জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাবেক উপাচার্য শরীফ এনামুল কবিরকে ইমেরিটাস অধ্যাপক পদে নিয়োগে প্রচেষ্টার প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।
গতকাল শুক্রবার (১৮ আগস্ট) সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ওই প্রতিবাদ জানায় ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ নামের বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের একটি প্ল্যাটফর্ম। বিবৃতিতে ৮১ জন প্রাক্তন শিক্ষার্থী সই করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘যে ভিসি ছাত্র মারে/সেই ভিসি চাই না, কিংবা যে ভিসি প্রতারক/সেই ভিসি চাই না—প্রভৃতি স্লোগানের মুখে উত্তাল ছাত্র আন্দোলনের সামনে নতমুখে উপাচার্য নামের যে ‘গডফাদার’ প্রায় একযুগ আগে মসনদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন, সেই শরীফ এনামুল কবিরকে ইমেরিটাস অধ্যাপক পদে সম্মানিত করার দুরভিসন্ধিমূলক পাঁয়তারা দেখে আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই হিসেবে যারপরনাই বিস্মিত, লজ্জিত, বিব্রত ও আহতবোধ করছি।’
‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ প্লাটফর্মের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সম্প্রতি একাডেমিক কাউন্সিলের এক সভায় ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরকে নিয়োগের সুপারিশ করেছে। পরবর্তী সময়ে সিন্ডিকেট সভায় অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করা হতে পারে, বিভিন্ন সূত্রে এমন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।’
এ প্রসঙ্গে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ও সামগ্রিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশকে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার কারিগর হিসেবে পরিচিত সাবেক উপাচার্য শরীফ এনামুল কবির। তাকে এমন একটি সম্মানজনক পদে নিয়োগের সুপারিশ করার অনৈতিক, হঠকারী ও লেজুড়বৃত্তিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘ইমেরিটাস অধ্যাপক শব্দদ্বয় শুনলেই একজন চিন্তাশীল ও রুচিশীল মানুষের মননে ভেসে ওঠে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক অরুণ কুমার বসাক বা অধ্যাপক নাজমা চৌধুরীর মতো ব্যক্তিদের নাম। তাদের প্রত্যেকেই নিজস্ব কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষকতায় ও গবেষণায় অসামান্য অবদান রেখেছেন। শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষক হিসেবে তারা বিনাবিতর্কে সর্বজনপূজনীয়। শুধু তাই নয়, সর্বজনের বুদ্ধিজীবী হিসেবে জাতিরাষ্ট্রের সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথে তাদের অবদানকে এ জাতি পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে যুগযুগান্তর।’
‘প্রশ্নটা দাঁড়ায়, বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা আসলে কোন স্বরূপে চিনব। আনিসুজ্জামান বা সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর পরিচয়ে না কি শরীফ এনামুল কবিরের পরিচয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা পেরোনো উন্মুক্ত জ্ঞান চর্চাকে প্রাধান্য দিব না কি রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করাকে আমরা নৈতিকতার মাপকাঠি হিসেবে ধরে নেব। কিংবা প্রশাসনেরইবা ভূমিকা কী হওয়া উচিত।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা এ ধরনের অনৈতিক সিদ্ধান্তকে কোনোভাবেই সমর্থন জানাতে পারছি না। বরং আমাদের দাবি অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরকে ইমেরিটাস অধ্যাপক নিয়োগের এ সুপারিশ অবিলম্বে বাতিল করা হোক। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক থেকে ইমেরিটাস অধ্যাপক নিয়োগ প্রক্রিয়ার সব স্তরকে দলীয়করণ মুক্ত করে একাডেমিক যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ নিষ্পত্তি করারও উদাত্ত আহ্বান জানাই।’
বিবৃতিতে সই করেন মো. ফিয়াজ শরীফ, ড. সৌমিত জয়দ্বীপ, জাফর সাদিক, তন্ময় ধর, জুয়েল থিওটোনিয়াস গমেজ, শাওন কৈরী, অনিন্দ্য সাইমুম ইমন, নাঈম উল হাসান, আতিয়া ফেরদৌসী, মোমেনা ইসলাম রিতু, আরাফাত রহমান, অলিউর সান, রাইয়ান রাজী, সাদিয়া জাফরিন, মো. রেহেল ফেরদৌস শাহ, মো. শফিকুল ইসলাম, মো. নেওয়াজুল মওলা (নেওয়াজ), উম্মে সালেকীন, সামজীর আহমেদ, ইমরান হোদেন নাদিম, সুদীপায়ন ভট্টাচার্য্য, মো. আবীর হোসেন, আফসানা আকতার, আকিল আশরাফ, মংসিং হাই মারমা, মাইদুল হাসান শাকিল, জুবায়ের টিপু, মঈন মুনতাসীর, শাকিলা শারমিন, কুলদীপ পাল, মো. দিদারুল ইসলাম, রাজিবুল ইসলাম, শায়লা সাবরীন রহমান, গ্যাব্রিয়েল পাংখোয়া, আতিউর রহমান, সিফাতি তামান্না, আশফিক রিজওয়ান, মানস চৌধুরী, কাজী রিদওয়ানুল হক, শামীমা নওশীন, কল্লোল বনিক, মো. আশিকুর রহমান, এস. এম. মোহাইমিনুল হাসান, সারজামিন হাসান, তামজিদা মোহসিনা (তুবা), নাঈমুল আলম মিশু, সৌমিত্র পার্থ, মো. মশিউর রহমান, সাদিয়া রহমান, তাহরিমা হোসেন, মো. মাহবুবুর রহমান, মো. সাদিকুর রহমান (সৈকত সাদিক), ড. দীপা বসাক, তানজিলা হক, মো. ইমরান আজাদ, সাইমুম হাসান শিমুল, আবদুল্লাহ আল নাঈম, মোহাম্মদ হোসেন খান, মোহাম্মদ আদনান খাইরুল্লাহ, নুসাইবা, ধীমান মল্লিক, মো. সাইফুল্লাহ, রুহুল আমিন সিদ্দীক (রুমেল), শিহাব উদ্দিন আহমেদ শাওন, কাজী মুসা, মোহাম্মদ আশিকুর রহমান, মাহদী মোহাম্মদ হাসিব মুকুট, রকিবুল হাসান, ইকরামুন্নেসা, সিনা হাসান, মইনুল ইসলাম দীপ, আসিফ ইকবাল, শুভ্র দাস, মালিহা মোস্তফা সূচনা, সারা ইয়াজদানী সন্ধি, মাহমুদা সুলতানা, সাদাত আহমেদ, ইফফাত আরা আইরিন, রাশেদুর রহমান রাশিব, একরামুল হিজড়া ও শারমিন আক্তার (ববি)।
মন্তব্য করুন