বশির হোসেন, খুলনা
প্রকাশ : ২১ মে ২০২৫, ০৯:১৬ পিএম
আপডেট : ২১ মে ২০২৫, ০৯:২১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

কুয়েটে এবার অন্তর্বর্তী উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি শিক্ষক সমিতির

কুয়েটে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক সমিতির নেতারা। ছবি : কালবেলা
কুয়েটে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক সমিতির নেতারা। ছবি : কালবেলা

সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাছুদের অব্যাহতির পর অচলাবস্থা কাটেনি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট)। অন্তর্বর্তী উপাচার্য অধ্যাপক মো. হজরত আলীর যোগদানের ১৮ দিনের মাথায় এবার তার বিরুদ্ধে অনাস্থা জানিয়ে পদত্যাগ চাইল শিক্ষক সমিতি।

বুধবার (২১ মে) বেলা পৌনে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. ফারুক হোসেন শিক্ষক সমিতির এমন দাবির কথা তুলে ধরেন। এর আগে একই জায়গায় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে একজন যোগ্য উপাচার্য নিয়োগ দেওয়ার জন্যও সরকারের কাছে দাবি জানান শিক্ষক সমিতির নেতারা। এসব দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় ক্যাম্পাসে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে শিক্ষক সমিতি।

সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফারুক হোসেন বলেন, ‘উপাচার্য দাপ্তরিক কাজের কথা বলে ১৯ মে ঢাকায় যান। শিক্ষকদের বলেছিলেন পরদিন ফিরে আসবেন; কিন্তু এখনো ক্যাম্পাসে ফিরে আসেননি। তিনি কুয়েটের যে গাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন তা ফেরত পাঠিয়েছেন। তিন দিন ধরে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করলেও উপাচার্য কর্ণপাত করেননি। তিনি সবার দাবির প্রতি অবজ্ঞা দেখিয়েছেন। উপাচার্য তার অনুপস্থিতিতে যাকে রুটিন ওয়ার্ক করার জন্য দায়িত্ব দিয়েছিলেন তিনি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না বলে আজ লিখিতভাবে তাকে জানিয়ে দিয়েছেন। এ অবস্থায় কুয়েট এখন অভিভাবকশূন্য।’

এর আগে দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত শিক্ষকরা উপাচার্যের কক্ষ ও প্রশাসনিক ভবন চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। শিক্ষার্থীদের এক গ্রুপ এসে তাদের দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেন। তবে তিন মাস ধরে আন্দোলন করা শিক্ষার্থীদের অন্য গ্রুপ আপাতত চুপ রয়েছে। তারা কী করবেন, তা বুঝে উঠতে পারছে না।

ক্লাস-পরীক্ষা হয় না ৩ মাস, সেশন জটের কবলে সাড়ে সাত হাজার শিক্ষার্থী : গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বহিরাগতদের হাতে কুয়েট শিক্ষার্থীরা হামলার শিকার হওয়ার পর থেকে তিন মাসের বেশি পার হলেও অচলাবস্থা কাটেনি কুয়েটে। ফলে তিন মাসের বেশি সময় ক্লাস-পরীক্ষা সবই বন্ধ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে চরম বিপাকে পড়েছেন ৭ হাজার ৫৬৫ জন শিক্ষার্থী। বিশেষ করে শিক্ষাজীবন শেষের মাত্র এক মাস দূরে ছিলেন কুয়েটের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। এ অচলাবস্থার মধ্যে এরই মধ্যে তিন মাস পিছিয়ে গেছেন তারা। কবে এই সংকট কাটবে, কেউ বলতে পারছেন না। একপ্রকার অসহায় হয়ে পড়েছে কুয়েট কর্তৃপক্ষ। সংকট নিরসনে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকেও তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই। এমন অচলাবস্থা আগে কখনো দেখা যায়নি কুয়েটে।

২২ ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. নাইম, শেখ মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, তিন মাসের অচলাবস্থার কারণে কুয়েটের সব শিক্ষার্থীই সেশনজটে পড়েছে। আমরা বুয়েট ও রুয়েট থেকে এগিয়ে ছিলাম। এখন আমরা তাদের থেকে পিছিয়ে গিয়েছি। একাডেমিক কার্যক্রম চালু হওয়ার পরও এই গ্যাপ সহজে পূরণ হবে না। ক্লাস-পরীক্ষা না হওয়ায় নিজেরাও ঠিকমতো লেখাপড়া করতে পারছি না। শিক্ষার্থীরা পাস করে বেরিয়ে পরিবারের হাল ধরতে পারছে না।

এদিকে নতুন ব্যাচের ১ হাজার ৬৫ জন শিক্ষার্থীর ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন হলেও কবে থেকে ক্লাস শুরু হবে, তা এখনো অনিশ্চিত। গত ২৪ এপ্রিল থেকে তাদের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা ছিল। গত ৪ মে থেকে একাডেমিক কার্যক্রম চালুর সিদ্ধান্ত হলেও ওই দিন থেকে ক্লাস বর্জন কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষকরা। গত ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি শিক্ষকদের লাঞ্ছিতকারী শিক্ষার্থীদের শাস্তি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসে না ফেরার সিদ্ধান্ত রয়েছে শিক্ষক সমিতির। এ ছাড়া ১৮ মে থেকে একাডেমিক কাজ থেকেও বিরত রয়েছেন তারা।

শিক্ষকদের দাবি বাস্তবায়নের উদ্যোগ হিসেবে গত ১২ মে কুয়েট কর্তৃপক্ষ ৩৭ শিক্ষার্থীকে শোকজ করে। এর প্রতিবাদে ১৩ মে থেকে আবারও আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। ১৫ মের মধ্যে তাদের শোকজ নোটিশের জবাব দেওয়ার কথা থাকলেও তারা কেউই দেননি।

ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবি নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদলের নেতাকর্মী ও বহিরাগতদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে শতাধিক আহত হন। ওই দিন কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী তৎকালীন উপাচার্যসহ কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেন। ২৫ ফেব্রুয়ারি কুয়েট কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য একাডেমিক কার্যক্রম ও হল বন্ধ ঘোষণা করে। ৪ মে থেকে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন নির্দেশনা / ৮০% নম্বর ও ৬০% উপস্থিতি না থাকলে চূড়ান্ত পরীক্ষা নয়।

ডিআরইউতে সন্ত্রাসী জাকির গংদের হামলা, আহত একাধিক সাংবাদিক

স্বাস্থ্য পরামর্শ / স্থূলতা নিয়ে উদ্বেগ নয়, প্রয়োজন প্রতিরোধ

ইউরোপা লিগ ফাইনালে ম্যানইউকে হারিয়ে টটেনহ্যামের ইতিহাস

বিচারককে ফোন করে হুমকি দিয়েছেন এক উপদেষ্টা, অভিযোগ ইশরাকের

শারজাহতে লজ্জার হারে সিরিজ হারাল বাংলাদেশ!

প্রাথমিক শিক্ষায় মানোন্নয়নে ‘বিশেষজ্ঞ পুল’ গঠন করছে সরকার

বাঙলা কলেজ ছাত্রদলের পাঁচ নেতার পদ স্থগিত

তারুণ্যের সমাবেশ সফলে সিরাজগঞ্জে যুবদলের প্রস্তুতি সভা

একের পর এক ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে সরকার : বাংলাদেশ এলডিপি

১০

সাভারে কৃষিজমি দখলের প্রতিবাদে এলাকাবাসীর মানববন্ধন

১১

সাম্য হত্যাকাণ্ড / তদন্তের অগ্রগতি জানতে ঢাবি উপাচার্যের সাথে সাদা দলের বৈঠক

১২

জাতীয় নাগরিক পার্টির শিক্ষা ও গবেষণা সেল গঠিত

১৩

বিএনপি জনগণবিরোধী এক পরিণতির পথে হাঁটছে : নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

১৪

মাশরাফীর নেতৃত্বে বৈষম্যবিরোধী ৩০ নেতাকর্মীর ছাত্রদলে যোগদান

১৫

ছেলের বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে অপপ্রচারের শিকার মা

১৬

‘অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনকে উপেক্ষা করছে, তারা ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে গেছে’

১৭

ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত : সেনাপ্রধান

১৮

ভারতীয় গরু ভেবে ২৪ গরু আটক বিজিবির, মহাসড়কে বিক্ষোভ

১৯

চবিতে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মীকে মারধর

২০
X