

বন্যা না আসতেই ধসে গেল নদী রক্ষা বাঁধ

১১

বর্তমান পরিস্থিতিতে মির্জা গালিবের ৫ পরামর্শ

১২

পাকিস্তানকে বিশাল বাঁধ নির্মাণ করে দিচ্ছে চীন

১৩

অর্ধশতাধিক বাড়িঘর বিলীন, আতঙ্কে নদীপাড়ের মানুষ

১৪

‘কুমির ডেকে আনছেন তা আপনাদেরই খাবে’

১৫

ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় গ্রহণকারী ব্যক্তিদের প্রসঙ্গে সেনাবাহিনীর অবস্থান

১৬

চট্টগ্রাম রোটারেক্ট ক্লাবের সভাপতি রাহাত, সম্পাদক ফারহানুল

১৭

ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় নেওয়া সেই ৬২৬ জনের তালিকা প্রকাশ করল সেনাবাহিনী

১৮

ব্যাংকে ব্যাংকে পুলিশ পাঠিয়ে ডলার বাজার নিয়ন্ত্রণ আর নয় : গভর্নর

১৯

ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে : খেলাফত মজলিস

২০
X