বিশ্ববিদ্যালয় র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে পড়েছে দেশের অন্যতম উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক শিক্ষা সাময়িকী টাইমস হায়ার এডুকেশন (টিএইচই) তাদের ওয়েবসাইটে ‘ইমপ্যাক্ট র্যাঙ্কিং ২০২৫’ প্রকাশ করে। এতে বাকৃবির অবস্থান উঠে এসেছে ১০০১ থেকে ১৫০০ এর মধ্যে।
অথচ ইমপ্যাক্ট র্যাঙ্কিং ২০২২-এ বাকৃবির অবস্থান ছিল ৬০১-৮০০ এর মধ্যে। যা পরের বছর নেমে যায় ৮০১–১০০০ এ। বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ধারাবাহিকভাবে পিছিয়ে পড়ছে দেশের এই কৃষিভিত্তিক প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়টি।
টিএইচই ওয়েবসাইটের র্যাঙ্কিং প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অগ্রগতির ভিত্তিতে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ১৩০টি দেশ ও অঞ্চলের ২,৫২৬টি বিশ্ববিদ্যালয়কে এই র্যাঙ্কিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে। বাংলাদেশের আরও সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় এবারের ইমপ্যাক্ট র্যাঙ্কিংয়ে বাকৃবির সঙ্গে একই ক্যাটাগরিতে স্থান পেয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন খাতে উন্নয়ন সূচকে অবস্থান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এসডিজির দরিদ্র বিলোপ, মানসম্মত শিক্ষা, জলজ জীবন ও লক্ষ্য পূরণে অংশীদারিত্ব এই চারটি লক্ষ্যে পূরণের সূচকে বাকৃবি র্যাংকিংএ অবস্থান করছে। মানসম্মত শিক্ষা (এসডিজি ৪) সূচকে ২০২২ সালে বাকৃবির অবস্থান ছিল ৩০১–৪০০, যা ২০২৪ সালে নেমে আসে ৪০১–৬০০ এবং ২০২৫ সালে আরও পিছিয়ে ৬০১–৮০০–এ অবস্থান করে।
তবে আশার কথা হলো, জলজ জীবন (এসডিজি -১৪) ও দারিদ্র্য বিলোপ (এসডিজি -১) সূচকে বিশ্ববিদ্যালয়টির অবস্থান তুলনামূলকভাবে কিছুটা উন্নত হয়েছে। জলজ জীবন সূচকে বাকৃবি রয়েছে ১০১–২০০ এবং দারিদ্র্য বিলোপ সূচকে রয়েছে ২০১–৩০০ অবস্থানে। লক্ষ্য পূরণে অংশীদারিত্ব (এসডিজি -১৭) সূচকে গতবারের তুলনায় অগ্রগতি দেখা গেছে; ২০২৪ সালে যেখানে অবস্থান ছিল ১০০১–১৫০০, সেখানে ২০২৫ সালে ৬০১–৮০০–এর মধ্যে উঠে এসেছে।
জানা যায়, ‘ইমপ্যাক্ট র্যাঙ্কিং ২০২৫-এ বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি ২০ টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান লাভ করেছে। এর মধ্যে ১০১-২০০ এর মধ্যে জায়গা করে নেওয়া দেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ( ডিআইইউ)।
এছাড়া, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ র্যাঙ্কিং প্রতিষ্ঠান কোয়াককোয়ারেলি সায়মন্ডস (কিউএস) বৃহস্পতিবার ২০২৬ সালের বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয় র্যাঙ্কিং প্রকাশ করেছে। এতে বাংলাদেশের ১৫টি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেলেও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল অনুপস্থিত। গত চার বছরেও কিউএস র্যাংকিংয়ে একবারও জায়গা করে নিতে পারেনি বাকৃবি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নির্ধারণে টিএইচই ও কিউএস র্যাঙ্কিং আন্তর্জাতিকভাবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বস্ত সূচক হিসেবে বিবেচিত। এ দুই র্যাঙ্কিংয়ে বারবার পিছিয়ে পড়া দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য একটি উদ্বেগের বার্তা বহন করছে বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
র্যাঙ্কিংএ পিছিয়ে পড়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেলের (আইকিউএসি) পরিচালক এবং কৃষি সম্প্রসারণ শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান সরকার বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গবেষণা করছেন ঠিকই, কিন্তু অনেকেই সেই গবেষণা সঠিকভাবে ওয়েবসাইটে আপলোড করছেন না। এতে আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিংয়ে তথ্য ঘাটতি দেখা দেয় এবং আমরা পিছিয়ে পড়ি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব গবেষণা ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে বা উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে, সেগুলো নিয়মিত ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেল কাজ করছে এবং ভবিষ্যতে বিষয়টি আরও উন্নত করার চেষ্টা করছে।
তাছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্লাব ও সহশিক্ষা কার্যক্রমগুলোর তথ্যও ওয়েবসাইটে নিয়মিতভাবে হালনাগাদ করা উচিত। এজন্য সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে এবং ওয়েবসাইট ব্যবস্থাপনাকে আরও কার্যকর করতে হবে।
মন্তব্য করুন