প্রায় দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলা তীব্র উত্তেজনা ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর ভারত ও পাকিস্তান অবশেষে একটি পূর্ণাঙ্গ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় কূটনৈতিক তৎপরতায় এই যুদ্ধবিরতি সম্ভব হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে পাকিস্তান দাবি করে বলছে যে তারা যুদ্ধবিরতির অনুরোধ করেনি বরং ভারতীয়দের অনুরোধে সাড়া দিয়েছে।
পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর মিডিয়া উইং আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী স্পষ্টভাবে বলেন, ‘পাকিস্তান কখনো কোনো যুদ্ধবিরতির অনুরোধ করেনি।’ এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের অনুরোধ ও হস্তক্ষেপের ভিত্তিতে আমরা ভারতীয়দের (যুদ্ধবিরতি) ইতোমধ্যেই করা অনুরোধে সাড়া দিয়েছি।’
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর দীর্ঘ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠানের পর মহাপরিচালক জোর দিয়ে বলেছেন, ‘পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে মৌলিক বিরোধ হচ্ছে কাশ্মীর।’
‘আমরা যে সমস্যাটি দেখছি তা হলো ভারত এই বাহ্যিক সমস্যাটিকে অভ্যন্তরীণ করে চলেছে। এটি পাকিস্তান, ভারত ও কাশ্মীরের জনগণের সঙ্গে একটি বাহ্যিক সমস্যা,’ বলেন তিনি।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ভারতের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে না জানিয়ে সামরিক বাহিনীর এই মুখপাত্র বলেন, ‘আমি ২০০ শতাংশ নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে সশস্ত্র বাহিনী নিয়ন্ত্রণরেখা [নিয়ন্ত্রণরেখা] যুদ্ধবিরতি মেনে চলছে।’
‘আমরা একটি পেশাদার সেনাবাহিনী এবং আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি দৃঢ়ভাবে মেনে চলি এবং সরকারের আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করি,’ বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘পাকিস্তানের কি প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করার কোনো যুক্তি আছে? আমরা একটি শান্তিপ্রিয় জাতি—ভেতরে ও বাইরে। কিন্তু যদি কোনো আগ্রাসন হয়, আমরা জবাব দেব।’
এর আগে সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে এমন কিছু গোয়েন্দা তথ্য আসে যা স্পষ্ট করে দেয়, যুদ্ধ যদি অব্যাহত থাকে তবে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। এরপরই মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সরাসরি ফোন করেন এবং অবিলম্বে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির আলোচনায় বসার অনুরোধ জানান।
সিএনএনের তথ্য অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসনের একটি উচ্চপর্যায়ের দল- ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মার্কো রুবিও এবং হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ সুজি ওয়াইলস টানা ৪৮ ঘণ্টা ভারত-পাকিস্তানের উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছিলেন।
উক্ত ‘ভয়াবহ গোয়েন্দা তথ্য’ পাওয়ার পরই জেডি ভ্যান্স প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে পুরো পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে মোদিকে ফোন করে ভারতকে সামরিক উত্তেজনা থেকে সরার আহ্বান জানান। ফোনালাপে ভ্যান্স হোয়াইট হাউসের উদ্বেগ তুলে ধরে বলেন, ‘এই সংঘাত বড় ধরনের যুদ্ধের দিকে গড়াতে পারে- এমনকি পরমাণু সংঘর্ষেও গড়াতে পারে।’
মন্তব্য করুন