বাকৃবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:০৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

আইপিএম অ্যাক্টিভিটি ও বাকৃবির গবেষণায় সাফল্য

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলের সদস্যরা। ছবি : কালবেলা
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলের সদস্যরা। ছবি : কালবেলা

বাংলাদেশের মানুষের কাছে বেগুন একটি প্রিয় খাদ্য হিসেবে পরিচিত। বেগুন একদিকে যেমন পুষ্টিকর খাবার, অন্যদিকে এটি সঠিক পদ্ধতিতে চাষ করে সহজেই লাভবান হওয়া যায়। চাইলে বছরব্যাপী এটি চাষ করা যায়। দেশে আলুর পরেই দ্বিতীয় সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সবজি হলো বেগুন। এই সম্ভাবনাময় বেগুনের চাষ করতে গিয়ে চাষিরা বেশ কিছু ক্ষতিকর পোকার আক্রমণে পড়েন। বেগুন চাষকালীন সময়ে ৩৬টিরও বেশি পোকামাকড় আক্রমণ করে, যার মধ্যে সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক হলো ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকার (Leucinodes orbonalis) আক্রমণ।

জানা যায়, বাংলাদেশের কৃষকরা সাধারণত বেগুনের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা দমনের জন্য প্রতি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার, এমনকি দিনে দুবারও কীটনাশক প্রয়োগ করেন। এতো বেশি কীটনাশক ব্যবহার করা সত্ত্বেও কৃষকরা বেগুনে ৩০-৬০ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতির শিকার হন। ফলে তারা আরও বেশি কীটনাশক প্রয়োগ করেন, যা এক মৌসুমে ১০০ বারেরও বেশি স্প্রে করা পর্যন্ত গড়ায়। এতে বেগুনের ওপর উচ্চমাত্রার কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ থেকে যায়, যা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। পুরো বেগুন চাষের খরচের ৩৫-৪০ ভাগ শুধুমাত্র কীটনাশক ও এর প্রয়োগের পেছনে ব্যয় হয়। এই অতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হওয়ার পাশাপাশি কীটের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলছে এবং এর ফলে নতুন কীট সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তাই এর সমাধানে পরিবেশবান্ধব বিকল্প পদ্ধতির প্রয়োজন। এই লক্ষেই মেটিং ডিসরাপশন প্রযুক্তির কার্যকারিতা পরীক্ষা করে সাফল্য পেয়েছেন ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ইউএসএআইডি) আইপিএম অ্যাক্টিভিটি ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক।

মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) গবেষণার বিষয়ে কথা বললে এসব তথ্য জানান গবেষক দলের সদস্য কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ। ভার্জিনিয়া টেকের আইপিএম ল্যাবের পরিচালক ড. রাঙ্গাস্বামী মুনিয়াপ্পান গবেষণাটি পর্যবেক্ষণ করেন বলেও জানান তিনি।

কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ বলেন, বেগুনের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকার স্ত্রী পোকা পাতার নিচে, ডালপালা ও ফুলের উপর ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে বের হওয়া লার্ভা গাছের নরম অংশে ঢুকে সংরক্ষিত টিস্যু খেয়ে ফেলে, ফলে গাছের উপরের অংশ শুকিয়ে মারা যায়। গাছে ফল আসলে এরা ফলে আক্রমণ করে ও ফলের অভ্যন্তরীণ অংশ খেয়ে এটি নষ্ট করে, যা বাজারজাতকরণ ও ভোক্তার ব্যবহারের জন্য অনুপযুক্ত করে তোলে। বাংলাদেশে এ পোকার কারণে ফলনের ক্ষতি ৮৬ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। এ সমস্যা সমাধানের লক্ষে ভার্জিনিয়া টেক ও ইউএসএআইডি-এর আর্থিক সহায়তায় ফিড দ্যা ফিউচার মিশনের ইন্টিগ্রেটেড পেস্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্টিভিটি এটি বাস্তবায়নের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়। এই প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্য ছিলো- বাংলাদেশের কৃষকদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, যেন তারা সম্মিলিতভাবে পরিবেশসম্মতভাবে ফসলের বর্তমান এবং উদ্ভূত হুমকির নিয়ন্ত্রণ ও বিস্তার রোধ করতে পারে। এই প্রকল্প বেগুনসহ ১৩ টি ফসলের সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন করে।

তিনি বলেন, ২০২৩ সালে আইপিএম অ্যাক্টিভিটি ও ভার্জিনিয়া টেক যৌথভাবে ঢাকায় একটি কর্মশালার আয়োজন করে। সেই ধারাবাহিকতায় এই প্রকল্পে এটিজিসি, ইস্পাহানী বায়োটেক, কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) সহযোগিতায় একটি গবেষণা কার্যক্রম বাস্তবায়িত করা হয়। মাগুরা, ঝিনাইদহে এবং বাকৃবিতে অবস্থিত জমিতে এ গবেষণা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়।

সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার বিষয়ে তিনি বলেন, সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে ফেরোমন। কারণ এটি রাসায়নিক বালাইনাশকের ওপর নির্ভরশীল না থেকে ক্ষতিকর পোকামাকড়কে মোকাবিলা করে। ফেরোমন হলো এক শ্রেণির সেমিওকেমিক্যাল উপাদান। যা পোকামাকড় ও অন্যান্য প্রাণীরা তার নিজ প্রজাতির সাথে যোগাযোগ করতে ব্যবহার করে। এতে ওই পোকামাকড় বিপরীত লিঙ্গের পোকামাকড় ও তার স্বজাতির পোকাদের মধ্যে একটি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

নতুন প্রযুক্তির বিষয়ে কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক বলেন, মেটিং ডিসরাপশন হলো কীট দমন প্রযুক্তির একটি কৌশল, যেখানে কৃত্রিম উদ্দীপনার মাধ্যমে পোকাদের বিভ্রান্ত করা হয় এবং তাদের সঙ্গী সন্ধান ও প্রজনন প্রক্রিয়া ব্যাহত করা হয়। এতে তাদের বংশবিস্তার বন্ধ হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে কীটের সংখ্যা কমে আসে। বেগুনের জমিতে চারা রোপণের সাত দিনের মধ্যে প্রথমবার এই মিটিং ডিসরাপসশন জেল প্রয়োগ করা হয়। যখন ছোট থাকে তখন কাঠের মাথায় এবং যখন বড় হয়ে যায় তখন প্রতি মাসে একবার গাছের ডগায় প্রয়োগ করা হয়। যেহেতু বেগুন সারি সারি রোপণ করা হয় তাই প্রতি এক সারি অন্তর যেমন এক, এভাবে প্রতি সারিতে মেটিং ডিসরাপশন জেল প্রয়োগ করা হয়েছে। একইভাবে পরের মাসে দুই, পাঁচ এবং আট এভাবে সমান দূরত্বে মিটিং ডিসরাপশন জেল প্রয়োগ করা হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

যুক্তরাষ্ট্রের শান্তিচুক্তিতে সমর্থন জানালেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী

৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ৩ বিভাগে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস

মহাসড়কে ডাকাতির ভাইরাল ভিডিও নিয়ে যা জানা গেল

সিরিজের সাফল্যের পর যা বললেন আরিয়ান

‘সর্বকালের সেরা’ বাছাই করলেন আলভারেজ — কারা আছেন তালিকায়?

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ

অক্টোবরে লঘুচাপ-নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ের আভাস, বৃষ্টি নিয়ে নতুন তথ্য

খাগড়াছড়ির অবরোধ পুরোপুরি প্রত্যাহার

ব্যাটে-বলে ঝলমলে সাকিব, আটলান্টার দাপুটে জয়

ব্রিটিশ আমেরিকান রিসোর্স সেন্টারে চাকরির সুযোগ

১০

বালু লুটে বিপর্যয়ের মুখে হাওরাঞ্চলের কৃষি ও পরিবেশ

১১

চমক রেখে প্রীতি ম্যাচের জন্য আর্জেন্টিনার দল ঘোষণা

১২

নিয়োগ দিচ্ছে আগোরা

১৩

বাগদান সারলেন বিজয়-রাশমিকা!

১৪

কেন মৌকে দেখে পালিয়ে যান পরীমণি?

১৫

ঘুমের মধ্যে পায়ের রগে টান কেন পড়ে, কোনো রোগের লক্ষণ নয়তো

১৬

শিগগির শুরু হবে ঢাকা-পাবনা রেল চলাচল

১৭

জামাতে নামাজ আদায় করে পুরস্কার পেলেন ৮ জন

১৮

পবিত্র ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম আজ

১৯

দেশে কত দামে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে আজ

২০
X